সারাদিন ডেস্ক::আগামী সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে সম্পূর্ণ ভোট ইভিএমে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতে কমিশন সভার পর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বিরোধিতার মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে পূর্ণাঙ্গ ভোট ইভিএমে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ৩০০টি আসনের কোন ছয়টিতে, তা এখনও ঠিক হয়নি। ইসি সচিব জানিয়েছেন, আগামী ২৮ নভেম্বর এই আসনগুলো ঠিক করা হবে। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে আসন ছয়টি বাছাই করা হবে এবং সিটি করপোরেশন ও শহরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে পূর্ণ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোট ৪০ হাজারটির মধ্যে ৯০০টির মতো কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোট গ্রহণ হবে, অর্থাৎ সেগুলোতে কোনো ব্যালট পেপার থাকবে না। কতটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে- জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন বলেন, “এভারেজে যদি শহর এলাকায় ১৫০টি কেন্দ্রে (প্রতি আসনে) হয়, তাহলে প্রায় ৯০০টি কেন্দ্র। এর চেয়ে বেশি কেন্দ্রে ব্যবহারের সক্ষমতা ছিল কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “স্টাফ, কেন্দ্রের সক্ষমতাসহ সকল কিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবগুলো সিটি করপোরেশন থেকে দ্বৈচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করা হবে। তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, শহরাঞ্চলে ‘অল্প’ কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার হবে।
শুক্রবারের এক অনুষ্ঠানেও তিনি বলেছিলেন, “আমরা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করব। একেবারে সীমিত আকারে ব্যবহার করতে হবে। অথবা কয়েকটি আসনের কিছু সংখ্যক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হবে। তবে শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত বড় পরিসরেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিল ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান জানালেও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। আপত্তি না শুনলে মামলা করার হুমকিও দিয়ে রেখেছে তারা। এ বিষয়ে সিইসি শুক্রবার বলেছিলেন, “যারা মামলা করবে, এটা তাদের ব্যাপার, আমার কিছু বলার নেই। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
স্থানীয় নির্বাচনে এক দশক আগে ইভিএম ব্যবহার শুরু হলেও জাতীয় নির্বাচনে এবারই প্রথম তা ব্যবহারা হতে যাচ্ছে। এজন্য আইন সংশোধন করতে হয় তড়িঘড়ি করে, শেষে অধ্যাদেশ জারি করে তা কার্যকর করতে হয়। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি হবে বলে বিএনপির সন্দেহ। ইভিএমে ভোটাররা অভ্যস্ত নয় বলে তা ব্যবহার না করার আহ্বান ছিল জাতীয় পার্টিসহ অন্য কয়েকটি দলের। সিইসি এর আগে বলেছিলেন, যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেখানে কয়েকদিন আগে থেকে মানুষকে এ যন্ত্র সম্পর্কে বোঝানো হবে, যাতে কোনো সমস্যা না থাকে।
ইভিএম বিরোধিতার জবাবে তিনি বলেন, “তারা এসে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুক। তাদের লোক দিয়ে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করুক। তাহলে তাদের সংশয় কেটে যাবে। ইভিএম ব্যবহারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মামলা করলে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যলটের ব্যবস্থা থাকবে কি না- জানতে চাইলে ইসি সচিব শনিবার বলেন, “আগে মামলা করুক, তারপর সেটা দেখা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসা যাবে না।
ইভিএম ব্যবহার না করার ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোর আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, “সেটি বিবেচনা করেই তো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”তিনি বলেন, ইভিএমের ফলাফল কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘোষণা করা হবে। ফল নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠার সুযোগ নেই। কারিগর ত্রুটি নিয়ে যেসব অভিযোগ আসছে, তা ‘কাল্পনিক, মিথ্যাচার’।
ইভিএম কেন্দ্রগুলোয় কারিগরি সহায়তায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন বলে সশস্ত্রবাহিনীর সিগন্যাল কোরের কিছু সদস্যদের রোববার থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে।ইসি সচিব বলেন, “যে সমস্ত আসনগুলো নির্ধারণ করা হবে, সেটায় কতগুলো কেন্দ্র আছে, কতগুলো বুথ আছে, সবকিছু বিবেচনা করে লোকবল নির্ধারণ করা হবে। আমাদের প্যানেল তৈরি করা আছে। যদি অতিরিক্ত লোকের দরকার হয়, তাহলে প্যানেল থেকে লোক নেওয়া হবে।”
ভোটগ্রহণের সময় কোনো ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট কাজ না করলে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ‘২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন’ বলে জানান তিনি।ইভিএম ব্যবহারে খরচ কত হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান সচিব।এক প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, “কমিশনের সিদ্ধান্ত, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় যেহেতু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ অনেক শিক্ষিত হয়েছে, সিটি করপোরেশনগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া গেছে বলে আমরা ইভিএম ব্যবহার করছি।”
ইভিএমে ভোট যেভাবে হয়
স্থানীয় নির্বাচনে এ ইভিএম ব্যবহার হয়েছে রংপুর, খুলনা, গাজীপুর ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে।আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়।নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করেন পোলিং অফিসার।ডেটাবেইজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে।মেশিনটিতে কুইক রেসপন্স কোড QR CODE সহ আরও কিছু তথ্য সম্বলিত টোকেন মুদ্রণ করে ভোটারকে দেওয়া হয়।ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে এলে ভোটিং মেশিনের QR CODE স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি পদের জন্য ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হবে।ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকে বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন এবং ওই ব্যালট ইউনিটের সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে তার ভোট শেষ করবেন। কখনো ভুলবশত কোনো প্রতীক সিলেক্ট করা হলে, ব্যালট ইউনিটের লাল রংয়ের CANCEL বোতাম চেপে পরবর্তীতে যে কোনো প্রার্থীকে আবার সিলেক্ট করা যাবে। এভাবে দুই বার CANCEL করা যাবে, তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।