ঢাকা ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ সরিয়ে নিলো আসামীরা

গোপালগঞ্জ:: গোপালগঞ্জে সমিতির মাধ্যমে রোপিত সামাজিক বনায়নের শতাধিক বনজ গাছ কেটে বিক্রি ও বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে বনায়ন সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় গাছ চুরির মামলা হয়। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পরে পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ গভীর রাতে সরিয়ে নিয়েছেন সমিতির সভাপতি হীরেন্ময় বালা। কেটে নেয়া ওই গাছের আনুমানিক মূল্য ৩ লক্ষ টাকা। এমনটা দাবী করছেন সমিতির অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয়রা।
জানাগেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের সানপুখরিয়া গ্রামের রানা পাশা এলাকার সড়কের পাশের সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গায় রানাপাশা বন উন্নয়ন সমিতি নামের একটি সংগঠন সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলেন।
২০১২ সালে সেখানে রোপন করা হয় ৫ হাজার বনজ গাছ। চুক্তি মোতাবেক গাছ বিক্রয়ের সময় ওই সমিতি অর্থাৎ উপকারভোগীরা ৫৫ ভাগ টাকা পাবেন। কিন্তু গত ২৪ জুন ওই বনায়ন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১শত প্রাপ্ত বয়স্ক বনজ গাছ কেটে নিয়ে যায় ওই সমিতির সভাপতি হীরেন্ময় বালা, সদস্য প্রহলাদ চৌধুরী ও খোকন মন্ডল। পরে কাটা গাছ ওই স্থান থেকে কৌশলে সরিয়ে নিয়ে উপজেলার বাইরের জলাশয়/পুকুরে লুকিয়ে রাখেন তারা। স্থানীয়দের এমন অভিযোগের পর সরকারি জায়গা থেকে ৪৬ গাছ কেটে চুরির অভিযোগে সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান ২৯ জুলাই ওই তিনজনকে আসামী করে সদর থানায় অভিযোগ করেন। গত ৬ আগষ্ট তা এফআইর ভুক্ত হয়। এ ব্যাপারে সমিতির সদস্য ও স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেন।
এদিকে বন বিভাগের করা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন হিরেন্ময়।২৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলার বরণপাল্টা গ্রামের কান্দন রায়ের পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ ট্রলারযোগে সরিয়ে নিয়ে যান হিরেন্ময়।
পুকুর মালিক কান্দন বলেন, আমার পুকুরে গাছ লুকিয়ে রাখার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। নৌকা চালিয়ে আসার সময় পুকুরের তলদেশে গাছ আছে এমন মনে হলো। পরে জলে নেমে অনুভব করতে পারলাম সেখানে অনেক গাছ আছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে একটি ট্রলার ও বেশ কয়েজন শ্রমিক নিয়ে পুকুর থেকে গাছ তুলে নিতে আসে হিরেন্ময়। এবং প্রায় দুই ঘন্ট ধরে ওই গাছ পানির নিচ থেকে তুলে ট্রলারে করে নিয়ে যান। আমিসহ আমার বাড়ির বেশ কয়েকজন গাছ নিতে বাধা দিলেও তিনি শোনেন নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, গাছ চুরির মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি।
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জানান জাহঙ্গীর আলম বলেন, গাছ কেটে নেয়ার ব্যাপারে আমাকে সমিতির সভাপতি কিছুই জানায়নি। এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি হীরেন্ময়সহ ৩ জনকে আসামী করে আমি মামলা করি। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযুক্ত হিরেন্ময় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমপান’ ঝড়ের সময় আমাদের সামাজিক বনায়নের গাছ ভেঙে যায়। এরপর আমরা রেজুলেশন করে ও বন বিভাগকে অবগত করে সেই ভেঙে যাওয়া ২০টি গাছ শ্রী শ্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ স্কুলের বেঞ্চ তৈরী করেছি।
Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ সরিয়ে নিলো আসামীরা

আপডেট টাইম ১১:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর ২০২০
গোপালগঞ্জ:: গোপালগঞ্জে সমিতির মাধ্যমে রোপিত সামাজিক বনায়নের শতাধিক বনজ গাছ কেটে বিক্রি ও বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে বনায়ন সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় গাছ চুরির মামলা হয়। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পরে পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ গভীর রাতে সরিয়ে নিয়েছেন সমিতির সভাপতি হীরেন্ময় বালা। কেটে নেয়া ওই গাছের আনুমানিক মূল্য ৩ লক্ষ টাকা। এমনটা দাবী করছেন সমিতির অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয়রা।
জানাগেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের সানপুখরিয়া গ্রামের রানা পাশা এলাকার সড়কের পাশের সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গায় রানাপাশা বন উন্নয়ন সমিতি নামের একটি সংগঠন সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলেন।
২০১২ সালে সেখানে রোপন করা হয় ৫ হাজার বনজ গাছ। চুক্তি মোতাবেক গাছ বিক্রয়ের সময় ওই সমিতি অর্থাৎ উপকারভোগীরা ৫৫ ভাগ টাকা পাবেন। কিন্তু গত ২৪ জুন ওই বনায়ন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১শত প্রাপ্ত বয়স্ক বনজ গাছ কেটে নিয়ে যায় ওই সমিতির সভাপতি হীরেন্ময় বালা, সদস্য প্রহলাদ চৌধুরী ও খোকন মন্ডল। পরে কাটা গাছ ওই স্থান থেকে কৌশলে সরিয়ে নিয়ে উপজেলার বাইরের জলাশয়/পুকুরে লুকিয়ে রাখেন তারা। স্থানীয়দের এমন অভিযোগের পর সরকারি জায়গা থেকে ৪৬ গাছ কেটে চুরির অভিযোগে সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান ২৯ জুলাই ওই তিনজনকে আসামী করে সদর থানায় অভিযোগ করেন। গত ৬ আগষ্ট তা এফআইর ভুক্ত হয়। এ ব্যাপারে সমিতির সদস্য ও স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেন।
এদিকে বন বিভাগের করা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন হিরেন্ময়।২৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলার বরণপাল্টা গ্রামের কান্দন রায়ের পুকুরে লুকিয়ে রাখা গাছ ট্রলারযোগে সরিয়ে নিয়ে যান হিরেন্ময়।
পুকুর মালিক কান্দন বলেন, আমার পুকুরে গাছ লুকিয়ে রাখার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। নৌকা চালিয়ে আসার সময় পুকুরের তলদেশে গাছ আছে এমন মনে হলো। পরে জলে নেমে অনুভব করতে পারলাম সেখানে অনেক গাছ আছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে একটি ট্রলার ও বেশ কয়েজন শ্রমিক নিয়ে পুকুর থেকে গাছ তুলে নিতে আসে হিরেন্ময়। এবং প্রায় দুই ঘন্ট ধরে ওই গাছ পানির নিচ থেকে তুলে ট্রলারে করে নিয়ে যান। আমিসহ আমার বাড়ির বেশ কয়েকজন গাছ নিতে বাধা দিলেও তিনি শোনেন নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, গাছ চুরির মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি।
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জানান জাহঙ্গীর আলম বলেন, গাছ কেটে নেয়ার ব্যাপারে আমাকে সমিতির সভাপতি কিছুই জানায়নি। এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি হীরেন্ময়সহ ৩ জনকে আসামী করে আমি মামলা করি। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযুক্ত হিরেন্ময় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমপান’ ঝড়ের সময় আমাদের সামাজিক বনায়নের গাছ ভেঙে যায়। এরপর আমরা রেজুলেশন করে ও বন বিভাগকে অবগত করে সেই ভেঙে যাওয়া ২০টি গাছ শ্রী শ্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ স্কুলের বেঞ্চ তৈরী করেছি।