ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা ‘করোনা এক্সপ্রেসে’ উঠে বসেছি -মতিউর রহমান চৌধুরী

মতিউর রহমান চৌধুরী:: সংক্রমণ আকাশছোঁয়া। প্রতি দশে চার জন আক্রান্ত হচ্ছেন। কোনো আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না। মৃত্যুর কাফেলা প্রতিনিয়ত লম্বা হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুভয়। হাসপাতালে ঠাঁই নেই। চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায়, এম্বুলেন্সে মানুষ মারা যাচ্ছে। গ্রামেও করোনার ঢেউ পৌঁছে গেছে আমরা বলছি মানিয়ে চলতে হবে।করোনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বেও মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের এখানে না হয় একটু বেশিই মারা গেল। অযথাই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞরা হইচই করেন। ওদের কথা কি শুনলে চলে! ওরাতো দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে বলেন। আচ্ছা বলুনতো মানুষ বাঁচাবো কী করে? ওদের পেটে দানা-পানি না পড়লে ওরাতো ক্ষুব্ধ হবে। আর তা হবে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর।

বিশেষজ্ঞরা যাই বলুক ওদের কথায় কান দেয়ার দরকার নেই। আমরা চলবো আমাদের মতো করে। পুঁথিগত বিদ্যার জোরে যারা দক্ষ তাদের কথা শুনলেই চলবে। ওদের কথা শুনলে দু’কূলই রক্ষা হবে। বিদেশি মিডিয়া কি বলল না বলল তাতে কী যায় আসে! ওরা শুধু আতঙ্ক ছড়ায়। আমাদের দেয়া তথ্য আমলে নেয় না। মাঝে-মধ্যে সত্য কথা বলে ফেলে। তদন্ত কমিটি গঠন করে খোঁজ নেয় কীভাবে এই তথ্য বিদেশি মিডিয়ায় গেল।

স্থানীয় মিডিয়াতো অস্তিত্ব সংকটে। ওরা কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ইশারা-ইঙ্গিতেও কেউ লেখে না বা বলে না- আসলে কত লোকের প্রাণহানি হচ্ছে। নেট দুনিয়ায় কেউ কেউ সত্য-মিথ্যা বলার চেষ্টা করে। এখন সেটাও পারে না। কিছু লিখলেই লাল ঘরে। একসময় বিদেশি কূটনীতিকরা বিব্রত করতো। তারাও রহস্যজনক কারণে চুপ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই আবার নিজ দেশে চলে গেছে। বিরোধীরা চিৎকার করবেই। ওদের কাজই শুধু সমালোচনা করা। ওদের কথা কে শোনে। ওরা নিজেরাই ম্যানেজ হয়ে আছে।

ওদের একমাত্র কাজ হচ্ছে বিবৃতি আর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করা। ওদের দৌড় সম্পর্কে জনগণ বুঝে গেছে। তাই ওদের নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। দুশ্চিন্তা থাকলে আছে অর্থনীতি নিয়ে। আপাতত না হয় নোট ছাপিয়ে সামাল দেবো। বেশি দিনতো আর পারা যাবে না এভাবে। তাই দাতাদের দ্বারস্থ হবো। শেষ কথা কি? মানিয়ে চলতে হবে। করোনাকে জয় করতে হবে। ছত্রে ছত্রে অপরিণামদর্শিতার পরেও বলবো ঠিক আছি।

পণ্ডিত জর্জ বার্নার্ড শ’র একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে গেল। বার্নার্ড শ’ একবার বলেছিলেন, রাজনীতিকরা কিছু না জেনেও মনে করেন যে, তিনি অনেক কিছুই জানেন। খনার বচনের কথা এখানে উল্লেখ না-ই করলাম। তাই চিকিৎসকদের সাবধানবাণী, বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীতে কান দেয়ার দরকার নেই। এতো দেখছি নতুন বিয়ে করা বউ এর মতো! প্রথমে মনে হবে নিয়ন্ত্রণে আসবে। পরে মনে হবে সেটা সম্ভব নয়। তখন মানিয়ে চলতে শিখতে হবে। করোনা এক্সপ্রেসে উঠে আমরা কি তাই বলছি?

