সরকারি কর্মকর্তাদের সমাবেশ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য আকবর আলী খানের সেই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: সরকারি কর্মকর্তারা কি এরকম সমাবেশ করতে পারেন?
আকবর আলী খান: সরকারি কর্মকর্তাদের এই ধরনের সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। এটা নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার। এটাতে আমি দোষনীয় কিছু দেখি না। আরেকটি ভালো বিষয় যেটা দেখা গেছে, সেটা হলো, সবগুলো ক্যাডার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে সব ক্যাডার অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। সুতরাং এটাও একটা ভালো লক্ষণ।
তবে যেটা আমার একটু ভালো লাগেনি, সেটা হলো, তারা যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। এত উগ্রপন্থী ভাষায় ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যদের বক্তব্য শোভনীয় নয়। এটা আইনের প্রশ্ন নয় এটা শোভনীয়তার প্রশ্ন। আমার মনে হয় তারা আরেকটু নম্র ভাষায় তাদের বক্তব্য পেশ করতে পারতেন।
প্রশ্ন: আপনি যেটাকে উগ্র ভাষা বলছেন, কেন তারা এরকম ভাষায় বক্তব্য দিলেন বলে মনে হয়?
আকবর আলী খান: সম্ভবত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিয়ে তারা উদ্বেলিত হয়ে পড়েছিল এবং সেজন্য হয়তো আবেগের তাড়নায় তারা এটা করেছে।
প্রশ্ন: তারা তো সরকারি কর্মকর্তা। এরকম কী হতে পারে যে সরকার তাদের ব্যবহার করেছে?
আকবর আলী খান: এটা আমি বাইরে থেকে বলতে পারবো না। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের এমনিতে একটা এসোসিয়েশন আছে, তারা নিজেদের উদ্যোগেও করতে পারে। কিন্তু এটাতে তাদেরকে কেউ মদত দিয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই।
প্রশ্ন: সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, স্বাধীনতা, সংবিধান, রাষ্ট্র এবং জাতির জনক বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে হবে এবং যারা এসব বিষয়ে হাত দেবে তাদেরকে প্রতিরোধ করা হবে। তো সরকারি কর্মকর্তারা কি এ ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন?
আকবর আলী খান: বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসব ব্যাপারে সবকিছুর উর্ধ্বে থাকবে, এ ধরনের বক্তব্য অবশ্যই তারা দিতে পারে। তবে প্রতিরোধের যে বক্তব্য, সেটাকে হয়তো আরেকটু সহজ এবং শালীন করলে ভালো হতো। কারণ সরকারি কর্মচারীদের হাতেই তো সব ক্ষমতা। যদি তারা বলে যে আমরা প্রতিশোধ নেব বা এ ধরনের ব্যবস্থা নেব, তাহলে এমনও হতে পারে যে, যারা দোষী নয় তারাও হয়তো শাস্তি পেতে পারে। এটা তো কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। সুতরাং সরকারি কর্মচারীদের আচরণ অবশ্যই মার্জিত এবং এবং স্বাধীন হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: এখানে প্রায় ২৯টি ক্যাডারের সরকারি কর্মকর্তা এবং তার পাশাপাশি পুলিশ, বিচার বিভাগ, সর্বস্তরের কর্মকর্তারাই এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এটা কী বার্তা দেয়া বলে আপনার মনে হয়?
আকবর আলী খান: বিচার বিভাগের তো এখন কোন ক্যাডার নেই। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী তাদের কোন ক্যাডার নেই। আমি জানি না তারা কোন মহা ঐক্য গড়ে তুলেছে কীনা। আর পুলিশের তো ক্যাডার রয়েছে। সুতরাং তারা অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেহেতু সংঘাত বিরাজ করছে, সেহেতু যে কোন ধরনের পদক্ষেপই, এটাকে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ হয়। কিন্তু তবু, যখন বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠে, সেই প্রশ্নে অবশ্যই আমি মনে করি, ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বক্তব্য পেশ করার অধিকার রয়েছে।