ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মার্কিন আধিপত্য দমন করতে পরে এশিয়ার অর্থনীতি

নাইজেল গ্রিন, ::  গত কয়েকটি সপ্তাহ জাপানের জন্য ছিল ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এপ্রিলের শেষ দিকে সম্রাট আকিহিতো ক্ষমতা ত্যাগ করার পর তার বড় ছেলে নারুহিতো জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হন। তিনি দেশকে নতুন যুগে নিয়ে যাবেন।

আকিহিতো বিবেচিত হতেন পথিকৃত হিসেবে। তিনি বহির্বিশ্বের কাছে জাপানকে উন্মুক্ত করার কথা বলেছিলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে সম্রাট হিসেবে ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বিশ্বায়নের গুরুত্বকে তুলে ধরে বলেছিলেন, বিশ্ব বিশ্বায়ন হয়ে যাওয়ায় আমি মনে করি, আমাদের এখন আরো বেশি করে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন, বিজ্ঞতার সাথে আমাদের নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অন্যান্য দেশের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিশ্বায়নমুখী সম্রাট হিসেবে নারুহিতো তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে মনস্থ করেছেন। এই অবস্থান আরেক প্রভাবশালী এশিয়ান নেতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের গত বছরের মন্তব্যের সাথে মিল রয়েছে। শি বলেছিলেন, অন্যদের বাদ দেয়া ঠিক কাজ নয়। চীন বহির্বিশ্বের দরজা বন্ধ করবে না, বরং খুলে দেবে। আমরা উন্নয়নের ফল নিশ্চিত করে সবাইকে নিয়ে ভোগ করতে চাই।

এসব এশিয়ান শক্তির উন্মুক্তমনা, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বেশ বিপরীত। ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বিশ্বায়নের বিরোধী। তার সংরক্ষণবাদী নীতি আরো জোরদার হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প ২০০ বিলিয়ন পণ্যের ওপর ১০ ভাগ শুল্ক বাড়িয়ে ২০ ভাগ করার হুমকি দিয়েছেন। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার আলোচনায় ওই শুল্ক ১০ ভাগে রাখার ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছিল।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুঁশিয়ারির ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির যে সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল, তা দৃশ্যত নাকচ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি ফিউচার ২ ভাগের বেশি পড়ে গেছে, এশিয়াজুড়ে স্টকের পতন ঘটেছে, চীনা প্রথম সূচকের পতন হয়েছে ৫ ভাগ।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য ও প্রভাব প্রাচ্যের দিকে সরে আসছে।

এক শ’ বছরের বেশি ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে বিরাজ করেছে, গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। অবশ্য গত দশকে চীনের অর্থনীতির প্রভাব বিপুলভাবে বেড়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আগামী ১০ বছরে এশিয়ার অর্থনীতি বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হবে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি অর্থনীতির সাতটিই হবে এশিয়ার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আগামী বছরই যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীন হতে পারে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি।

প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলছেন, জনসংখ্যার আকারের আলোকে এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে থাকবে।

সম্রাট নারুহিতো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে তার রাজত্ব শুরু করা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান পরিবর্তন আরো প্রবল হওয়ার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের দিকে আরো দ্রুতবেগে এগিয়ে যাবে এশিয়া।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন আধিপত্য দমন করতে পরে এশিয়ার অর্থনীতি

আপডেট টাইম ০১:৫৫:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০১৯

নাইজেল গ্রিন, ::  গত কয়েকটি সপ্তাহ জাপানের জন্য ছিল ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এপ্রিলের শেষ দিকে সম্রাট আকিহিতো ক্ষমতা ত্যাগ করার পর তার বড় ছেলে নারুহিতো জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হন। তিনি দেশকে নতুন যুগে নিয়ে যাবেন।

আকিহিতো বিবেচিত হতেন পথিকৃত হিসেবে। তিনি বহির্বিশ্বের কাছে জাপানকে উন্মুক্ত করার কথা বলেছিলেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে সম্রাট হিসেবে ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি বিশ্বায়নের গুরুত্বকে তুলে ধরে বলেছিলেন, বিশ্ব বিশ্বায়ন হয়ে যাওয়ায় আমি মনে করি, আমাদের এখন আরো বেশি করে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন, বিজ্ঞতার সাথে আমাদের নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অন্যান্য দেশের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিশ্বায়নমুখী সম্রাট হিসেবে নারুহিতো তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে মনস্থ করেছেন। এই অবস্থান আরেক প্রভাবশালী এশিয়ান নেতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের গত বছরের মন্তব্যের সাথে মিল রয়েছে। শি বলেছিলেন, অন্যদের বাদ দেয়া ঠিক কাজ নয়। চীন বহির্বিশ্বের দরজা বন্ধ করবে না, বরং খুলে দেবে। আমরা উন্নয়নের ফল নিশ্চিত করে সবাইকে নিয়ে ভোগ করতে চাই।

এসব এশিয়ান শক্তির উন্মুক্তমনা, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বেশ বিপরীত। ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বিশ্বায়নের বিরোধী। তার সংরক্ষণবাদী নীতি আরো জোরদার হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প ২০০ বিলিয়ন পণ্যের ওপর ১০ ভাগ শুল্ক বাড়িয়ে ২০ ভাগ করার হুমকি দিয়েছেন। অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার আলোচনায় ওই শুল্ক ১০ ভাগে রাখার ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছিল।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুঁশিয়ারির ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির যে সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল, তা দৃশ্যত নাকচ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি ফিউচার ২ ভাগের বেশি পড়ে গেছে, এশিয়াজুড়ে স্টকের পতন ঘটেছে, চীনা প্রথম সূচকের পতন হয়েছে ৫ ভাগ।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য ও প্রভাব প্রাচ্যের দিকে সরে আসছে।

এক শ’ বছরের বেশি ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে বিরাজ করেছে, গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। অবশ্য গত দশকে চীনের অর্থনীতির প্রভাব বিপুলভাবে বেড়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আগামী ১০ বছরে এশিয়ার অর্থনীতি বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হবে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি অর্থনীতির সাতটিই হবে এশিয়ার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আগামী বছরই যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে চীন হতে পারে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি।

প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলছেন, জনসংখ্যার আকারের আলোকে এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে থাকবে।

সম্রাট নারুহিতো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে তার রাজত্ব শুরু করা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান পরিবর্তন আরো প্রবল হওয়ার প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের দিকে আরো দ্রুতবেগে এগিয়ে যাবে এশিয়া।