যদি তাই হয় তাহলে বলবো ভুল ট্রেনে আমরা চড়েছি। এই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছার আগেই থেমে যাবে। মাঝপথেই দুর্ঘটনা কবলিত হতে পারে। অগণিত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। আর চালক যদি করোনা আক্রান্ত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। যাইহোক সময় শেষ হয়ে যায়নি। ট্রেনটাকে এখনো থামানো যেতে পারে। দক্ষ চালকের হাতে ট্রেনটির চাবি দিলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। তখন যদি দুর্ঘটনা ঘটেও যায় প্রাণহানি কম হবে। (সৌজন্যে মানবজমিন)

লেখক: দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

আমরা ‘করোনা এক্সপ্রেসে’ উঠে বসেছি -মতিউর রহমান চৌধুরী

আপডেট টাইম ০৩:২৩:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০

মতিউর রহমান চৌধুরী:: সংক্রমণ আকাশছোঁয়া। প্রতি দশে চার জন আক্রান্ত হচ্ছেন। কোনো আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না। মৃত্যুর কাফেলা প্রতিনিয়ত লম্বা হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুভয়। হাসপাতালে ঠাঁই নেই। চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায়, এম্বুলেন্সে মানুষ মারা যাচ্ছে। গ্রামেও করোনার ঢেউ পৌঁছে গেছে আমরা বলছি মানিয়ে চলতে হবে।করোনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বেও মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের এখানে না হয় একটু বেশিই মারা গেল। অযথাই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞরা হইচই করেন। ওদের কথা কি শুনলে চলে! ওরাতো দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে বলেন। আচ্ছা বলুনতো মানুষ বাঁচাবো কী করে? ওদের পেটে দানা-পানি না পড়লে ওরাতো ক্ষুব্ধ হবে। আর তা হবে করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর।

বিশেষজ্ঞরা যাই বলুক ওদের কথায় কান দেয়ার দরকার নেই। আমরা চলবো আমাদের মতো করে। পুঁথিগত বিদ্যার জোরে যারা দক্ষ তাদের কথা শুনলেই চলবে। ওদের কথা শুনলে দু’কূলই রক্ষা হবে। বিদেশি মিডিয়া কি বলল না বলল তাতে কী যায় আসে! ওরা শুধু আতঙ্ক ছড়ায়। আমাদের দেয়া তথ্য আমলে নেয় না। মাঝে-মধ্যে সত্য কথা বলে ফেলে। তদন্ত কমিটি গঠন করে খোঁজ নেয় কীভাবে এই তথ্য বিদেশি মিডিয়ায় গেল।

স্থানীয় মিডিয়াতো অস্তিত্ব সংকটে। ওরা কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ইশারা-ইঙ্গিতেও কেউ লেখে না বা বলে না- আসলে কত লোকের প্রাণহানি হচ্ছে। নেট দুনিয়ায় কেউ কেউ সত্য-মিথ্যা বলার চেষ্টা করে। এখন সেটাও পারে না। কিছু লিখলেই লাল ঘরে। একসময় বিদেশি কূটনীতিকরা বিব্রত করতো। তারাও রহস্যজনক কারণে চুপ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই আবার নিজ দেশে চলে গেছে। বিরোধীরা চিৎকার করবেই। ওদের কাজই শুধু সমালোচনা করা। ওদের কথা কে শোনে। ওরা নিজেরাই ম্যানেজ হয়ে আছে।

ওদের একমাত্র কাজ হচ্ছে বিবৃতি আর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করা। ওদের দৌড় সম্পর্কে জনগণ বুঝে গেছে। তাই ওদের নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। দুশ্চিন্তা থাকলে আছে অর্থনীতি নিয়ে। আপাতত না হয় নোট ছাপিয়ে সামাল দেবো। বেশি দিনতো আর পারা যাবে না এভাবে। তাই দাতাদের দ্বারস্থ হবো। শেষ কথা কি? মানিয়ে চলতে হবে। করোনাকে জয় করতে হবে। ছত্রে ছত্রে অপরিণামদর্শিতার পরেও বলবো ঠিক আছি।

পণ্ডিত জর্জ বার্নার্ড শ’র একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে গেল। বার্নার্ড শ’ একবার বলেছিলেন, রাজনীতিকরা কিছু না জেনেও মনে করেন যে, তিনি অনেক কিছুই জানেন। খনার বচনের কথা এখানে উল্লেখ না-ই করলাম। তাই চিকিৎসকদের সাবধানবাণী, বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীতে কান দেয়ার দরকার নেই। এতো দেখছি নতুন বিয়ে করা বউ এর মতো! প্রথমে মনে হবে নিয়ন্ত্রণে আসবে। পরে মনে হবে সেটা সম্ভব নয়। তখন মানিয়ে চলতে শিখতে হবে। করোনা এক্সপ্রেসে উঠে আমরা কি তাই বলছি?

যদি তাই হয় তাহলে বলবো ভুল ট্রেনে আমরা চড়েছি। এই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছার আগেই থেমে যাবে। মাঝপথেই দুর্ঘটনা কবলিত হতে পারে। অগণিত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। আর চালক যদি করোনা আক্রান্ত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। যাইহোক সময় শেষ হয়ে যায়নি। ট্রেনটাকে এখনো থামানো যেতে পারে। দক্ষ চালকের হাতে ট্রেনটির চাবি দিলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। তখন যদি দুর্ঘটনা ঘটেও যায় প্রাণহানি কম হবে। (সৌজন্যে মানবজমিন)

লেখক: দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক