ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজার পীরগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রিরুদ্ধে এবার শিক্ষকদের ১২ দফা অভিযোগ

‘যারা দুই নীতি মানে না তারা হাফ রাজাকার’

আজম রেহমান,সারাদিন ডেস্ক:   বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়। এটা মূর্ত চার রাষ্ট্রীয় মূল নীতিতে তৈরি। এ চার মূল নীতি যারা মানে না তারা রাজাকার। আর যারা দুই নীতি মানে আর দুই নীতি মানে না তারা হাফ রাজাকার। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই সবটা মিলে হল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এটার কোনো একটি পেছনে ফেলে আগানোর চিন্তা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। কাজেই আমাদের ভিশন হবে ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়ন করা। এটা অগ্রসর হোক এটাই আমরা চাই। তা না হলে বর্তমানে দেশ যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।
মানবজমিন এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের মালিক একভাগ মানুষ। আর বাকী এক শতাংশ সম্পদ ৯৯ শতাংশ মানুষের হাতে। এখন একই দেশের মধ্যে দুটি দেশ হয়ে গেছে। এক শতাংশ কায়েমি স্বার্থবাধী ও লুটেরাদের হাত থেকে ৯৯ শতাংশ মানুষের ন্যায্য হিস্যা আদায় করার জন্য আন্দোলন করতে হবে। সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপির অত্যাচারে দেশবাসী এখন বিপর্যস্ত। দিনদিন দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা পুরোটাই গরীব মানুষকে বঞ্চিত করে। মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ উন্নয়নের প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে। আর শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ উন্নয়নের ছিটেফোটা পাচ্ছে সামান্য। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘিষ্ট মানুষ বেশিরভাগ সম্পদ ভোগ করতো। বাংলাদেশ ছিল সংখ্যাগরিষ্ট তবুও তারা পেত সামান্য সম্পদ। পাকিস্তানের হাত থেকে ন্যয্য হিস্যার জন্য যেমন বাঙালী সংগ্রাম করেছিল বর্তমানে তেমনি আন্দোলন করতে হবে। এ হিস্যার প্রশ্নটা বঙ্গবন্ধু নিজেই উত্থাপন করে গেছেন। এটা করতে হলে বর্তমান রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে একটি বামপন্থী গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের সমস্ত ফসল যদি নির্দিষ্ট অল্পকিছু জায়গায় চলে যায় তাহলে বাংলাদেশকে অতি ধনী দেশ বলে মনে হবে। যার ফলে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ থাকবে বঞ্চিত। আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র এটা মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এ ধরনের কথা বলা মানে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। এর পেছনে ছুরিকাঘাত করা। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা তুলে ধরে এ বাম নেতা বলেন, রাস্তা তৈরি হবে, বিল্ডিং তৈরি হবে। তবে রডের বদলে ব্যবহার করবে বাঁশ। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে না। কৃষক ধান উৎপাদনে খরচ করেছে হাজার টাকা আর সরকার ফসলের দাম ঠিক করেছে ১ হাজার ৪০ টাকা। সে বিক্রি করছে ৪শ টাকায়।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোনো দলের বিষয় ছিল না। তেমনি বর্তমানে যে খারাপ সময় চলছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্ত জনশক্তিকে একত্রে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। চূড়ান্ত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের নব পর্যায়ের সংগ্রাম আরো জোরদার করতে হবে। এবং জনগণকেই সেটা করতে হবে। আমরা সামনে থাকবো ঠিকই কিন্তু দেশের জনগনকে বুঝতে হবে ‘জমি বর্গা দেয়া যায়, কিন্তু স্বার্থ কোনো দিন বর্গা দেয়া যায় না’। আমরা জনগণকে সেই উপলব্ধির ভেতরে এনে তাদেরকে সচেতন এবং সংগঠিত করতে চেষ্টা করে যাব।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। এটা দুই দলের ভেতরের মধ্যে কোন্দলের ধারাবাহিকতা। এমনকি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও হানাহানি হয়। মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এসবটাই কোনো আদর্শগত জায়গা থেকে নয় বরং এটা লুটপাটের ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্ধের কারণে। লুটপাটে কে ভাগ বেশি নিবে কে কম নিবে এটা হলো মূল বিষয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অনেকে বলে উন্নয়ন আগে, পরে গণতন্ত্র। এটা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানও বলেছিল। এবং তারা উন্নয়নের এক দশক পালন করেছিল। এবং মুসলিম লীগ প্রস্তাব দিয়েছিল যে আইয়ুব খানকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করতে সংবিধান পরিবর্তন করা হোক। তখন বছরব্যাপী উন্নয়নের এক দশক শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যেই আইয়ুব খানের পতন হয়।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান

‘যারা দুই নীতি মানে না তারা হাফ রাজাকার’

আপডেট টাইম ০২:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০১৯

আজম রেহমান,সারাদিন ডেস্ক:   বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়। এটা মূর্ত চার রাষ্ট্রীয় মূল নীতিতে তৈরি। এ চার মূল নীতি যারা মানে না তারা রাজাকার। আর যারা দুই নীতি মানে আর দুই নীতি মানে না তারা হাফ রাজাকার। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই সবটা মিলে হল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এটার কোনো একটি পেছনে ফেলে আগানোর চিন্তা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। কাজেই আমাদের ভিশন হবে ‘মুক্তিযুদ্ধ ৭১’ বাস্তবায়ন করা। এটা অগ্রসর হোক এটাই আমরা চাই। তা না হলে বর্তমানে দেশ যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।
মানবজমিন এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ সম্পদের মালিক একভাগ মানুষ। আর বাকী এক শতাংশ সম্পদ ৯৯ শতাংশ মানুষের হাতে। এখন একই দেশের মধ্যে দুটি দেশ হয়ে গেছে। এক শতাংশ কায়েমি স্বার্থবাধী ও লুটেরাদের হাত থেকে ৯৯ শতাংশ মানুষের ন্যায্য হিস্যা আদায় করার জন্য আন্দোলন করতে হবে। সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপির অত্যাচারে দেশবাসী এখন বিপর্যস্ত। দিনদিন দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা পুরোটাই গরীব মানুষকে বঞ্চিত করে। মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ উন্নয়নের প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে। আর শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ উন্নয়নের ছিটেফোটা পাচ্ছে সামান্য। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘিষ্ট মানুষ বেশিরভাগ সম্পদ ভোগ করতো। বাংলাদেশ ছিল সংখ্যাগরিষ্ট তবুও তারা পেত সামান্য সম্পদ। পাকিস্তানের হাত থেকে ন্যয্য হিস্যার জন্য যেমন বাঙালী সংগ্রাম করেছিল বর্তমানে তেমনি আন্দোলন করতে হবে। এ হিস্যার প্রশ্নটা বঙ্গবন্ধু নিজেই উত্থাপন করে গেছেন। এটা করতে হলে বর্তমান রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে একটি বামপন্থী গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের সমস্ত ফসল যদি নির্দিষ্ট অল্পকিছু জায়গায় চলে যায় তাহলে বাংলাদেশকে অতি ধনী দেশ বলে মনে হবে। যার ফলে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ থাকবে বঞ্চিত। আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র এটা মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এ ধরনের কথা বলা মানে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। এর পেছনে ছুরিকাঘাত করা। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা তুলে ধরে এ বাম নেতা বলেন, রাস্তা তৈরি হবে, বিল্ডিং তৈরি হবে। তবে রডের বদলে ব্যবহার করবে বাঁশ। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে না। কৃষক ধান উৎপাদনে খরচ করেছে হাজার টাকা আর সরকার ফসলের দাম ঠিক করেছে ১ হাজার ৪০ টাকা। সে বিক্রি করছে ৪শ টাকায়।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোনো দলের বিষয় ছিল না। তেমনি বর্তমানে যে খারাপ সময় চলছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্ত জনশক্তিকে একত্রে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। চূড়ান্ত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের নব পর্যায়ের সংগ্রাম আরো জোরদার করতে হবে। এবং জনগণকেই সেটা করতে হবে। আমরা সামনে থাকবো ঠিকই কিন্তু দেশের জনগনকে বুঝতে হবে ‘জমি বর্গা দেয়া যায়, কিন্তু স্বার্থ কোনো দিন বর্গা দেয়া যায় না’। আমরা জনগণকে সেই উপলব্ধির ভেতরে এনে তাদেরকে সচেতন এবং সংগঠিত করতে চেষ্টা করে যাব।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। এটা দুই দলের ভেতরের মধ্যে কোন্দলের ধারাবাহিকতা। এমনকি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও হানাহানি হয়। মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এসবটাই কোনো আদর্শগত জায়গা থেকে নয় বরং এটা লুটপাটের ভাগভাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্ধের কারণে। লুটপাটে কে ভাগ বেশি নিবে কে কম নিবে এটা হলো মূল বিষয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অনেকে বলে উন্নয়ন আগে, পরে গণতন্ত্র। এটা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানও বলেছিল। এবং তারা উন্নয়নের এক দশক পালন করেছিল। এবং মুসলিম লীগ প্রস্তাব দিয়েছিল যে আইয়ুব খানকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করতে সংবিধান পরিবর্তন করা হোক। তখন বছরব্যাপী উন্নয়নের এক দশক শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যেই আইয়ুব খানের পতন হয়।