ঢাকা ০৫:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
আওয়ামীপন্থি ৯৩ আইনজীবীর আদালতে আত্মসমর্পণ, জামিন আবেদন আনন্দবাজারের প্রতিবেদন, ঢাকার প্রস্তাব দ্বিধায় দিল্লি সত্যের মুখোমুখি আসিফ নজরুল পীরগঞ্জে মাস ব্যাপী হস্ত কুটির শিল্প মেলার উদ্বোধন পীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদন সংখ্যালঘুদের দমিয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা পবিত্র শবে কদর আজ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা সনদ ফেরত দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ে, কোটায় চাকরিরত ৯০ হাজার পীরগঞ্জে র‌্যাব’র হাতে ডিসকভার বাইক সহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক ভুট্টা খেতে ফেলে যাওয়া নবজাতকের মায়ের খোঁজ মিলেছে, দত্তক নিতে মানুষের ভিড়

লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন কখন পড়বেন

হজরত ইউনুস (আ.) ছিলেন একজন নবী। সুরা ইউনুস নামে পবিত্র কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সুরা আছে। এই সুরায় তওহিদের প্রমাণ ও অংশীবাদের প্রতিবাদ রয়েছে। সুরাটিতে অবিশ্বাসীদের সম্বোধন করে তওহিদ, ওহি, নবুয়ত ও পরকালের সত্যতা ঘোষণা করা হয়েছে।

সুরা ইউনুস ছাড়াও কোরআনে আরও ছয়টি সুরায় হজরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দুজন নবী মায়ের নামে পরিচিত হয়েছেন। একজন হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.), অন্যজন হজরত ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.)। মাত্তা হজরত ইউনুস (আ.)-এর মায়ের নাম। মায়ের নামেই তাঁকে ইউনুস ইবনে মাত্তা বলা হয়। কোরআনে তাঁকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে—ইউনুস, জুননুন ও সাহিবুল হুত। জুননুন ও সাহিবুল হুতের অর্থ মাছওয়ালা। মাছ–সংশ্লিষ্ট ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তাঁকে এ নামে ডাকা হয়েছে।

হজরত ইউনুস (আ.)-কে বর্তমান ইরাকের মসুল নগরীর কাছাকাছি নিনাওয়া জনপদে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। সুরা সাফফাতের ১৪৭ আয়াতে এ নিয়ে আলোচনা আছে। তিনি মসুলবাসীকে আল্লাহর পথে ডাকলেন। আখিরাতের বিষয়ে সতর্ক করলেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁর কথা শোনেনি। নবী ইউনুস (আ.) তাদের ইমান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন।

তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব তাদের ওপর নিপতিত হচ্ছে ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে গেলেন। কিন্তু এলাকা ছাড়ার ব্যাপারে তিনি আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করেননি। আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে তাঁর নিজে নিজে বের হয়ে যাওয়াটা আল্লাহর পছন্দ হয়নি। এ ধরনের বিচ্যুতিতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

হজরত ইউনুস (আ.) এলাকা ছাড়ার পর লোকজন ভয় পেয়ে গেল যে এবার নিশ্চিত আল্লাহর আজাব চলে আসবে। তারা লোকালয় ছেড়ে বনবাদাড়ের দিকে চলে গেল। গবাদিপশু ও শিশুদেরও সঙ্গে নিল। সেখানে সবাই আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করল। তাদের তওবার কারণে আল্লাহ তাদের ওপর থেকে আজাব সরিয়ে নেন।

এলাকা ছাড়ার পর হজরত ইউনুস (আ.) ভাবলেন, তার সম্প্রদায় হয়তো আল্লাহর আজাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি কল্পনাও করেননি যে তারা তওবা করে আল্লাহর প্রতি ইমান নিয়ে আসবে। তিনি যখন জানতে পারলেন, তারা সবাই ইমান নিয়ে এসেছে, একদিকে তিনি অবাক হলেন, অন্যদিকে ভীত হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব আসবে, কিন্তু সেই আজাব সরে গেছে। তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে হত্যা করতে পারে। সে সময়ে মিথ্যা বলার শাস্তি ছিল হত্যা। এ আশঙ্কায় তিনি দেশে না ফিরে দূর দেশে যাওয়ার জন্য মানুষবোঝাই একটি নৌকায় চড়ে বসলেন। নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছামাত্র প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। প্রবল ঢেউয়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে মাঝি বললেন, মালিকের অবাধ্য হয়ে এই নৌকায় কেউ উঠেছে। এমন কেউ থেকে থাকলে তাকে নদীতে ফেলে দিতে হবে। না হলে অন্য যাত্রীরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে না।

