ঢাকা ০১:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক পীরগঞ্জে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ভ্যান চালকের চালকের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা ঠাকুরগাঁও জেলা আ.লীগের সভাপতি হলেন বাবলু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ জায়া’রা ভিক্ষাবৃত্তি করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে ৬ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার পীরগঞ্জে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় র‌্যালী পীরগঞ্জে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা ছাদে অবৈধ রেস্তোরাঁ, সিলিন্ডারে লিকেজ: ল্যাবএইড হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা, ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমল মজুতদারি-কালোবাজারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে সিআইডির ১২ টিম

বদলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক আর ফসলি জমি

আজম রেহমান,সারাদিন ডেস্ক: : ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি, কৃষক আর ফসল চাষে এসেছে পরিবর্তন। এক সময়ের ধান, পাট আর আখের জেলা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি থাকলেও এখন সে পরিচয় অনেকটাই ¤øান হয়ে পড়েছে। ধান, পাট আর আখের জায়গা দখলে নিচ্ছে আম, লিচু, চা এবং বিভিন্ন সবজি। ক্ষুদ্র কৃষক আর প্রান্তিক চাষির হাত থেকে জমি চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ী আর বিভিন্ন পেশাজীবীর হাতে। এমন অবস্থায় জেলার কৃষি বিভাগের কর্তারা বলছেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। খুব দ্রুতই মানুষ ফল বাগান থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার ধান চাষে ফিরবে।

সরকারি হিসেব মতে, কৃষকের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১০ জন। সব মিলিয়ে কৃষি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৪১ হেক্টর। জেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন। এ তথ্যের বাইরে জেলায় কি পরিমাণ জমি গত পাঁচ বছরে ধান চাষ থেকে ফলের বাগানে পরিণত হয়েছে সে তথ্য কারো কাছে নেই। জেলার অনেক ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিই তাদের জমির উৎপাদিত ধানের উপযুক্ত দাম না পেয়ে ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে তারা হয় জমি বিক্রি করে দিয়েছেন, নয়তো চুক্তিতে কারো কাছে লিজ দিয়েছেন। এভাবে জমির হাত বদল হয়ে তা চলে গেছে ধনি ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও বিভিন্ন কোম্পানির হাতে। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে আ¤্রপালি আমবাগান। কোথাও আবার লিচু বাগান। ধানি জমিতে পুকুরও কাটছেন অনেকে।

সরেজমিন জেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত শিঙ্গিয়া, নারগুন, কহরপাড়া, খোঁচাবাড়ী, রুহিয়া রোড, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, উত্তরা, রহিমানপুর ও রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ এলাকা ঘুরে শত শত আম, লিচু এবং বিভিন্ন সবজি বাগান চোখে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চা বাগান তৈরিতেও অনেকে এগিয়ে আসছেন। অনেক ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে হাস্কিং মিল। আর সবকিছু ছাড়িয়ে জেলা সদরের সন্নিকটে খোঁচাবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে কি পরিমাণ জমি ধান, পাট চাষ বাদ দিয়ে ফলের বাগান গড়ে উঠেছে কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার সঠিক তথ্য কৃষি বিভাগের হাতে নেই। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। কেউ কেউ ফলের বাগান করছেন বটে। কিন্তু লাভের মুখ না দেখায় ফলের বাগান কেটেও ফেলছেন। তিনি আরো জানান, অনেকে ফলের বাগান করলেও একই জমিতে ধান এবং অন্য ফসলের আবাদও করছেন।

একজন তরুণ উদ্যোক্তার মতে, কৃষক বছরের পর বছর ধানের দাম পাচ্ছেন না। তিনি নিজেও ধানের দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে ১০ বিঘা জমিতে আ¤্রপালি জাতের আমবাগান করেছেন। আমের মুকুল আসার আগেই বাগান বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। ফলে বাগান নিয়ে বাড়তি কোনো ভেজাল করতে হয় না। জেলার পীরগঞ্জ এলাকার অপর একজন উদ্যোক্তা তরুণ শতাধিক বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম এবং লিচুর আবাদ করেছেন। তিনি নিজেই পরিচর্যা করেন এবং বাগান থেকেই চাহিদা মাফিক গ্রাহকদের কাছে ফল কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন।

ক্রমাগত জমির হাতবদল হয়ে পেশাজীবী, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়া, প্রধান ফসল ধানের পরিবর্তে ফলের বাগান বৃদ্ধি পাওয়া, ফসলি জমিতে শিল্প-কারখানাসহ ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে জেলার কৃষি ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করে সুশীল সমাজ।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

