নিজস্ব প্রতিবেদক::স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি প্রকল্পের উপ-পরিচালক (ডিপিডি) ইয়াজদানি। চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বন বিভাগে। ক্রয় বিভাগের বিশেষজ্ঞ হয়ে।
সহকর্মীরা বলছেন, যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ায় এলজিইডি থেকে বিদায় নিচ্ছেন ইয়াজদানি। সাধারণত ডিপিডি থেকে প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরিতে কনিষ্ঠরা ওই পদে গেলেও তিনি পিছিয়ে পড়েছেন।
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, ইয়াজদানির মতো এমন অনেক উপ-পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলী যথাযথ মূল্যায়ন বঞ্চিত হয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের অনিয়মের কারণে। অনিয়মের রেকর্ড গড়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান এই কর্মকর্তা। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যে নিয়ম ভাঙেননি তিনি।
আজাদের সময়ে প্রকল্পগুলোতে পরিচালক ও উপ-পরিচালক নিয়োগে মানা হয়নি জ্যেষ্ঠতা। প্রাধান্য পেয়েছে ব্যক্তিসম্পর্ক। প্রধান প্রকৌশলীর রাজনৈতিক মতাদর্শের সহমত পোষণকারী বিএনপি-জামায়াতপন্থীরাই বসেছেন লোভনীয় পদে।
এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে যেখানে পরিচালকের চেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জ্যেষ্ঠ, যাকে চাকরিতে তার কনিষ্ঠের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও অস্বস্তি রয়েছে।
এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলী তার সময়ে গোপনে গোপনে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে এলজিইডিতে নিজের পছন্দের লোকদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের মাধ্যমেই আবুল কালাম আজাদ এলজিইডিতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলজিইডিতে পদোন্নতি ও পদায়নে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কাজ করছেন। এলজিইডিতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।’
এলজিইডির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ কারো নেই। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন প্রধান প্রকৌশলী।
আগামী ৮ মে প্রধান প্রকৌশলীর অবসরে যাওয়ার কথা। তবে তিনি তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আবুল কালাম আজাদ শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে এসব পদোন্নতি ও পদায়ন দিচ্ছেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে তার ঘনিষ্ঠদের সংখ্যাই বেশি। যারা বিভিন্ন সময় তার অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন।
তবে এখন আবুল কালাম আজাদ তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন। তবে তাকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে অস্বস্তি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এলজিইডির বিভিন্ন কার্যক্রমের গতি কমেছে। অস্বস্তি ও অসন্তোষ ছড়িয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তৃণমূলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান প্রকৌশলী বড় বড় প্রকল্পের অর্থ ছাড় করেননি। বর্তমান সরকারের আবার ক্ষমতায় আসা নিয়ে তিনি সন্দিহান ছিলেন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় না এলে বড় বড় প্রকল্পগুলো মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা থেকে তিনি এসব করেছিলেন বলে মনে করেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ থেকেও বর্তমান সরকারের প্রতি তার আনুগত্যহীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
গত ২১ এপ্রিল একসঙ্গে ২৮ জন সহকারী প্রকৌশলীকে জ্যেষ্ঠতা দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) পদায়ন করেছেন আবুল কালাম আজাদ। একসঙ্গে এত পদোন্নতি ও পদায়নের নজির অতীতে ছিল না। এসব পদায়নে লেনদেনের অভিযোগ আছে। সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি পদোন্নতিতে লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) শরীফ উদ্দিন ২৮ জন নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) পদায়নের বিষয়টি স্বীকার করেন।
কেন এসব প্রজ্ঞাপন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘২৮ জনের অর্ডার আলাদা আলাদা হয়েছে। এতগুলো একসঙ্গে ওয়েবসাইটে আপ করা সম্ভব হয়নি।’