নিজস্ব প্রতিবেদক::স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। এ ছাড়া পত্রপত্রিকাতেও এ নিয়ে লেখা হয়েছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয় প্রধান প্রকৌশলীর ব্যাপারে তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সব ধরনের অনিয়মের তদন্ত হবে। তদন্তে সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এলজিইডিতেও এর ব্যত্যয় হবে না।’
এলজিইডি প্রধানের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সময় বিএনপিপন্থী আবুল কালাম আজাদের মতো ব্যক্তি কী করে এত দিন এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানের পদে থাকেন, তা নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক জানান, এলজিইডি প্রধান আবুল কালাম আজাদের সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত হবে। তিনি বলেন, ‘তাকে ডেকেছিলাম। তার শেষ সময়ে এসে এভাবে ঢালাও পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ জমা পড়েছে, পত্রিকায় যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। এলজিইডির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের মেয়াদকালে বিভিন্ন প্রকল্পের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই পাবনা ও রাজশাহীর। তাদের প্রায় সবার ব্যাপারেই বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ ছিল।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) কাজী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয় দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলেই এলজিইডি প্রধানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আজ এলজিইডি-প্রধান অবসরে যাচ্ছেন। অবসরে যাওয়ার পর তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘অবসরে গেলে সমস্যা নেই। তিনি তো দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন না। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিদায়ী সংবর্ধনার জন্যও ব্যয় লাখ লাখ টাকা
আজ অবসরে যাচ্ছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে তার বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনেও লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন প্রধান প্রকৌশলী। তাকে দেওয়ার জন্য সম্মাননা স্মারকটিও (ক্রেস্ট) তিনি পছন্দ করে কিনে দিয়েছেন। এ ছাড়া অপ্রয়োজনে ব্যয় করা হচ্ছে অর্থ।
শেষ সময়ে ঢালাও পদোন্নতি ও পদায়ন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম ভাঙা, বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক পদে বসানো, পাবনা ও রাজশাহীর বিএনপির নেতাকর্মীকে এলজিইডিতে পুনর্বাসনের ঘটনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে বঞ্চিত হয়েছেন এলজিইডির দক্ষ কর্মকর্তারা। চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরও চড়াও হয়েছেন এই কর্মকর্তা, যা নিয়ে এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে আছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।