যাত্রীদের মধ্যে লটারি করা হলো। তিনবার লটারি করা হলে প্রতিবারই হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম এল। হজরত ইউনুস (আ.) তখন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। একটি বিশালদেহী মাছ এসে তাঁকে গিলে ফেলল। মাছটির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল, হজরত ইউনুস (আ.)-এর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

মাছের পেটে গিয়ে হজরত ইউনুস (আ.) একটি দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সেটিই দোয়া ইউনুস নামে পরিচিত। তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭ ) অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র মহান, আমি তো সীমালঙ্ঘনকারী।’

এই দোয়ার ফলে মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাঁকে মুক্তি দেন। কোরআনে আছে, ‘সে যদি আল্লাহর মহিমা আবৃত্তি না করত, তাহলে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাকে মাছের পেটে থাকতে হতো।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১৪৩-১৪৪)

কিছুদিন পর মাছটি হজরত ইউনুস (আ.)-কে নদীতীরে উগড়ে ফেলে দিল। আল্লাহ সেখানে তাঁর শারীরিক প্রশান্তির জন্য একটি লতাবিশিষ্ট গাছ উদ্‌গত করে দেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তারপর ইউনুসকে আমি তৃণহীন প্রান্তরে ফেলে দিলাম, তখন সে অসুস্থ ছিল। পরে তাকে ছায়া দেওয়ার জন্য আমি একটি লাউগাছ গজালাম।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১৪৫-১৪৬)

যেকোনো বিপদে পড়লে আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় কামনা করতে হয়।

হজরত সাদ (রা.)-এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুননুন ইউনুস (আ.) মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। কোনো মুসলমান যখনই এই দোয়া পড়ে, আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

আওয়ামীপন্থি ৯৩ আইনজীবীর আদালতে আত্মসমর্পণ, জামিন আবেদন

লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন কখন পড়বেন

আপডেট টাইম ০১:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

হজরত ইউনুস (আ.) ছিলেন একজন নবী। সুরা ইউনুস নামে পবিত্র কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সুরা আছে। এই সুরায় তওহিদের প্রমাণ ও অংশীবাদের প্রতিবাদ রয়েছে। সুরাটিতে অবিশ্বাসীদের সম্বোধন করে তওহিদ, ওহি, নবুয়ত ও পরকালের সত্যতা ঘোষণা করা হয়েছে।

সুরা ইউনুস ছাড়াও কোরআনে আরও ছয়টি সুরায় হজরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দুজন নবী মায়ের নামে পরিচিত হয়েছেন। একজন হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.), অন্যজন হজরত ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.)। মাত্তা হজরত ইউনুস (আ.)-এর মায়ের নাম। মায়ের নামেই তাঁকে ইউনুস ইবনে মাত্তা বলা হয়। কোরআনে তাঁকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে—ইউনুস, জুননুন ও সাহিবুল হুত। জুননুন ও সাহিবুল হুতের অর্থ মাছওয়ালা। মাছ–সংশ্লিষ্ট ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তাঁকে এ নামে ডাকা হয়েছে।

হজরত ইউনুস (আ.)-কে বর্তমান ইরাকের মসুল নগরীর কাছাকাছি নিনাওয়া জনপদে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। সুরা সাফফাতের ১৪৭ আয়াতে এ নিয়ে আলোচনা আছে। তিনি মসুলবাসীকে আল্লাহর পথে ডাকলেন। আখিরাতের বিষয়ে সতর্ক করলেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁর কথা শোনেনি। নবী ইউনুস (আ.) তাদের ইমান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন।

তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব তাদের ওপর নিপতিত হচ্ছে ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে গেলেন। কিন্তু এলাকা ছাড়ার ব্যাপারে তিনি আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা করেননি। আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে তাঁর নিজে নিজে বের হয়ে যাওয়াটা আল্লাহর পছন্দ হয়নি। এ ধরনের বিচ্যুতিতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

হজরত ইউনুস (আ.) এলাকা ছাড়ার পর লোকজন ভয় পেয়ে গেল যে এবার নিশ্চিত আল্লাহর আজাব চলে আসবে। তারা লোকালয় ছেড়ে বনবাদাড়ের দিকে চলে গেল। গবাদিপশু ও শিশুদেরও সঙ্গে নিল। সেখানে সবাই আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করল। তাদের তওবার কারণে আল্লাহ তাদের ওপর থেকে আজাব সরিয়ে নেন।

এলাকা ছাড়ার পর হজরত ইউনুস (আ.) ভাবলেন, তার সম্প্রদায় হয়তো আল্লাহর আজাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি কল্পনাও করেননি যে তারা তওবা করে আল্লাহর প্রতি ইমান নিয়ে আসবে। তিনি যখন জানতে পারলেন, তারা সবাই ইমান নিয়ে এসেছে, একদিকে তিনি অবাক হলেন, অন্যদিকে ভীত হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে আল্লাহর আজাব আসবে, কিন্তু সেই আজাব সরে গেছে। তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে হত্যা করতে পারে। সে সময়ে মিথ্যা বলার শাস্তি ছিল হত্যা। এ আশঙ্কায় তিনি দেশে না ফিরে দূর দেশে যাওয়ার জন্য মানুষবোঝাই একটি নৌকায় চড়ে বসলেন। নৌকা মাঝনদীতে পৌঁছামাত্র প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। প্রবল ঢেউয়ে নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। অবস্থা বেগতিক দেখে মাঝি বললেন, মালিকের অবাধ্য হয়ে এই নৌকায় কেউ উঠেছে। এমন কেউ থেকে থাকলে তাকে নদীতে ফেলে দিতে হবে। না হলে অন্য যাত্রীরা এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে না।

যাত্রীদের মধ্যে লটারি করা হলো। তিনবার লটারি করা হলে প্রতিবারই হজরত ইউনুস (আ.)-এর নাম এল। হজরত ইউনুস (আ.) তখন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। একটি বিশালদেহী মাছ এসে তাঁকে গিলে ফেলল। মাছটির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল, হজরত ইউনুস (আ.)-এর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

মাছের পেটে গিয়ে হজরত ইউনুস (আ.) একটি দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। সেটিই দোয়া ইউনুস নামে পরিচিত। তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭ ) অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র মহান, আমি তো সীমালঙ্ঘনকারী।’

এই দোয়ার ফলে মাছের পেট থেকে আল্লাহ তাঁকে মুক্তি দেন। কোরআনে আছে, ‘সে যদি আল্লাহর মহিমা আবৃত্তি না করত, তাহলে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাকে মাছের পেটে থাকতে হতো।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১৪৩-১৪৪)

কিছুদিন পর মাছটি হজরত ইউনুস (আ.)-কে নদীতীরে উগড়ে ফেলে দিল। আল্লাহ সেখানে তাঁর শারীরিক প্রশান্তির জন্য একটি লতাবিশিষ্ট গাছ উদ্‌গত করে দেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তারপর ইউনুসকে আমি তৃণহীন প্রান্তরে ফেলে দিলাম, তখন সে অসুস্থ ছিল। পরে তাকে ছায়া দেওয়ার জন্য আমি একটি লাউগাছ গজালাম।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১৪৫-১৪৬)

যেকোনো বিপদে পড়লে আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় কামনা করতে হয়।

হজরত সাদ (রা.)-এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুননুন ইউনুস (আ.) মাছের পেটে দোয়া করেছিলেন, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। কোনো মুসলমান যখনই এই দোয়া পড়ে, আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)