ঢাকা ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

চাপ সামলাতে ‘ভেকু’ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে কবর

মোস্তাফিজুর রহমান::সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর নির্ধারিত রায়েরবাজার কবরস্থানে কর্মতৎপরতা বেড়েছে। কবরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি ভেকু (এক্সক্যাভেটর) নিয়োজিত করা হয়েছে। এতে কবরের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সহজ হচ্ছে গোরখোদকদের।

এ বিষয়ে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় এ বছর চাপ তুলনামূলক কম। গতবছর ২০ থেকে ২৪ জনকে প্রতিদিন কবর দিতে হয়েছিল। এবার ১০ থেকে ১২ জন হচ্ছে। কারণ গতবছর অধিকাংশ কবর ঢাকা দেয়া হয়েছিল। এবার সারা বাংলাদেশেই কবর দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোরখোদকদের কবর তৈরিতে যে চাপ তৈরি হয়েছিল সেটিও এখন কমে গেছে। এখন কবরের মাটি সরানোর জন্য একটি ভেকু নিয়োজিত রাখা আছে। ভেকু দিয়ে মাটি সরানোর পর বাকি কাজগুলো গোরখোদকরা সহজেই শেষ করতে পারছেন।’

আসাদুজ্জামান আরও জানান, ৩০/৩৫ জন গোরখোদক কবরস্থানটিতে কাজ করেন। তবে সবাই করোনার মৃতদের কবরের জন্য নয়, অন্য কাজেও তারা ব্যস্ত আছেন।

মিরপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানের পেছনের অংশের ৮ নম্বর ব্লকটি করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য নির্ধারণ করা আছে। সেখানে বর্তমানে ৫০টির অধিক কবর প্রস্তুত রাখা আছে। এরপরও ভেকু দিয়ে আরো কবর খোঁড়ার কাজ চালানো হচ্ছে।

রায়েরবাজার কবরস্থানে করোনার মৃত ব্যক্তির কবরের পরিসংখ্যান: রায়েরবাজার কবরস্থানে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১২০০ জনের অধিক করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ৭ জনসহ চলতি মাসে ১৪১জন করোনায় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রায় ৯ জন করে করোনায় মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর প্রথম দুই মাস করোনায় আক্রান্ত লাশের সংখ্যা কম থাকলেও মার্চ মাসে এসে হঠাৎ বেড়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসে ২৭ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু মার্চ মাসে এসে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৫ জনে। অন্যদিকে গতবছর শেষ তিন মাসের পরিসংখ্যান ছিল অক্টোবর মাসে ৪০ জন, নভেম্বর মাসে ৫১ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৬৬ জন।

গেলো বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ওই সময় খিলগাঁও তালতলা সরকারি কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফন শুরু হয়। ওই কবরস্থানে ১৯০ জন কবর দেয়ার পর পরিবেশগত সমস্যার কারণে কবর দেয়া স্থগিত করে দেয়া হয়। এরপর থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়েরবাজার কবরস্থানের করোনার মৃত ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত ব্লকটিতে ১০ হাজারের মতো কবর আছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জায়গা পূরণ হয়ে গেছে। বর্তমানে যে গতিতে করোনায় মৃত্যু হচ্ছে তাতে নতুন ব্লক লাগতে পারে। তবে রায়েরবাজার ছাড়াও বিকল্প কবরস্থানের প্রয়োজন হবে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি’র সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সারা বাংলাদেশেই করোনার আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের কবর দেয়া হচ্ছে। কবরের যে চাহিদা রয়েছে এখানেই পূরণ করা সম্ভব হবে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ

চাপ সামলাতে ‘ভেকু’ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছে কবর

আপডেট টাইম ০৬:১৯:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১
মোস্তাফিজুর রহমান::সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর নির্ধারিত রায়েরবাজার কবরস্থানে কর্মতৎপরতা বেড়েছে। কবরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি ভেকু (এক্সক্যাভেটর) নিয়োজিত করা হয়েছে। এতে কবরের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সহজ হচ্ছে গোরখোদকদের।

এ বিষয়ে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় এ বছর চাপ তুলনামূলক কম। গতবছর ২০ থেকে ২৪ জনকে প্রতিদিন কবর দিতে হয়েছিল। এবার ১০ থেকে ১২ জন হচ্ছে। কারণ গতবছর অধিকাংশ কবর ঢাকা দেয়া হয়েছিল। এবার সারা বাংলাদেশেই কবর দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোরখোদকদের কবর তৈরিতে যে চাপ তৈরি হয়েছিল সেটিও এখন কমে গেছে। এখন কবরের মাটি সরানোর জন্য একটি ভেকু নিয়োজিত রাখা আছে। ভেকু দিয়ে মাটি সরানোর পর বাকি কাজগুলো গোরখোদকরা সহজেই শেষ করতে পারছেন।’

আসাদুজ্জামান আরও জানান, ৩০/৩৫ জন গোরখোদক কবরস্থানটিতে কাজ করেন। তবে সবাই করোনার মৃতদের কবরের জন্য নয়, অন্য কাজেও তারা ব্যস্ত আছেন।

মিরপুরের রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানের পেছনের অংশের ৮ নম্বর ব্লকটি করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য নির্ধারণ করা আছে। সেখানে বর্তমানে ৫০টির অধিক কবর প্রস্তুত রাখা আছে। এরপরও ভেকু দিয়ে আরো কবর খোঁড়ার কাজ চালানো হচ্ছে।

রায়েরবাজার কবরস্থানে করোনার মৃত ব্যক্তির কবরের পরিসংখ্যান: রায়েরবাজার কবরস্থানে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১২০০ জনের অধিক করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ৭ জনসহ চলতি মাসে ১৪১জন করোনায় মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে প্রায় ৯ জন করে করোনায় মৃত ব্যক্তির কবর দেয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর প্রথম দুই মাস করোনায় আক্রান্ত লাশের সংখ্যা কম থাকলেও মার্চ মাসে এসে হঠাৎ বেড়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসে ২৭ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু মার্চ মাসে এসে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৫ জনে। অন্যদিকে গতবছর শেষ তিন মাসের পরিসংখ্যান ছিল অক্টোবর মাসে ৪০ জন, নভেম্বর মাসে ৫১ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৬৬ জন।

গেলো বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। ওই সময় খিলগাঁও তালতলা সরকারি কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফন শুরু হয়। ওই কবরস্থানে ১৯০ জন কবর দেয়ার পর পরিবেশগত সমস্যার কারণে কবর দেয়া স্থগিত করে দেয়া হয়। এরপর থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়েরবাজার কবরস্থানের করোনার মৃত ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত ব্লকটিতে ১০ হাজারের মতো কবর আছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জায়গা পূরণ হয়ে গেছে। বর্তমানে যে গতিতে করোনায় মৃত্যু হচ্ছে তাতে নতুন ব্লক লাগতে পারে। তবে রায়েরবাজার ছাড়াও বিকল্প কবরস্থানের প্রয়োজন হবে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি’র সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সারা বাংলাদেশেই করোনার আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের কবর দেয়া হচ্ছে। কবরের যে চাহিদা রয়েছে এখানেই পূরণ করা সম্ভব হবে।