এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িতের সন্দেহে আনুশকাহর প্রেমিক ফারদিন ইফতেখার দিহানসহ চার অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে নিহতের প্রেমিককে লক্ষ্যে রেখে বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায়। ঘটনার পর ওই ছাত্রীকে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে গাড়িতে করে নিয়ে আসে অভিযুক্তরা। পরে আনুশকাহ নূরের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে হাসপাতালে উশৃঙ্খল আচারণ করে অভিযুক্তরা। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করলে অভিযুক্তদের আটক করে পুলিশ।
শাহনূরীর পরিবারের দাবি কলাবাগানের পান্থপথের ডলফিন গলিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দশম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রী।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ডলফিন গলির পান্থনিবাসের ভবনের ডি-২ ফ্লাটে থাকত ফারদিন ও তার পরিবার। কথা হয় ওই বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী মাহবুবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি দুপুরে ডিউটিতে ছিলাম না। দুলাল নামে একজন ছিল। সে পলাতক, ফোন বন্ধ। ফারদিন ভালো ছেলে। নিচে বাইক রাখতো। বাড়িতে মাঝে মাঝে বন্ধুরা আসতো। তবে মেয়ে নিয়ে কোনদিন আসতে দেখেননি।’
তবে, যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অভিযুক্ত ফারদিনের মা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায়, ফারদিনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মাঝে মধ্যেই বাড়িতে থাকতেন না তারা। ঘটনার সময়ও পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না।
পাশের ফ্লাটের একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ঘটনার সময় বাসায় কেউ ছিলনা। আমাদের সঙ্গে তাদের বেশি যোগাযোগ ছিলনা। হয়তো ওই ছেলে-মেয়ের রিলেশন ছিল।
এ বিষয়ে নিহত শিক্ষার্থীর বোনজামাই শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, আনুশকাহ সম্পর্কে আমার চাচাতো শ্যালিকা। এ বছর মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে ও-লেভেল পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার দিকে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে কোচিং করতে গেলে এ সময় তার এক বান্ধবী মিথ্যা কথা বলে একটি বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় ওই বাসাতে চারজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
যখন প্রচন্ড রক্তপাত শুরু হয় তখন ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক ফারদিন ইফতেখার দিহান তাকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকাল পাঁচটায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মামলা করেছি।
তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর মা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। বাবা ব্যবসায়ী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে ছিল বড়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন।
নিহত শিক্ষার্থীর মা জানান, আমার মেয়েকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ও আমাকে যখন ফোন করে জানিয়েছিল তখন আমি অফিসে ছিলাম। আমাকে জানায়, মা আমি ক্লাসের ওয়ার্কসিট আনতে যাচ্ছি। এই বলে গেছে। দুপুর একটার পরে একটি ছেলে মুঠোফোন থেকে ফোন দিয়ে জানায়, আমার মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। আপনারা আসেন। পরবর্তীতে গিয়ে দেখি মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে। ওকে হাসপাতালেই আনা হয়েছে মৃত।
ওই ছাত্রীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, ঘটনায় জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সহপাঠীরা তাকে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে ডেকে নিয়েছিল।
কিশোরীর চাচা বলেন, ‘সকালে এক বান্ধবীর জন্মদিনের কথা বলে অন্য এক বান্ধবী তাকে কলাবাগানের এক বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার বন্ধুরা তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তারা তাকে হত্যা করে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আছে।’
ওই ছাত্রীর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, ধর্ষণের পর রক্তক্ষরণে ভয় পেয়ে অভিযুক্ত চারজন ছাত্রীকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর ওই ছাত্রীর মৃত্যু হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বর্তমানে ওই ছাত্রীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই কিশোরীর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যান কলাবাগান থানা পুলিশের একজন কনস্টেবল। তবে ঘটনার বিস্তারিত জানাননি ওই পুলিশ সদস্য।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আনুশকাহ শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তার পেটের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানার এসআই মো. রুম্মন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার আবুল হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া দিহানের বাসা থেকেও উদ্ধার হওয়া আলামতে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দিহানকে আটক করা হয়েছে। সেইসাথে আরো তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, হাসপাতাল থেকে আমরা তার লাশ উদ্ধার করেছি। তাকে হাসপাতালে আনার পর কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করে। তবে ভর্তি করা হয়নি। তাকে নিয়ে আসে বন্ধু দিহান, যাকে আমরা আটক করি। পরবর্তীতে হাসপাতালে তার আরও তিন বন্ধু আসে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে রেখেছি।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস গণমাধ্যমকে জানান, ওই ছাত্রীর বাসা ধানমন্ডির সোবহানবাগে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় যায় ওই ছাত্রী। দিহানের বাসা তখন ফাকা ছিল। সেখানে ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহান তার তিন বন্ধুকে ফোন করে ডেকে আনে। পরে তারা অসুস্থ ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিকালে তার মৃত্যু হয়।