ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজার পীরগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রিরুদ্ধে এবার শিক্ষকদের ১২ দফা অভিযোগ

হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজার

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ইতোমধ্যে তার নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসাথে তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগও চলছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত নিজ দেশে ভারত-বিরোধী ‘রাজনৈতিক ভাষ্য’ তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছে দিল্লি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো করা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গ্যালারিকে বার্তা দিতে। রেডকর্নার নোটিস দিলেই যে ভারত থরহরি কম্প হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, এমন বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা আদৌ নেই। বরং এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথাই ঢাকাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কূটনীতিকেরা। দেশের অর্থনীতিকে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ভারতের সঙ্গে বাস্তবোচিত সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। নয়াদিল্লির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর নীতি নিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সুরাহা হবে না।

সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, আপাতত বিদ্যুৎ বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বকেয়া ৮৪.৬ কোটি ডলার পরিশোধ না করায় চলতি মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় দেশকে আঁধারে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৭.৩ কোটি ডলারের একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট জারি করেছে। অর্থাৎ, বকেয়ার কিছু অংশ মেটাতে পেরেছে। এখনো অনেকটাই বাকি। কিন্তু শুধু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই নয়, অন্য অনেক অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বড় পুঁজির প্রকল্পে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ঢাকা, যা গত কয়েক দশকে সে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

গত কয়েক বছরে ভারত প্রায় ৮০০ কোটি ডলার নামমাত্র সুদে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া অনুদান দিয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেল, সেচ, নৌ বন্দরের মতো ক্ষেত্র। ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারত-নির্ভরতা যথেষ্ট।

সাউথ ব্লকের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি অয়েল ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড যৌথ মঞ্চ তৈরি করে সে দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় তেল নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা নিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পাইপলাইনে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাইস্পিড ডিজেল পরিবহণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার মতো প্রতি বছর লেগে থাকা সঙ্কটে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশের অর্থনীতি।

সূত্রের বক্তব্য, এই ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামলাতে খুবই জরুরি এখন। শেখ হাসিনার সময়েই বৈদেশিক ঋণের পাহাড় জমেছে। সর্বশেষ পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী জাপানের কাছ থেকে ৯২১ কোটি ডলার, রাশিয়ার থেকে ৫০৯ কোটি, চিনের থেকে ৪৭৬ কোটি এবং ভারতের থেকে ১০২ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের। বাস্তবে ঋণ আরও বেশি।

দিল্লির মতে, এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং ভারতের সহায়তা নিয়েই অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করা লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউনূস সরকারের।

উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ের ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে এই সরকারকে। পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে যা সামাজিক ভাবে নৈরাজ্যের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান

হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজার

আপডেট টাইম ০৪:০৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ইতোমধ্যে তার নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসাথে তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগও চলছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত নিজ দেশে ভারত-বিরোধী ‘রাজনৈতিক ভাষ্য’ তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছে দিল্লি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এগুলো করা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গ্যালারিকে বার্তা দিতে। রেডকর্নার নোটিস দিলেই যে ভারত থরহরি কম্প হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, এমন বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা আদৌ নেই। বরং এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই কথাই ঢাকাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন কূটনীতিকেরা। দেশের অর্থনীতিকে কোণঠাসা অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ভারতের সঙ্গে বাস্তবোচিত সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। নয়াদিল্লির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর নীতি নিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সুরাহা হবে না।

সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, আপাতত বিদ্যুৎ বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বকেয়া ৮৪.৬ কোটি ডলার পরিশোধ না করায় চলতি মাসের প্রথম থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় দেশকে আঁধারে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৭.৩ কোটি ডলারের একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট জারি করেছে। অর্থাৎ, বকেয়ার কিছু অংশ মেটাতে পেরেছে। এখনো অনেকটাই বাকি। কিন্তু শুধু বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই নয়, অন্য অনেক অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বড় পুঁজির প্রকল্পে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ঢাকা, যা গত কয়েক দশকে সে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

গত কয়েক বছরে ভারত প্রায় ৮০০ কোটি ডলার নামমাত্র সুদে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া অনুদান দিয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে। যার মধ্যে রয়েছে সড়ক, রেল, সেচ, নৌ বন্দরের মতো ক্ষেত্র। ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ভারত-নির্ভরতা যথেষ্ট।

সাউথ ব্লকের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি অয়েল ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড যৌথ মঞ্চ তৈরি করে সে দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় তেল নিষ্কাশনে বড় ভূমিকা নিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পাইপলাইনে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাইস্পিড ডিজেল পরিবহণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, শক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার মতো প্রতি বছর লেগে থাকা সঙ্কটে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশের অর্থনীতি।

সূত্রের বক্তব্য, এই ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সামলাতে খুবই জরুরি এখন। শেখ হাসিনার সময়েই বৈদেশিক ঋণের পাহাড় জমেছে। সর্বশেষ পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী জাপানের কাছ থেকে ৯২১ কোটি ডলার, রাশিয়ার থেকে ৫০৯ কোটি, চিনের থেকে ৪৭৬ কোটি এবং ভারতের থেকে ১০২ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের। বাস্তবে ঋণ আরও বেশি।

দিল্লির মতে, এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং ভারতের সহায়তা নিয়েই অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করা লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউনূস সরকারের।

উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫৬৩ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ের ঋণের কিস্তি শোধ করতে হবে এই সরকারকে। পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে যা সামাজিক ভাবে নৈরাজ্যের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।