ঢাকা ০১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক পীরগঞ্জে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ভ্যান চালকের চালকের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা ঠাকুরগাঁও জেলা আ.লীগের সভাপতি হলেন বাবলু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ জায়া’রা ভিক্ষাবৃত্তি করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে ৬ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার পীরগঞ্জে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় র‌্যালী পীরগঞ্জে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা ছাদে অবৈধ রেস্তোরাঁ, সিলিন্ডারে লিকেজ: ল্যাবএইড হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা, ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমল মজুতদারি-কালোবাজারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে সিআইডির ১২ টিম

ভারতের কঠিনতম পতন

আই এ রেহমান:: মোদির বিজেপিকে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী করার মাধ্যমে ভারতের ভোটাররা দেশের প্রতি বড় একটা আঘাত হেনেছে, যেটা কাটিয়ে উঠতে বহু সময় লেগে যাবে। নির্বাচনের ফলের মাধ্যমে কার্যত ভারতের সেক্যুলারিজমের ধারণার কবর রচিত হয়েছে এবং পার্লামেন্টের উপর কুচক্রি আর বিত্তশালীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের মূল স্তম্ভ ছিল তাদের এই প্রতিশ্রুতি যে, ভারতকে তারা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মোদিকে সমর্থন দিয়ে ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তাদের যে সেক্যুলারিজমের ধারণা, সেটার কোন গভীরতা নেই। মোদিকে তারা সংখ্যালঘুদের উপর দস্যুবৃত্তির এবং বর্বর শক্তি ও ধূর্ততা দিয়ে কাশ্মীর ইস্যু সমাধান করার লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে।

বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় আরেকটি প্রধান বিষয় ছিল জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি এবং পাকিস্তান বিদ্বেষ। বিজেপির বিজয় সকল প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। আরও যেটা হতে পারে, সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে চাপের ব্যাপারে রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা দেবে এবং আইনের শাসন ও মৌলিক স্বাধীনতা কাটছাট করা হবে।

বিজেপির বিজয় যেভাবে অভাবনীয়, তেমনি কংগ্রেসের পরাজয় ও বাম দলগুলোর ভরাডুবিও কম অবাক করার মতো নয়। সিপিআই-এম পশ্চিম বঙ্গে বহু বছর শাসন করেছে এবং ২০১৪ সালে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে হেরে গেছে। এবার তারা রাজ্যসভা নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি। কংগ্রেস ও বামপন্থী উভয়েই মোদির জাতীয় নিরাপত্তা ও ধর্মীয় প্রচারণার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

নাগরিকদের প্রকৃত উদ্বেগের বিষয় – বেকারত্ব ও কৃষকদের দুর্দশার বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক দমন করা হয়েছে এবং সেখানে ধর্মভিত্তিক প্রতিযোগিতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অবনতির দিকে গেছে ভারতের গণতন্ত্র। বিজেপি-বিরোধী জোটের চেয়েও এখানে বড় ক্ষতিটা হয়েছে ভারতের। এর অর্থ এটা নয় যে, মোদির পূর্বসুরীরা গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক ছিলেন।

এরপরও ভারতের রাজনৈতিক বয়ানের অবনতির পেছনে বড় ভূমিকাটা রেখেছেন মোদি নিজে। মোদির ২০১৪ সালের বিজয়ের পেছনে দুটো স্তম্ভ ছিল, যার একটি হলো অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবার তাকে আরও বেশি দ্বিতীয় স্তম্ভের উপর নির্ভর করতে হয়েছে, যেটা হলো হিন্দুত্ববাদ।

সেই সাথে, পাকিস্তানের হুমকির ভয় দেখিয়ে মোদি চতুরতার সাথে জনগণের কাঁচা জাতীয়তাবাদী মানসিকতাটাকে ব্যবহার করেছেন, এবং এর মাধ্যমে ভারতের নির্বাচনী বিতর্কে পাকিস্তানকে সম্ভবত প্রথমবারের মতো সফলভাবে ব্যবহার করেছেন। পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে, সেখান থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন মোদি। ওই অভিযানে যে পাকিস্তানের কিছু হয়নি, তাতে কিছু যায় আসেনি। এর মাধ্যমে মোদি তার অনুসারীদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন যে, তিনি পাকিস্তানকে আঘাত হানতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না, তা তাদের যতই পারমাণবিক শক্তি থাকুক না কেন।

