ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের এ কেমন বদলা

মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক:: পাকিস্তানে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির কোনো নারী স্বজনকে ‘প্রতিশোধমূলক’ ব্যবস্থা হিসেবে ধর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এমন আদেশের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা মঙ্গলবার এ কথা জানান।

এএফপি ও জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমের তোবা টেক সিং শহরে গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে। লাহোর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দূরের ঘারিবাবাদ এলাকায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের সময় ধরা পড়ে ওয়াসিম শেহজাদ নামের এক কিশোর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবেশীরা ওই কিশোরকে হত্যার দাবি জানান। এরপরই ওয়াসিম শেহজাদের পরিবার ওই কিশোরীর পরিবারের কাছে এক প্রস্তাব রাখে। সেটি হলো ওই কিশোরীর পরিবারের যে কেউ কিশোরের পরিবারের নারীকে ধর্ষণ করতে পারবেন। এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওয়াসিমের ৪০ বছর বয়সী বোনকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ‘বদলা নেয়’ ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীর ভাই। এ ঘটনায় করা এক মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা নাঈম ইউসুফ বলেন, ‘ধর্ষণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে ওয়াসিমকে হত্যার দাবি জানান প্রতিবেশীরা। এর প্রতিকার ও বদলা হিসেবে পরিবারের যেকোনো নারীকে ধর্ষণের প্রস্তাব দেয় ওয়াসিমের স্বজনেরা। এরপর তার ৪০ বছর বয়সী বোনকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ‘বদলা নেয়’ ওই কিশোরীর ভাই।’

পুলিশ কর্মকর্তার নাঈমের মতে, ওই দুই পরিবার এ বিষয়ে লিখিত ‘সমঝোতা’ করে যে তারা এ বিষয়টি পুরোপুরি ভুলে যাবে।

স্থানীয় থানার প্রধান আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের একজন পুলিশ সদস্য ওই লিখিত সমঝোতাটি পেয়েছেন। এতে স্বাক্ষরকারী উভয় পরিবারের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’ ১০ জনকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানে ‘প্রতিশোধমূলক’ ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য পন্থা প্রায়ই বেছে নেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে নারীদের কোনো মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দশকের পর দশক ধরে দেশটির নারীরা ঘৃণ্য এ বিষয়টির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে গঠিত জিরগা বা গ্রাম্য সালিসি-ব্যবস্থার মাধ্যমে এ আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু আবদুল মজিদ জানালেন, ওই এলাকার এ ধরনের কোনো সালিসি-ব্যবস্থা নেই। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই শ্রমিক শ্রেণির।

জিরগার মাধ্যমে ২০০২ সালে এ ধরনের কুখ্যাত একটি ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বে ঘৃণার ঝড় উঠেছিল। ভাইকে মিথ্যা ধর্ষণের দোষী সাব্যস্ত করে মুখতার মাইকে দল বেঁধে ধর্ষণের আদেশ দিয়েছিল একটি স্থানীয় সালিসি-ব্যবস্থা। এ ঘটনায় মুখতার মাই দেশটির আদালতে গিয়েও বিচার পাননি। ধর্ষকেরা তার সামনে দিয়েই জেল থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্ষণের এ কেমন বদলা

আপডেট টাইম ০৭:২৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১৮

মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক:: পাকিস্তানে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির কোনো নারী স্বজনকে ‘প্রতিশোধমূলক’ ব্যবস্থা হিসেবে ধর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এমন আদেশের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা মঙ্গলবার এ কথা জানান।

এএফপি ও জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমের তোবা টেক সিং শহরে গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে। লাহোর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দূরের ঘারিবাবাদ এলাকায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের সময় ধরা পড়ে ওয়াসিম শেহজাদ নামের এক কিশোর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবেশীরা ওই কিশোরকে হত্যার দাবি জানান। এরপরই ওয়াসিম শেহজাদের পরিবার ওই কিশোরীর পরিবারের কাছে এক প্রস্তাব রাখে। সেটি হলো ওই কিশোরীর পরিবারের যে কেউ কিশোরের পরিবারের নারীকে ধর্ষণ করতে পারবেন। এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওয়াসিমের ৪০ বছর বয়সী বোনকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ‘বদলা নেয়’ ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীর ভাই। এ ঘটনায় করা এক মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা নাঈম ইউসুফ বলেন, ‘ধর্ষণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে ওয়াসিমকে হত্যার দাবি জানান প্রতিবেশীরা। এর প্রতিকার ও বদলা হিসেবে পরিবারের যেকোনো নারীকে ধর্ষণের প্রস্তাব দেয় ওয়াসিমের স্বজনেরা। এরপর তার ৪০ বছর বয়সী বোনকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ‘বদলা নেয়’ ওই কিশোরীর ভাই।’

পুলিশ কর্মকর্তার নাঈমের মতে, ওই দুই পরিবার এ বিষয়ে লিখিত ‘সমঝোতা’ করে যে তারা এ বিষয়টি পুরোপুরি ভুলে যাবে।

স্থানীয় থানার প্রধান আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের একজন পুলিশ সদস্য ওই লিখিত সমঝোতাটি পেয়েছেন। এতে স্বাক্ষরকারী উভয় পরিবারের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’ ১০ জনকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে বলে জানান তিনি।

পাকিস্তানে ‘প্রতিশোধমূলক’ ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য পন্থা প্রায়ই বেছে নেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে নারীদের কোনো মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দশকের পর দশক ধরে দেশটির নারীরা ঘৃণ্য এ বিষয়টির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে গঠিত জিরগা বা গ্রাম্য সালিসি-ব্যবস্থার মাধ্যমে এ আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু আবদুল মজিদ জানালেন, ওই এলাকার এ ধরনের কোনো সালিসি-ব্যবস্থা নেই। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই শ্রমিক শ্রেণির।

জিরগার মাধ্যমে ২০০২ সালে এ ধরনের কুখ্যাত একটি ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বে ঘৃণার ঝড় উঠেছিল। ভাইকে মিথ্যা ধর্ষণের দোষী সাব্যস্ত করে মুখতার মাইকে দল বেঁধে ধর্ষণের আদেশ দিয়েছিল একটি স্থানীয় সালিসি-ব্যবস্থা। এ ঘটনায় মুখতার মাই দেশটির আদালতে গিয়েও বিচার পাননি। ধর্ষকেরা তার সামনে দিয়েই জেল থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।