এ বিষয়ে উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, ‘বর্তমানে কতজন নেতাকর্মী আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করেছেন সেই হিসাব তৃণমূল পর্যায়ে করা হচ্ছে। এসব তালিকা দিলে কেন্দ্রীয়ভাবে হিসেব করে বলা যাবে।’
সায়েম খান বলেন, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৫২২ জন নেতাকর্মী করোনায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ওই তালিকা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়েছিল। এরপর আর কোন তালিকা করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে এমপি, মন্ত্রীসহ সিনিয়র নেতারাও আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কেউ হাসপাতালে কেউ নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক দপ্তর থেকে কোন কার্যক্রম পালন করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. রোকেয়া সুলতানা আরো বলেন, নেতাকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিশেষ সর্তকতা পালনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এরপরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা আক্রান্ত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।
সংসদ সদস্যাদের মধ্যে বর্তমানে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম-১২ আসনের এমপি ও সরকার দলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর-৫ আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুর-৪ আসনের এমপি বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি অসীম কুমার উকিল, রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম, কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি শাহীন আক্তার, কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী।
এছাড়াও নোয়াখালী-৩ আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজির আহমেদ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম, বগুড়া-৭ আসনের এমপি রেজাউল করিম বাবলু, বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, শিরীন আহমেদ, নাহিদ ইজহার খান, জান্নাতুল বাকিয়া, অ্যারোমা দত্ত, রওশন আরা মান্নান।
গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল করোনায় প্রথম মৃত্যু খবর দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁ-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং প্রথম করোনা আক্রান্ত হন।
এখন পর্যন্ত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ কায়েস, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী মকবুল, সিলেটের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান করোনায় মারা গেছেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, করোনার শুরু থেকেই প্রশাসনের সাথে থেকে মাঠে দিনরাত কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলের নির্দেশে তারা মাঠে থেকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। এতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়েই নেতাকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।