সারাদিন ডেস্ক::
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরদিনই হাই কোর্টে আপিল করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
খালেদার আইনজীবী দলের সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মঙ্গলবার হাই কোর্টের সংশ্লিট শাখায় এই আপিল জমা দেন।
নথিপত্রসহ ১২২৩ পৃষ্ঠার ওই আবেদনে ফাইলিং লইয়ার হিসেবে আবদুর রেজাক খানের নাম রয়েছে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে ওই আবেদনে।
বিএনপি নেত্রীর আরেক আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন সাংবাদিকদের বলেন, “আপিল শুনানির জন্য তারিখ ঠিক হলেই আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করব।”
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের জেল ও জরিমানা করা হয় রায়ে।
রায়ের দিন বিচারক বলেছিলেন, তার পুরো রায় ৬৩২ পৃষ্ঠার। সেদিন তিনি এর সারসংক্ষেপ আদালতে পড়ে শোনান। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে দেখা যায়, তা ১১৬৮ পৃষ্ঠার।
রায়ে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের হাতে সোমবারই রায়ের সত্যায়িত কপি তুলে দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকেও রায়ের কপি দেওয়া হয়।
বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, খালেদা জিয়াকে বেশি দিন বন্দি রাখতেই রায়ের অনুলিপি দিতে দেরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বলছিলেন, রায়ের অনুলিপি পেতে বিএনপি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারকের কাছে আবেদন জানাতে দেরি করেছে।
রায়ের ১১ দিন পর সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়ে সোমবার রাতে খালেদার আইনজীবীরা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ধানমণ্ডির চেম্বারে জরুরি বৈঠকে বসেন। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে দুই দফা বৈঠক করেন তারা।
বিএনপিনেত্রীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সকালে প্রথম দফা বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তার মধ্যে যে যে কথাগুলো এসেছে, আমরা মনে করি সাক্ষ্য-প্রমাণ, কাগজপত্রের সঙ্গে তার মিল নেই; এবং সেগুলো অসত্য।”
দ্বিতীয় দফা বৈঠক চলার মধ্যেই ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাই কোর্টের সংশ্লিট শাখায় গিয়ে আপিল আবেদন জমা দেন।
হাই কোর্টের কোন বেঞ্চে এই আপিল শুনানির জন্য তোলা হবে তা নিয়েও খালেদার আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা হয়।
বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী বলেন, “খুব সম্ভবত বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চে আপিল শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হতে পারে।”