মোদির বর্তমান বিজয়ের মধ্যে একটা বিপদ রয়েছে। সেটা হলো এটা তার অহংকার এবং নিজের উপর আস্থা ক্ষতিকর মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। ২০১৪ সালে তিনি বিজেপির সিনিয়র নেতাদের অন্তত মুখে হলেও প্রশংসা করেছিলেন এবং তাদের তাকে সমর্থন না দিয়ে উপায় ছিল না, যদিও ভেতরে তাদের ক্ষোভ ছিল। এবার, মোটামুটি একাই প্রচারণা চালিয়েছেন মোদি এবং সেখানে অন্যান্য বিজেপি নেতার সাথে মঞ্চ ভাগাভাগি করেননি তিনি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন অমিত শাহ, গুজরাট থেকে আসা অনুগত দলীয় প্রধান, যার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা এতটাই তীব্র যে, মোদিকেও সেখানে নিতান্ত উদারপন্থী মনে হয়। গত পাঁচ বছরে মোদি নিজেও এ ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছেন যে, নিজেকে তিনি পূজনীয় ব্যক্তি করে তুলছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে প্রেসিডেন্টের অফিসে পরিণত করছেন। সে অবস্থায় এটা কল্পনা করা কঠিন যে মোদি-অমিত জুটি ভারতের ফাঁপা পার্লামেন্টারি সিস্টেমের কতটা ক্ষতি করতে পারে।

মোদি পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রতি যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। জমজ দুই দেশের যে ঐতিহ্যের মধ্যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, এগুলোর শিকড় অনেক গভীরে। পাকিস্তান ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের দিকে যতটা ঝুঁকেছে, ভারতে বিচার বিভাগ এখনও হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদকে সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি, কিন্তু পাকিস্তানের আধা-ধর্মীয় জঙ্গিরা যে মোদির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের কারণে নিজেদের শক্তি যোগাবে, তাতে খুব সামান্যই সন্দেহ আছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের সাথে বন্ধুত্বের যে আশাবাদ জানিয়েছেন, সেটা ভারতের নির্বাচনে আদৌ কোন প্রভাব ফেলে থাকলেও বিজেপির এতে খুব বেশি ভোটের হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী অনুমান করেছিলেন যে বিজেপির সাথে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা অন্য কারো নেতৃত্বাধীন ভারতের চেয়ে বেশি। তার এই ধারণাটা সঠিক। কিন্তু যেই পরিস্থিতিতে তিনি চিন্তাটা করেছিলেন, সেটা যেন বদলে গেছে। এখন কোন বিরোধী দল পাকিস্তানের সাথে দর কষাকষির ক্ষেত্রে নাক গলাবে – এ রকম আশঙ্কা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

এ কারণে আশঙ্কা হলো মোদি সরকার সম্ভবত সম্পূর্ণ একতরফা সমঝোতার উপর জোর দেবে, কিন্তু ইসলামাবাদকে তার ধৈর্য হারালে চলবে না। তাকে সমস্ত বিবাদ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জারি রাখতে হবে। মোদিকে যদি এই বাস্তবতাটা বোঝানো যায় যে পাকিস্তানের সাথে বিবাদ মেটাতে পারলে ভারত আরও শক্তিশালী হবে, এবং পাকিস্তান এক সময় দেশের ভেতরকার ভারত-বিদ্বেষীদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে, তাহলে ইমরান খানের সদিচ্ছার প্রতিজবাব হয়তো তিনি দিতে পারেন।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ভারতের কঠিনতম পতন

আপডেট টাইম ০২:১০:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০১৯

আই এ রেহমান:: মোদির বিজেপিকে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী করার মাধ্যমে ভারতের ভোটাররা দেশের প্রতি বড় একটা আঘাত হেনেছে, যেটা কাটিয়ে উঠতে বহু সময় লেগে যাবে। নির্বাচনের ফলের মাধ্যমে কার্যত ভারতের সেক্যুলারিজমের ধারণার কবর রচিত হয়েছে এবং পার্লামেন্টের উপর কুচক্রি আর বিত্তশালীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের মূল স্তম্ভ ছিল তাদের এই প্রতিশ্রুতি যে, ভারতকে তারা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মোদিকে সমর্থন দিয়ে ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তাদের যে সেক্যুলারিজমের ধারণা, সেটার কোন গভীরতা নেই। মোদিকে তারা সংখ্যালঘুদের উপর দস্যুবৃত্তির এবং বর্বর শক্তি ও ধূর্ততা দিয়ে কাশ্মীর ইস্যু সমাধান করার লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে।

বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় আরেকটি প্রধান বিষয় ছিল জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি এবং পাকিস্তান বিদ্বেষ। বিজেপির বিজয় সকল প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। আরও যেটা হতে পারে, সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে চাপের ব্যাপারে রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা দেবে এবং আইনের শাসন ও মৌলিক স্বাধীনতা কাটছাট করা হবে।

বিজেপির বিজয় যেভাবে অভাবনীয়, তেমনি কংগ্রেসের পরাজয় ও বাম দলগুলোর ভরাডুবিও কম অবাক করার মতো নয়। সিপিআই-এম পশ্চিম বঙ্গে বহু বছর শাসন করেছে এবং ২০১৪ সালে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে হেরে গেছে। এবার তারা রাজ্যসভা নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি। কংগ্রেস ও বামপন্থী উভয়েই মোদির জাতীয় নিরাপত্তা ও ধর্মীয় প্রচারণার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

নাগরিকদের প্রকৃত উদ্বেগের বিষয় – বেকারত্ব ও কৃষকদের দুর্দশার বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক দমন করা হয়েছে এবং সেখানে ধর্মভিত্তিক প্রতিযোগিতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অবনতির দিকে গেছে ভারতের গণতন্ত্র। বিজেপি-বিরোধী জোটের চেয়েও এখানে বড় ক্ষতিটা হয়েছে ভারতের। এর অর্থ এটা নয় যে, মোদির পূর্বসুরীরা গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক ছিলেন।

এরপরও ভারতের রাজনৈতিক বয়ানের অবনতির পেছনে বড় ভূমিকাটা রেখেছেন মোদি নিজে। মোদির ২০১৪ সালের বিজয়ের পেছনে দুটো স্তম্ভ ছিল, যার একটি হলো অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবার তাকে আরও বেশি দ্বিতীয় স্তম্ভের উপর নির্ভর করতে হয়েছে, যেটা হলো হিন্দুত্ববাদ।

সেই সাথে, পাকিস্তানের হুমকির ভয় দেখিয়ে মোদি চতুরতার সাথে জনগণের কাঁচা জাতীয়তাবাদী মানসিকতাটাকে ব্যবহার করেছেন, এবং এর মাধ্যমে ভারতের নির্বাচনী বিতর্কে পাকিস্তানকে সম্ভবত প্রথমবারের মতো সফলভাবে ব্যবহার করেছেন। পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে, সেখান থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন মোদি। ওই অভিযানে যে পাকিস্তানের কিছু হয়নি, তাতে কিছু যায় আসেনি। এর মাধ্যমে মোদি তার অনুসারীদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন যে, তিনি পাকিস্তানকে আঘাত হানতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না, তা তাদের যতই পারমাণবিক শক্তি থাকুক না কেন।

মোদির বর্তমান বিজয়ের মধ্যে একটা বিপদ রয়েছে। সেটা হলো এটা তার অহংকার এবং নিজের উপর আস্থা ক্ষতিকর মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। ২০১৪ সালে তিনি বিজেপির সিনিয়র নেতাদের অন্তত মুখে হলেও প্রশংসা করেছিলেন এবং তাদের তাকে সমর্থন না দিয়ে উপায় ছিল না, যদিও ভেতরে তাদের ক্ষোভ ছিল। এবার, মোটামুটি একাই প্রচারণা চালিয়েছেন মোদি এবং সেখানে অন্যান্য বিজেপি নেতার সাথে মঞ্চ ভাগাভাগি করেননি তিনি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন অমিত শাহ, গুজরাট থেকে আসা অনুগত দলীয় প্রধান, যার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা এতটাই তীব্র যে, মোদিকেও সেখানে নিতান্ত উদারপন্থী মনে হয়। গত পাঁচ বছরে মোদি নিজেও এ ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছেন যে, নিজেকে তিনি পূজনীয় ব্যক্তি করে তুলছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে প্রেসিডেন্টের অফিসে পরিণত করছেন। সে অবস্থায় এটা কল্পনা করা কঠিন যে মোদি-অমিত জুটি ভারতের ফাঁপা পার্লামেন্টারি সিস্টেমের কতটা ক্ষতি করতে পারে।

মোদি পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রতি যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। জমজ দুই দেশের যে ঐতিহ্যের মধ্যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, এগুলোর শিকড় অনেক গভীরে। পাকিস্তান ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের দিকে যতটা ঝুঁকেছে, ভারতে বিচার বিভাগ এখনও হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদকে সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি, কিন্তু পাকিস্তানের আধা-ধর্মীয় জঙ্গিরা যে মোদির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের কারণে নিজেদের শক্তি যোগাবে, তাতে খুব সামান্যই সন্দেহ আছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের সাথে বন্ধুত্বের যে আশাবাদ জানিয়েছেন, সেটা ভারতের নির্বাচনে আদৌ কোন প্রভাব ফেলে থাকলেও বিজেপির এতে খুব বেশি ভোটের হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী অনুমান করেছিলেন যে বিজেপির সাথে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা অন্য কারো নেতৃত্বাধীন ভারতের চেয়ে বেশি। তার এই ধারণাটা সঠিক। কিন্তু যেই পরিস্থিতিতে তিনি চিন্তাটা করেছিলেন, সেটা যেন বদলে গেছে। এখন কোন বিরোধী দল পাকিস্তানের সাথে দর কষাকষির ক্ষেত্রে নাক গলাবে – এ রকম আশঙ্কা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

এ কারণে আশঙ্কা হলো মোদি সরকার সম্ভবত সম্পূর্ণ একতরফা সমঝোতার উপর জোর দেবে, কিন্তু ইসলামাবাদকে তার ধৈর্য হারালে চলবে না। তাকে সমস্ত বিবাদ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জারি রাখতে হবে। মোদিকে যদি এই বাস্তবতাটা বোঝানো যায় যে পাকিস্তানের সাথে বিবাদ মেটাতে পারলে ভারত আরও শক্তিশালী হবে, এবং পাকিস্তান এক সময় দেশের ভেতরকার ভারত-বিদ্বেষীদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে, তাহলে ইমরান খানের সদিচ্ছার প্রতিজবাব হয়তো তিনি দিতে পারেন।