সারাদিন ডেস্ক:: রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর পরই দুই পিকআপ বোঝাই টাকা গেছে চট্টগ্রামের দিকে পাঠানো হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে। তবে বিরাট অংকের টাকা কার এবং কোথায় পাঠানো হয়েছে, এ বিষয়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হতে পারেনি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা পিকআপে করে টাকা কোথায় গেছে, কার টাকা, এখন কী অবস্থায় আছে- এসব বিষয় উদঘাটনের চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ায় দুর্নীতিবাজ নেতারা এখন বেকায়দায়। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার সুযোগ না পেয়ে অনেকে বস্তায় ভরে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে।
সম্প্রতি একজন প্রকৌশলী কয়েক বস্তা টাকা তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাখতে যান। কিন্তু ঐ আত্মীয় রাখতে রাজি হননি।জানা গেছে, অবৈধ টাকা রাখার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা, দুর্নীতি, মাদক, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা। কয়েক শত কোটি টাকা নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। সূত্র জানায়, উল্লিখিত দুই পিকআপ ভর্তি টাকা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া কিংবা এমন এক নেতার হতে পারে যার নামের আদ্যক্ষর ‘স’। গোয়েন্দারাও এমনটি ধারণা করছেন। সম্প্রতি অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও ‘স’ আদ্যক্ষরের ঐ নেতার টাকা সবচেয়ে বেশি।
রাজনীতির নামে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তির প্রয়োগসহ যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে শুদ্ধি অভিযান। এ অভিযানের ফলে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম করে দলের ইমেজ ক্ষুণ্নকারী নেতাকর্মীরা আছেন ‘দৌড়ের ওপর’।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গতবছর সংসদ নির্বাচনের বছরখানেক আগে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে পাওয়া নির্দেশনায় বিতর্কিতদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। দুর্নীতি করলে কেউ যে ছাড় পাবেন না, এমনকি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা, শীর্ষ আমলা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পরিবহন নেতারাও যে অভিযানের বাইরে নেই, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গডফাদারের নাম চলে এসেছে। গ্রেফতারকৃতরা অনেক আমলা, মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী রাজনীতিক এমনকি কিছু ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নামও বলেছেন, নাম এসেছে প্রভাবশালী অনেক সাংবাদিকের; যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ উপায়ে কাড়ি কাড়ি টাকা বানিয়েছেন এবং বিদেশে পাচার করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতিবাজরা ব্যাংককে অবস্থানকারী চট্টগ্রামের শাহীন চৌধুরী নামের হুন্ডি ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারির মাধ্যমে সিংহভাগ টাকা পাচার করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই নাম। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তা শাহীন চৌধুরীর মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। শুধু এই সরকারের আমলে নয়, বিগত সরকারের আমলেও একই কায়দায় শাহীন চৌধুরীর মাধ্যমে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও আবুধাবিতে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ ধরনের তথ্যও বেরিয়ে আসছে। উল্লেখ্য, ব্যাংককের একটি ব্যাংকে শাহীন চৌধুরীর হুন্ডি ব্যবসার জন্য একটি আলাদা ডেস্কও রয়েছে।