বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ যেকোনো দলের প্রচারে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট) তাদের প্রচার চালাক। যত দল আছে, তারা নির্বিঘ্নে প্রচার চালাবে। দয়া করে কেউ এতে কোনো বাধা দিবেন না। জনগণের জোয়ার আমাদের পক্ষে। কাজেই আমরা এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ আমরাই জয়ী হব।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা ও পঞ্চগড়ে নির্বাচনী জনসভায় দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা নিজ দলের নেতাকর্মীদের এ নির্দেশনা দেন।
এ সময় সুধাসদন থেকে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ আসনেও টেলিফোনে বক্তব্য রাখেন নৌকার প্রার্থী শেখ হাসিনা।
ভোটাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সকাল সকাল গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। কেউ যেন আমাদের ভোট কেড়ে নিতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।’
নেতাকর্মীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সবাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চলবেন। এই জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসীদের কোনো বিশ্বাস নাই। এরা (বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট ঐক্যফ্রন্ট) যেহেতু জানে তারা নির্বাচনে জয়ী হবে না। তারা হেরে যাবে। তাই হেরে যাওয়ার প্রাক্কালে যেকোনো রকমের ছোবল মারতে পারে। সেদিকে আপনারা সজাগ থাকবেন।’
বিএনপি-জামায়াত দ্বারা আওয়ামী লীগ আক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের হামলায় ৪৪১ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ১৭০টা অফিস-বাড়িঘর তারা ভাংচুর করেছে, ৫৪টা স্থানে বোমা হামলা করেছে। পেট্রলবোমা হামলাও চালানো হয়েছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের এই চরিত্রটা বদলাতে হবে। কারণ, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষ কখনো পছন্দ করে না। কখনো পছন্দ করবে না। সারা বাংলাদেশের সকলকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজ যদি কেউ করতে আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে তাদের তুলে দিতে হবে।’
ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে যাতে তারা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। কারণ, ওদের চরিত্র বদলায় নাই। ওরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। নৌকা মার্কা উন্নয়ন দেবে, সমৃদ্ধি দেবে। এরা ধানের শীষে ভোট চায়। এদের কোনো মতো ভোট দেয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এদের চরিত্রটাই হচ্ছে- সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, এতিমের টাকা আত্মসাৎ থেকে শুরু করে নানা রকম অপকর্ম করা। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ তে এরা অগ্নিসন্ত্রাস করে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। এরা করেনি এমন কোনো কাজ নেই। তারা ধ্বংস করতে জানে। তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। এরা শুধু মানুষের ক্ষতি করতে জানে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক মুক্ত রেখে দেশের মানুষকে শান্তি, নিরাপত্তা দিতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযান, তা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।’
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। এই নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে। অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সবার অংশগ্রহণে এই নির্বাচন অর্থবহ হবে।’
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আমরা আবার সরকার গঠন করে জনগণের সেবা করতে সক্ষম হব।’