সারাদিন ডেস্ক:: নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে যাচ্ছে আগামী সোমবার। এবার মন্ত্রিসভায় একঝাঁক নতুন মুখ দেখা যেতে পারে-এমন গুঞ্জনই শোনা যাচ্ছে। নতুনদের উদ্যোম ও পুরনোদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নতুন সরকারের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন। নির্বাচনে বিশাল জয়ের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার বিশ্বস্তদের সঙ্গে নতুন কেবিনেট গঠন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরঙ্কুশ জয় এবং টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মতো ‘বিশেষ’অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন মন্ত্রিসভা সাজানো হবে। মন্ত্রিসভার কলেবর এবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে । কারণ এবার দলের বিপুলসংখ্যক নেতা বিজয়ী হয়েছেন, মন্ত্রিসভায় মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একটি করে পদ বহাল থাকছে। জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে বিরোধী দলে চলে গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রিসভা গঠন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। আমার কেন যেন মনে হয় বিশাল একটা চমক আসবে।’
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের পথচলা। তবে বিশাল জয়ের সঙ্গে বিশাল চমকও থাকতে পারে।’
কাদের বলেন, ‘এ মন্ত্রিসভায় আমি ঠিক বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় বিপুল বিজয় তো বিপুল প্রত্যাশা। জনগণেরও এখানে একটা প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশার প্রতিধ্বনিতো করতে পারেন একজনই (শেখ হাসিনা)।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবিনেটের বিষয়টা সম্পূর্ণ তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিষয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর এরিয়া, এখানে অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই।’
মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার সাড়ে তিনটায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’
নতুন মন্ত্রীদের কোনো তালিকা পেয়েছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শপথ অনুষ্ঠানের খবর পর্যন্তই জানি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
এদিকে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। সরকারের পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। যারা নতুন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারবেন না তাদের রাখা হবে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে।
এবারের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীরা ২৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগই ২৫৭টি আসনে বিজয় অর্জন করেছে। এরপর থেকেই চলছে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ এবং নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নানামুখী আলোচনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ টেকনোক্র্যাট কোটায় নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় আসছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- আবুল মাল আবদুল মুহিত, মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম।
দফতর রদবদলের সম্ভাবনা থাকলেও পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যাদের তারা হলেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল লোটাস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ড. বীরেন শিকদার, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নতুন যাদের নাম আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহম্মদ ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, মুস্তাফা জব্বার, সাবের হোসেন চৌধুরী, ফজলে হোসেন বাদশা, সাংবাদিক শফিকুর রহমান, আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক), ডা. দীপু মনি, নাজমুল হাসান পাপন, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. হাবিবে মিল্লাত, একেএম রহমতুল্লাহ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মাশরাফি বিন মর্তুজা, ইসরাফিল আলম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নাহিম রাজ্জাক, সিমিন হোসেন রিমি ও জুয়েল আরেং।