পীরগঞ্জে টার্পেন্টাডল ট্যাবলেট সহ ২ মাদক ব্যবসায়ী আটক

বদলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক আর ফসলি জমি

আপডেট টাইম ১২:৫৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯

আজম রেহমান,সারাদিন ডেস্ক: : ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি, কৃষক আর ফসল চাষে এসেছে পরিবর্তন। এক সময়ের ধান, পাট আর আখের জেলা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি থাকলেও এখন সে পরিচয় অনেকটাই ¤øান হয়ে পড়েছে। ধান, পাট আর আখের জায়গা দখলে নিচ্ছে আম, লিচু, চা এবং বিভিন্ন সবজি। ক্ষুদ্র কৃষক আর প্রান্তিক চাষির হাত থেকে জমি চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ী আর বিভিন্ন পেশাজীবীর হাতে। এমন অবস্থায় জেলার কৃষি বিভাগের কর্তারা বলছেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। খুব দ্রুতই মানুষ ফল বাগান থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার ধান চাষে ফিরবে।

সরকারি হিসেব মতে, কৃষকের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১০ জন। সব মিলিয়ে কৃষি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৪১ হেক্টর। জেলায় ইরি-বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন। এ তথ্যের বাইরে জেলায় কি পরিমাণ জমি গত পাঁচ বছরে ধান চাষ থেকে ফলের বাগানে পরিণত হয়েছে সে তথ্য কারো কাছে নেই। জেলার অনেক ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিই তাদের জমির উৎপাদিত ধানের উপযুক্ত দাম না পেয়ে ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এতে করে তারা হয় জমি বিক্রি করে দিয়েছেন, নয়তো চুক্তিতে কারো কাছে লিজ দিয়েছেন। এভাবে জমির হাত বদল হয়ে তা চলে গেছে ধনি ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও বিভিন্ন কোম্পানির হাতে। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে আ¤্রপালি আমবাগান। কোথাও আবার লিচু বাগান। ধানি জমিতে পুকুরও কাটছেন অনেকে।

সরেজমিন জেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত শিঙ্গিয়া, নারগুন, কহরপাড়া, খোঁচাবাড়ী, রুহিয়া রোড, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, উত্তরা, রহিমানপুর ও রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ এলাকা ঘুরে শত শত আম, লিচু এবং বিভিন্ন সবজি বাগান চোখে পড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চা বাগান তৈরিতেও অনেকে এগিয়ে আসছেন। অনেক ফসলি জমিতেই গড়ে উঠেছে হাস্কিং মিল। আর সবকিছু ছাড়িয়ে জেলা সদরের সন্নিকটে খোঁচাবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে কি পরিমাণ জমি ধান, পাট চাষ বাদ দিয়ে ফলের বাগান গড়ে উঠেছে কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার সঠিক তথ্য কৃষি বিভাগের হাতে নেই। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। কেউ কেউ ফলের বাগান করছেন বটে। কিন্তু লাভের মুখ না দেখায় ফলের বাগান কেটেও ফেলছেন। তিনি আরো জানান, অনেকে ফলের বাগান করলেও একই জমিতে ধান এবং অন্য ফসলের আবাদও করছেন।

একজন তরুণ উদ্যোক্তার মতে, কৃষক বছরের পর বছর ধানের দাম পাচ্ছেন না। তিনি নিজেও ধানের দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে ১০ বিঘা জমিতে আ¤্রপালি জাতের আমবাগান করেছেন। আমের মুকুল আসার আগেই বাগান বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। ফলে বাগান নিয়ে বাড়তি কোনো ভেজাল করতে হয় না। জেলার পীরগঞ্জ এলাকার অপর একজন উদ্যোক্তা তরুণ শতাধিক বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম এবং লিচুর আবাদ করেছেন। তিনি নিজেই পরিচর্যা করেন এবং বাগান থেকেই চাহিদা মাফিক গ্রাহকদের কাছে ফল কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন।

ক্রমাগত জমির হাতবদল হয়ে পেশাজীবী, ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়া, প্রধান ফসল ধানের পরিবর্তে ফলের বাগান বৃদ্ধি পাওয়া, ফসলি জমিতে শিল্প-কারখানাসহ ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে জেলার কৃষি ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করে সুশীল সমাজ।