ঢাকা ১০:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিরা এতো বছর উপহারটা দিতেন, এখন দিবেন ডিসিরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:: আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ২০০ বা ২৫০ সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক (বিভিন্ন ধরনের) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বরাদ্দের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শামীম মুসফিক আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে এবার এই শাড়ি, থ্রি-পিস ও বাচ্চাদের পোশাক এমপিরা নিজেরা বিতৃরণ করতে পারবেন না। এগুলো বিতরণ করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। গত ১৩ মে এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সরকারদলীয় একাধিক এমপি এ ধরনের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই এমপি-মন্ত্রীদের কর্তৃত্ব খর্ব করা হচ্ছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জায়গা হচ্ছে না কোথাও। এর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই সারা দেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম দেখভাল ও সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করতে ৬৪ সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সচিবগণ প্রয়োজনে নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কর্মহীন মানুষের যে তালিকা তৈরি করছেন সেগুলোও যাচাই-বাছাই করছেন আমলারা। এর ফলে আরেক দফা অপমানিত হলেন জনপ্রতিনিধিরা। যারা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে জেলা প্রশাসকদের চেয়ে কয়েক ধাপ উপরে।

প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শামীম মুসফিক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণের নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁ ঢাকা থেকে ২০০/২৫০ পিস সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক (বিভিন্ন ধরনের) বরাদ্দ প্রদান করা হলো। ‘বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী জেলা প্রশাসক,… (জেলার নাম) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁও ঢাকা থেকে সংগ্রহপূর্বক এমপিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ ও হিসাব সংরক্ষণ করবেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার, তেজগাঁও ঢাকা হতে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বিলম্বের আশঙ্কা থাকলে এমপিরা নিজ দায়িত্বে ত্রাণসামগ্রী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁও ঢাকা হতে তা সংগ্রহপূর্বক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমপিরা নিজে সংগ্রহ করলেও বিতরণ করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। এ চিঠি হাতে পাওয়ার পর একাধিক এমপি জানিয়েছেন, আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ত্রাণ সামগ্রী শাড়ি, থ্রি-পিস বিতরণের জন্য আমাদের হাতে হাতেই তুলে দেওয়া হতো। কিন্তু এবার জেলা প্রশাসকের হাতে দেওয়া হচ্ছে। আবার জেলা প্রশাসকগণ যথাসময়ে তুলতে না পারলে সেগুলো আমাদের নিজ দায়িত্বে তুলে প্রশাসকদের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।

তারা বলছেন, এমপিরা ২০০/২৫০ পিস সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক আত্মসাৎ করবেন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে?

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

এমপিরা এতো বছর উপহারটা দিতেন, এখন দিবেন ডিসিরা!

আপডেট টাইম ০১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মে ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:: আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার থেকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ২০০ বা ২৫০ সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক (বিভিন্ন ধরনের) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বরাদ্দের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শামীম মুসফিক আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে এবার এই শাড়ি, থ্রি-পিস ও বাচ্চাদের পোশাক এমপিরা নিজেরা বিতৃরণ করতে পারবেন না। এগুলো বিতরণ করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। গত ১৩ মে এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সরকারদলীয় একাধিক এমপি এ ধরনের চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই এমপি-মন্ত্রীদের কর্তৃত্ব খর্ব করা হচ্ছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জায়গা হচ্ছে না কোথাও। এর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই সারা দেশে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম দেখভাল ও সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় করতে ৬৪ সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সচিবগণ প্রয়োজনে নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কর্মহীন মানুষের যে তালিকা তৈরি করছেন সেগুলোও যাচাই-বাছাই করছেন আমলারা। এর ফলে আরেক দফা অপমানিত হলেন জনপ্রতিনিধিরা। যারা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে জেলা প্রশাসকদের চেয়ে কয়েক ধাপ উপরে।

প্রধানমন্ত্রীর এসাইনমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শামীম মুসফিক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণের নিমিত্তে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁ ঢাকা থেকে ২০০/২৫০ পিস সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক (বিভিন্ন ধরনের) বরাদ্দ প্রদান করা হলো। ‘বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী জেলা প্রশাসক,… (জেলার নাম) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁও ঢাকা থেকে সংগ্রহপূর্বক এমপিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার অসহায়, গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ ও হিসাব সংরক্ষণ করবেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার, তেজগাঁও ঢাকা হতে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বিলম্বের আশঙ্কা থাকলে এমপিরা নিজ দায়িত্বে ত্রাণসামগ্রী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার তেজগাঁও ঢাকা হতে তা সংগ্রহপূর্বক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমপিরা নিজে সংগ্রহ করলেও বিতরণ করার ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। এ চিঠি হাতে পাওয়ার পর একাধিক এমপি জানিয়েছেন, আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ত্রাণ সামগ্রী শাড়ি, থ্রি-পিস বিতরণের জন্য আমাদের হাতে হাতেই তুলে দেওয়া হতো। কিন্তু এবার জেলা প্রশাসকের হাতে দেওয়া হচ্ছে। আবার জেলা প্রশাসকগণ যথাসময়ে তুলতে না পারলে সেগুলো আমাদের নিজ দায়িত্বে তুলে প্রশাসকদের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।

তারা বলছেন, এমপিরা ২০০/২৫০ পিস সিনথেটিক শাড়ি, ৬০ পিস থ্রি-পিস ও ৫৫ পিস বাচ্চাদের তৈরি পোশাক আত্মসাৎ করবেন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে?