ঢাকা ০৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
১৫ বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যা জানা গেলো সরকারের ভেতরে সরকার ড. ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ও অভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জাতীয় শহীদ’ ঘোষণার নির্দেশ কেন নয় পীরগঞ্জে হুসেইন মুহাম্মদ এর ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী পালিত যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সম্পদ ক্রোক, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ সোহাগ কিলিং মিশন রজনী বোস লেনে হত্যা, হাসপাতালের সামনে নিয়ে চলে বর্বরতা ভিডিও সংকটে বাংলাদেশ, ইউনূস কী করবেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ফলাফল স্থগিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ঠাকুরগাঁয়ের মিনাপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত পীরগঞ্জে ১১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি বিভাগের নারিকেলের চারা বিতরণ

হাই-কোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে জবরদখলদার উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি

পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:: মহামান্য হাই-কোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও পালিত হয়নি। বরং একের পর এক মামলা পূন:মামলা ও তদ্বিরে আটকে গেছে উচ্ছেদ অভিযান। মামলার বাদিনী ওয়াকফ এষ্টেটের মোতয়াল্লী প্রভাবশালী দখলদারদের অপ-কৌশল ও হয়রানীর কারনে এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। আইনের মার-প্যাচে ফেলে হয়রানীর এ ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার।
উপজেলা শহরের পারিয়া মৌজার সিএস খতিয়ান ২৪ ও ২৫ এবং ৬, ৬২ ও ৬৬ নং দাগের ৫.৭১ একর সম্পত্তি স্থানীয় পানিয়া মোহাম্মদ এষ্টেটের সম্পত্তি হিসেবে চিহিৃত। এই সম্পত্তি ২৫.০১.২০১২ ইং ১৭২/১২ নং রিট মামলার সূত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের এডিসি (রাজস্ব) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সম্পত্তির মোতয়াল্লী মোছা: মাসুদা আকতারের কাছে বুঝে দেয়া হয়। প্রভাবশালী দখলদাররা কয়েকমাস পরেই ৪ নভেম্বর ১২ ইং উচ্ছেদ সম্পত্তি পূনরায় দখল করে নেন। শুরু হয় মামলা পূন:মামলা। মোতয়াল্লী হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে কোর্ট শুনানী অন্তে ১৫.০১.২০১৮ ইং মোতয়াল্লীর কাছে সম্পত্তি বুঝে দেয়ার জন্য আদেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে দখলদাররা সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে লিভ টু আপীল নং ১৫০৮/১৮ দায়ের করলে শুনানী অন্তে আপীলটি ০৩-০৩-১৯ ইং তারিখে খারিজ হয়। এদিকে অবৈধ দখলদাররা জেলার যুগ্ন জজ আদালত-১ এ ওয়াকফ সম্পত্তি আত্বসাতের লক্ষ্যে দেওয়ানী আদালতে ৪৯/১১ নং মামলা দাযের করেন। আদালত ২৫.৩.১৫ ইং মামলাটি খারিজ করেন। দখলদাররা রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী আপীল ৮৪/১৫ দায়ের করলে জেলা জজ শুনানীঅন্তে আপীলটি ১৯.০৮.১৮ ইং নামন্জুর করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীরা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৩৯৩৫/১৮ দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একক বেঞ্চ মামলাটি শুনানী অন্তে ০৬.১০.২০ ইং তারিখে খারিজ করেন। অত:পর বিবাদীরা উক্ত সম্পত্তির উপর হাইকোর্ট থেকে স্থিতাবস্থার আদেশ করিযে নেন। মোতয়াল্লী স্থিতাবস্থার আদেশ ভ্যাকেট এর আবেদন করলে আপীল বিভাগের ফুল কোর্ট ১০.০৩.২২ ইং তারিখে আদেশটি রিকলড ভ্যাকেট করেন এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উক্ত সম্পত্তি উদ্ধার পূর্বক বুঝে দেযার জন্য আদেশ দেন। সমস্ত বাধা দুর হলেও নানা অজুহাত ও তদ্বিরের কারনে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের লক্ষনীয় কোন উদ্যোগ নেই।
অক্টোবর-২৪ ইং মাসের জেলা ভু-সম্পত্তি জবরদখল বিষয়ে অভিযোগ গ্রহন এবং তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং সংক্রান্ত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো: সোলেমান আলী, পীরগঞ্জ ইউএনও এবং এসিল্যান্ড কে ২০.১১.২৪ ইং নির্দেশ দেন। প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড সংশ্লিষ্ট দখলদারদের নোটিশ প্রদান করেন এবং স্থাপনাসমুহ ৪.১২.২৪ ইং এর মধ্যে সরিযে নেয়ার জন্য নোটিশ করেন এবং ৬.১.২৫ ইং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে মর্মে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স সহ যাবতীয় কার্যক্রম প্রস্তুত করেন। অভিযানের চুড়ান্ত পর্যায়ে ১৮.০৫.২৫ ইং বিবাদীদের পক্ষে নবাব সেলিম হাইকোর্টে চলমান অযুহাতে ১৭৯৮/২১ মামলার সূত্রে অভিযান বন্ধ রাখার আবেদন করেন। হাইকোর্টে মিমাংশিত বিষয় নিয়ে ইউএও বরাবরে আবেদন করে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক এবং ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এভাবেই ৭ বছল ধরে ঝুলে আছে হাইকোর্টের আদেশ। যেখানে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাপূর্বক ওয়াকফ এষ্টেরে ৫.৭১ একর সম্পত্তি মোতয়াল্লীর কাছে বুঝে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। হাইকোর্টের সে নির্দেশনা নানা খোড়া অজুহাতে ৭ বছরেও কার্যকর না হওয়ায় জনমনে আইনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার আদেশপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার(ভূমি),পীরগঞ্জ এন.এম ইশফাকুল কবীর কে উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে স্থগিত করার কারন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন হাইকোর্টে ১৭৯৮/২১ মামলা চলমান থাকা অবস্থায় উচ্ছেদ করা হলে তারা আমার বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা করতে পারেন, তাই অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ বিশিষ্ট আইনজীবি মো: বেলাল হোসেন বলেছেন, এটা সুষ্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। কারন ১৭৯৮/২১ মামলায় ফুলকোর্ট বসে ষ্ট্যাটাসকো আদেশ প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে ঐ সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কোন আইনগত বাধা নেই বরং এই যে, উচ্ছেদ কার্যে প্রশাসনের অবহেলা বা অপারগতা এর জন্য আদালত অবমামনার মামলা হতে পারে। বিষয়টি এলাকার জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫ বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যা জানা গেলো

হাই-কোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে জবরদখলদার উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি

আপডেট টাইম ০৪:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:: মহামান্য হাই-কোর্টের ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ ৭ বছরেও পালিত হয়নি। বরং একের পর এক মামলা পূন:মামলা ও তদ্বিরে আটকে গেছে উচ্ছেদ অভিযান। মামলার বাদিনী ওয়াকফ এষ্টেটের মোতয়াল্লী প্রভাবশালী দখলদারদের অপ-কৌশল ও হয়রানীর কারনে এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। আইনের মার-প্যাচে ফেলে হয়রানীর এ ঘটনা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার।
উপজেলা শহরের পারিয়া মৌজার সিএস খতিয়ান ২৪ ও ২৫ এবং ৬, ৬২ ও ৬৬ নং দাগের ৫.৭১ একর সম্পত্তি স্থানীয় পানিয়া মোহাম্মদ এষ্টেটের সম্পত্তি হিসেবে চিহিৃত। এই সম্পত্তি ২৫.০১.২০১২ ইং ১৭২/১২ নং রিট মামলার সূত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের এডিসি (রাজস্ব) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সম্পত্তির মোতয়াল্লী মোছা: মাসুদা আকতারের কাছে বুঝে দেয়া হয়। প্রভাবশালী দখলদাররা কয়েকমাস পরেই ৪ নভেম্বর ১২ ইং উচ্ছেদ সম্পত্তি পূনরায় দখল করে নেন। শুরু হয় মামলা পূন:মামলা। মোতয়াল্লী হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে কোর্ট শুনানী অন্তে ১৫.০১.২০১৮ ইং মোতয়াল্লীর কাছে সম্পত্তি বুঝে দেয়ার জন্য আদেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে দখলদাররা সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে লিভ টু আপীল নং ১৫০৮/১৮ দায়ের করলে শুনানী অন্তে আপীলটি ০৩-০৩-১৯ ইং তারিখে খারিজ হয়। এদিকে অবৈধ দখলদাররা জেলার যুগ্ন জজ আদালত-১ এ ওয়াকফ সম্পত্তি আত্বসাতের লক্ষ্যে দেওয়ানী আদালতে ৪৯/১১ নং মামলা দাযের করেন। আদালত ২৫.৩.১৫ ইং মামলাটি খারিজ করেন। দখলদাররা রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী আপীল ৮৪/১৫ দায়ের করলে জেলা জজ শুনানীঅন্তে আপীলটি ১৯.০৮.১৮ ইং নামন্জুর করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীরা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৩৯৩৫/১৮ দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একক বেঞ্চ মামলাটি শুনানী অন্তে ০৬.১০.২০ ইং তারিখে খারিজ করেন। অত:পর বিবাদীরা উক্ত সম্পত্তির উপর হাইকোর্ট থেকে স্থিতাবস্থার আদেশ করিযে নেন। মোতয়াল্লী স্থিতাবস্থার আদেশ ভ্যাকেট এর আবেদন করলে আপীল বিভাগের ফুল কোর্ট ১০.০৩.২২ ইং তারিখে আদেশটি রিকলড ভ্যাকেট করেন এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উক্ত সম্পত্তি উদ্ধার পূর্বক বুঝে দেযার জন্য আদেশ দেন। সমস্ত বাধা দুর হলেও নানা অজুহাত ও তদ্বিরের কারনে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের লক্ষনীয় কোন উদ্যোগ নেই।
অক্টোবর-২৪ ইং মাসের জেলা ভু-সম্পত্তি জবরদখল বিষয়ে অভিযোগ গ্রহন এবং তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং সংক্রান্ত কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো: সোলেমান আলী, পীরগঞ্জ ইউএনও এবং এসিল্যান্ড কে ২০.১১.২৪ ইং নির্দেশ দেন। প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড সংশ্লিষ্ট দখলদারদের নোটিশ প্রদান করেন এবং স্থাপনাসমুহ ৪.১২.২৪ ইং এর মধ্যে সরিযে নেয়ার জন্য নোটিশ করেন এবং ৬.১.২৫ ইং উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে মর্মে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স সহ যাবতীয় কার্যক্রম প্রস্তুত করেন। অভিযানের চুড়ান্ত পর্যায়ে ১৮.০৫.২৫ ইং বিবাদীদের পক্ষে নবাব সেলিম হাইকোর্টে চলমান অযুহাতে ১৭৯৮/২১ মামলার সূত্রে অভিযান বন্ধ রাখার আবেদন করেন। হাইকোর্টে মিমাংশিত বিষয় নিয়ে ইউএও বরাবরে আবেদন করে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক এবং ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এভাবেই ৭ বছল ধরে ঝুলে আছে হাইকোর্টের আদেশ। যেখানে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাপূর্বক ওয়াকফ এষ্টেরে ৫.৭১ একর সম্পত্তি মোতয়াল্লীর কাছে বুঝে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। হাইকোর্টের সে নির্দেশনা নানা খোড়া অজুহাতে ৭ বছরেও কার্যকর না হওয়ায় জনমনে আইনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার আদেশপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার(ভূমি),পীরগঞ্জ এন.এম ইশফাকুল কবীর কে উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে স্থগিত করার কারন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন হাইকোর্টে ১৭৯৮/২১ মামলা চলমান থাকা অবস্থায় উচ্ছেদ করা হলে তারা আমার বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা করতে পারেন, তাই অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ বিশিষ্ট আইনজীবি মো: বেলাল হোসেন বলেছেন, এটা সুষ্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। কারন ১৭৯৮/২১ মামলায় ফুলকোর্ট বসে ষ্ট্যাটাসকো আদেশ প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে ঐ সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কোন আইনগত বাধা নেই বরং এই যে, উচ্ছেদ কার্যে প্রশাসনের অবহেলা বা অপারগতা এর জন্য আদালত অবমামনার মামলা হতে পারে। বিষয়টি এলাকার জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।