ঢাকা ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক পীরগঞ্জে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ভ্যান চালকের চালকের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা ঠাকুরগাঁও জেলা আ.লীগের সভাপতি হলেন বাবলু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ জায়া’রা ভিক্ষাবৃত্তি করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে ৬ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার পীরগঞ্জে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় র‌্যালী পীরগঞ্জে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা ছাদে অবৈধ রেস্তোরাঁ, সিলিন্ডারে লিকেজ: ল্যাবএইড হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা, ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমল মজুতদারি-কালোবাজারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে সিআইডির ১২ টিম

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ, আসামিদের হয়ে লড়ছেন না আইনজীবীরা

 সিলেট:: সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে যাচ্ছেন না। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। আইনজীবীরা বলছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য তারা রাষ্ট্রপক্ষকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। জানা গেছে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আসামিদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে মানবিক দিক থেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে আসামিদের পক্ষে লড়ছেন না আইনজীবীর.

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত জানান, আদালতে জামিন শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী অংশ নেননি। এজলাসে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় আদালত আসািদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নয় বলে জানায়। এসময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিলেটের আইনজীবীরা নিজের ইচ্ছাতেই আসামিদের পক্ষে লড়ছেন না।’

আসামিদের পক্ষে আদালতে কেউ না দাঁড়ানোর বিষয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে না নিলেও প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মামলার কোনও বিবাদির পক্ষে লড়বো না। তবে বাদীপক্ষ যদি কোনও আইনি সহায়তা আমাদের কাছে চান, তবে আমরা মানবিকতার দায়ে তা দিতে প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আদালত একটা সময় আসামিদের পক্ষেও আইনজীবী নির্ধারণ করে। এটিকে আইনি ভাষায় স্ট্যাট ডিফেন্স বলে। তবে এই মামলার ক্ষেত্রে এমন পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। মোটকথা, এই অভিযুক্তদের পক্ষে সিলেটের কোনও আইনজীবীই লড়তে রাজি নন।’

সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষে সিলেট জেলা বারের আইনজীবীরা লড়তে রাজি নন। নিজ ইচ্ছায় অনেকেই লড়ছেন না। আমরা রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কাজ করবো, তবুও আসামিদের পক্ষে লড়বো না। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

জানা যায়, সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর ও অর্জুন লস্করকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন শাহপরাণ থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। শুনানিকালে বাদী পক্ষের হয়ে প্রায় ৭-৮ জন আইনজীবী পুলিশের আবেদনের সঙ্গে একমত হয়ে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যুক্তি দেখান। এসময় আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আদালতের বিচারক সাইফুর ও অর্জুনের বক্তব্য জানতে চান। তারা আদালতকে বলেছে, ‘ছাত্রাবাসের ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমরা কোনও অপরাধ করিনি। এই ঘটনা ঘটিয়েছে রাজন, তারেক ও আইনুদ্দিন।’ তাদের বক্তব্য শোনার পরপরই সিলেট মেট্রোপলিটন ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধর্ষণ মামলার ৩নং এজহার নামীয় মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে একই আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালতের বিচারক তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসময় তাদের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় বিচারক আসামিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা আদালতকে জানায়, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় তারা কেউ জড়িত নয়। এরপর আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে জোর করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর স্বামীকে বেঁধে মারধর করে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ওইদিন (শুক্রবার) রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো— এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ, আসামিদের হয়ে লড়ছেন না আইনজীবীরা

আপডেট টাইম ০৪:২০:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
 সিলেট:: সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে যাচ্ছেন না। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। আইনজীবীরা বলছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য তারা রাষ্ট্রপক্ষকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। জানা গেছে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আসামিদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তবে মানবিক দিক থেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে আসামিদের পক্ষে লড়ছেন না আইনজীবীর.

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত জানান, আদালতে জামিন শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী অংশ নেননি। এজলাসে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী না থাকায় আদালত আসািদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নয় বলে জানায়। এসময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে।

তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিলেটের আইনজীবীরা নিজের ইচ্ছাতেই আসামিদের পক্ষে লড়ছেন না।’

আসামিদের পক্ষে আদালতে কেউ না দাঁড়ানোর বিষয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে না নিলেও প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মামলার কোনও বিবাদির পক্ষে লড়বো না। তবে বাদীপক্ষ যদি কোনও আইনি সহায়তা আমাদের কাছে চান, তবে আমরা মানবিকতার দায়ে তা দিতে প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আদালত একটা সময় আসামিদের পক্ষেও আইনজীবী নির্ধারণ করে। এটিকে আইনি ভাষায় স্ট্যাট ডিফেন্স বলে। তবে এই মামলার ক্ষেত্রে এমন পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। মোটকথা, এই অভিযুক্তদের পক্ষে সিলেটের কোনও আইনজীবীই লড়তে রাজি নন।’

সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার আসামিদের পক্ষে সিলেট জেলা বারের আইনজীবীরা লড়তে রাজি নন। নিজ ইচ্ছায় অনেকেই লড়ছেন না। আমরা রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কাজ করবো, তবুও আসামিদের পক্ষে লড়বো না। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

জানা যায়, সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর ও অর্জুন লস্করকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন শাহপরাণ থানার ওসি তদন্ত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। শুনানিকালে বাদী পক্ষের হয়ে প্রায় ৭-৮ জন আইনজীবী পুলিশের আবেদনের সঙ্গে একমত হয়ে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যুক্তি দেখান। এসময় আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় আদালতের বিচারক সাইফুর ও অর্জুনের বক্তব্য জানতে চান। তারা আদালতকে বলেছে, ‘ছাত্রাবাসের ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমরা কোনও অপরাধ করিনি। এই ঘটনা ঘটিয়েছে রাজন, তারেক ও আইনুদ্দিন।’ তাদের বক্তব্য শোনার পরপরই সিলেট মেট্রোপলিটন ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে, মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধর্ষণ মামলার ৩নং এজহার নামীয় মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে একই আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালতের বিচারক তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসময় তাদের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকায় বিচারক আসামিদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা আদালতকে জানায়, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় তারা কেউ জড়িত নয়। এরপর আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে ঘুরতে আসা এক দম্পতিকে আটক করে জোর করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর স্বামীকে বেঁধে মারধর করে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী ওইদিন (শুক্রবার) রাতে বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ছয় জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো— এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।