ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে হাসপাতালের প্রিজন সেলে

সারাদিন ডেস্ক::বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে হাসপাতালের প্রিজন সেলে। ঈদের আগেই তাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি, ২০দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ নাগরিক সমাজ। কিন্তু মুক্তি পাননি তিনি। ফলে, এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো তার ঈদ কাটবে চারদেয়ালে বন্দী অবস্থায়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। ফলে এবারও তার ঈদ কাটবে হাসপাতালের কেবিন ব্লকে স্থাপিত প্রিজন সেলে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। ইতিমধ্যে সে মামলায় জামিন পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি তিন ডজনের বেশির মামলার আসামী। এর আগে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের আমলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গ্রেপ্তার হন। সেবার তিনি দুইটি ঈদ কাটান কারাগারে। তবে সেবার তাকে জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেসের একটি বাড়িতে বন্দি রাখা হয়েছিল। সবমিলিয়ে এটি তার জীবনে চারদেয়াল বন্দি পঞ্চম ঈদ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন দলটির নেতারা। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনাদের দলের চেয়ারপারসন কারাগারে বন্দি। আপনারা তাঁর মুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবে কী কর্মসূচি পালন করেছেন? আপনারা সরকার ও আদালতের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছেন?’ বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকার যে অনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যে সেটা তা পরিষ্কার হয়েছে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য তারা আইনী প্রক্রিয়ায় লড়াই করছেন। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এখন আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলে কী বুঝাতে চাইছেন ওবায়দুল কাদের? এদিকে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন কূটনীতিকসহ দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে তিনি কারান্তরীণ থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের দিন সকাল ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে সে পর্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক মন্ডলী ও নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। এরপর কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হাসপাতালে যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাতের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছে। পরে নেতাকর্মীরা বনানী গোরস্তানে জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর কবর জেয়ারত করতে যাবেন। এছাড়া ঈদের দিন খালেদা জিয়ার জন্য বাসা থেকে খাবার নেয়া হবে। যদিও গতকাল ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি নেতারা। এছাড়া গত ঈদে বাসার খাবার খেতে পারেননি তিনি। এদিকে ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবারে ঈদের এই খুশির দিনে আমরা বেদনার্ত। কারণ আমাদের মাঝে নেই গণতন্ত্রের প্রতীক, অধিকারহারা মানুষের আশা-ভরসার প্রেরণা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাঁকে প্রায় দেড় বছর বন্দী করে রাখা হয়েছে। এই দিনে আমরা তাঁর মুক্তি ও সুস্থতার জন্য দোয়া করবো। ঈদুল ফিতরের এই দিনে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি। মহাসচিব তার বাণীতে বলেন, এই আনন্দের দিনেও আমাদের মন ভালো নেই। অন্ধ বিদ্বেষের শিকার হয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অসুস্থ দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে দিনে দিনে তাঁর অসুস্থতাকে গুরুতর অবনতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সকলে মিলে তাঁর জন্য দোয়া করবো তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। সকল জুলুম থেকে মুক্তি পেয়ে খুব দ্রুত জনগণের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে হাসপাতালের প্রিজন সেলে

আপডেট টাইম ০৫:২৭:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০১৯

সারাদিন ডেস্ক::বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঈদ কাটবে হাসপাতালের প্রিজন সেলে। ঈদের আগেই তাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি, ২০দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ নাগরিক সমাজ। কিন্তু মুক্তি পাননি তিনি। ফলে, এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো তার ঈদ কাটবে চারদেয়ালে বন্দী অবস্থায়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। ফলে এবারও তার ঈদ কাটবে হাসপাতালের কেবিন ব্লকে স্থাপিত প্রিজন সেলে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে সাজার রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন। ইতিমধ্যে সে মামলায় জামিন পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি তিন ডজনের বেশির মামলার আসামী। এর আগে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের আমলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গ্রেপ্তার হন। সেবার তিনি দুইটি ঈদ কাটান কারাগারে। তবে সেবার তাকে জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেসের একটি বাড়িতে বন্দি রাখা হয়েছিল। সবমিলিয়ে এটি তার জীবনে চারদেয়াল বন্দি পঞ্চম ঈদ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন দলটির নেতারা। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনাদের দলের চেয়ারপারসন কারাগারে বন্দি। আপনারা তাঁর মুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবে কী কর্মসূচি পালন করেছেন? আপনারা সরকার ও আদালতের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছেন?’ বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকার যে অনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যে সেটা তা পরিষ্কার হয়েছে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য তারা আইনী প্রক্রিয়ায় লড়াই করছেন। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এখন আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলে কী বুঝাতে চাইছেন ওবায়দুল কাদের? এদিকে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদের দিন কূটনীতিকসহ দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে তিনি কারান্তরীণ থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদের দিন সকাল ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে সে পর্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক মন্ডলী ও নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। এরপর কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হাসপাতালে যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাতের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছে। পরে নেতাকর্মীরা বনানী গোরস্তানে জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর কবর জেয়ারত করতে যাবেন। এছাড়া ঈদের দিন খালেদা জিয়ার জন্য বাসা থেকে খাবার নেয়া হবে। যদিও গতকাল ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি নেতারা। এছাড়া গত ঈদে বাসার খাবার খেতে পারেননি তিনি। এদিকে ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবারে ঈদের এই খুশির দিনে আমরা বেদনার্ত। কারণ আমাদের মাঝে নেই গণতন্ত্রের প্রতীক, অধিকারহারা মানুষের আশা-ভরসার প্রেরণা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাঁকে প্রায় দেড় বছর বন্দী করে রাখা হয়েছে। এই দিনে আমরা তাঁর মুক্তি ও সুস্থতার জন্য দোয়া করবো। ঈদুল ফিতরের এই দিনে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করি। মহাসচিব তার বাণীতে বলেন, এই আনন্দের দিনেও আমাদের মন ভালো নেই। অন্ধ বিদ্বেষের শিকার হয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অসুস্থ দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে দিনে দিনে তাঁর অসুস্থতাকে গুরুতর অবনতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সকলে মিলে তাঁর জন্য দোয়া করবো তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন। সকল জুলুম থেকে মুক্তি পেয়ে খুব দ্রুত জনগণের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।