পীর হাবিবুর রহমান:: উজানে কেউ সাতড়াতে চায় না, স্রোতের সাথেই ভেসে যেতে বড় সুবিধা! কচুরিপানা খড়কুটো ময়লা কত কিছুও ভেসে যায়। স্রোতের সাথেই গা ভাসিয়েছে আজ সমাজের প্রায় সবাই।তাদের কাছে এটা যতো সস্তার অসম্মানের হোক তবু এরচেয়ে সুবিধাজনক আনন্দময় জীবন যে আর নেই। লোভ সস্তামি আর আদর্শহীনতা চরিত্রহীনতায়ই যে তাদের শুরু বিকাশ, জীবন।
আমাদের পূর্বসুরী একদল রাজনীতিবিদ ও মানুষ স্রোতে ভেসেছিলো, আইয়ুবখানের দালাল ইয়াহিয়ার দোসর হয়েছিলো,ইতিহাস তাদের আনন্দময় জীবন দেয়নি,ক্ষমতার দাসত্বের স্বাচ্ছন্দ্য তাদের স্হায়ী হয়নি।কলংক ও গ্লানিতে পরাজিত হতে হতে ইতিহাসের ভাগাড়ে।
আমাদের রাজনীতির মহাকাব্যের নায়করা তেজস্বী তারুন্যকে জাগিয়ে স্রোতের বিপরীতে সাতার কেটেছিলেন।আমাদের টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতোন এক মহান অসীম সাহসী বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগিয়ে স্বাধীকার স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।মৃত্যু ফাঁসির দড়ি ঝুলেছে,জেল জুলুম দমন পীড়ন ডালভাত করে দিয়ে উজানেই অদম্য গতিতে ছুটেছেন।বীর বাঙ্গালীও সাতাড়ে ভয় পায়নি।বৈরি হাওয়ায় দুর্গম পথ সাতড়ে জয়ী হয়েছে।
স্রোতের সাথে সেদিনের ভাসমান কাপুরুষদের পরাজিত করে, বীরত্বের সংগ্রামে যুদ্ধে রক্তে ভাসিয়ে উজান থেকেই জয়ী হয়ে এসেছেন।কি মহান আত্নত্যাগ ও আত্নর্যাদার সততার ইতিহাস আমাদের মাথাটা উচু করে রেখেছে।আমি সেই সাধারন মানুষ আমার ক্ষমতা না থাকলেও উজানে সাতার কাটার অদম্য গতি শক্তি ও অহমটাকেই ধরে পথ চলি।
ছেলেবেলা থেকেই আমার প্রথাভাঙ্গার পথ,উজানে সাতাড় কাটার চরিত্র নিয়ে বেড়ে ওঠা।৭৫পরবর্তী দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির কন্টকাকীর্ন পথ আমাদের অনিশ্চিত ছিলো।তবু আমরা লড়েছি,জেল খেটেছি তার আদর্শের সাধারন কর্মী হিসেবে।
সমাজে তখনো ভাঙ্গন প্রবল হয়নি,মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়নি,আদর্শের বাতি নিবু নিবু করেনি।অসৎরাই ছিলো অবহেলিত ঘৃনিত,আদর্শিক সৎ নির্লোভ মানুষরাই ছিলো উজ্জল,শ্রদ্ধার আসনে।আইডল।
দেখতে দেখতে কি যে হলো!সমাজটা লোভের অন্ধগলিতে প্রবেশ করে স্রোতে গা ভাসালো।রাজনীতি মানব কল্যানের নির্লোভ চরিত্রের আদর্শিক পথ থেকে ছিটকে পরলো।রাজনীতি হলো অর্থ বিত্ত বানাবার দুর্নীতির কলংকের প্রশস্ত পথে ভোগ বিলাসের বাহন।নষ্ট রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হলো রাজনীতি।
সমাজে চরম অস্হিরতা তৈরি হলো।যেনতেন উপায়ে অঢেল টাকা,গাড়ি বাড়ি,বিদেশে সম্পদ এক কথায় সর্বাগ্রাসী দুর্নীতির আগ্রাসনে রাজদূর্নীতির স্বর্নযুগে সবাই স্রোতে গা ভাসালো।সব পেশাই আক্রান্ত হলো। দুর্নীবাজ বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানদের তোষামোদীর সংস্কৃতিও সমাজকে বিষাক্ত করে দিলো।
সৎ নির্লোভ আদর্শিক গুনী আত্নমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ববানরা উপেক্ষিত হলো।আর সস্তা বিকৃত ব্যক্তিত্বহীনরা স্রোতে ভাসা সুবিধাবাদীদের মধ্যমনি হলো।যে কেউ নেতা এমপি মন্ত্রী হতে চায়।যে কেউ ব্যবসা বানিজ্য ছাড়া টাকাওয়ালা হতে চায়।ক্ষমতান হতে চায়,নয় তাদের করুনার দাস দাসী।সমাজ আজব স্রোতে গা ভাসিয়েছে!
একদা প্রানবন্ত সামাজিক আড্ডাবাজ ছিলাম।অদম্য গতিতে ছুটেছি।গত পাচ বছরে নিজেকে গুটিয়ে এনেছি অনেক।বেশ্যা আর বেশ্যার দালাল,নষ্ট চোর লোভীদের দাপট যে সমাজে সেখানে নিজের আত্নমর্যাদা অহম নিয়ে যতোটা একা থাকা যায় ততোটাই থাকতে শিখেছি।এটা আমার অহংকার।বুঝিনা সমাজে যারতার সবার অঢেল অর্থ হতে হবে কেনো?সবার ক্ষমতা যারতার গানম্যান থাকতে হতে হবে কেনো?পশ্চিমা উন্নত দেশেওতো সবার টাকা নাই।অঢেল সম্পদ নাই।এখানে ব্যাবসা বানিজ্য ছাড়া ৫/১০বছরে রাজনৈতিক ক্ষমতার সুবাদে দুর্নীতিতে হতে হবে কেনো!
বিষাদ ছুয়ে যাক মন,ইনসমনিয়া কেড়ে নিক রাতের পর রাত জীবনের ঘুম।বিশ্বাসে সরলতায় প্রতারিত হই, ঠকে যাই,বিশ্বাসঘাতকতার বেইমানির শিকার হই!দহনে ক্ষয়ে যাক হৃদয়। জাতির পিতার খুনীর আত্নীয়দের চাটুকার,হানাদার বাহিনীর দোসরদের দালাল,ক্যাসিনো বাজিকর ও ছাতা বদলানো রাজনীতির জুয়াড়ি এবং ক্ষমতা ও অর্থের প্রতি সীমাহীন লোভী অযোগ্য দাসদাসীরা, আর রাজনীতির অভিশপ্ত দুর্নীতিবাজ ও তাদের চাকরবাকররা যতো নোংরা আক্রমন করার করুক।
এসবকে আমি গোনায় না ধরেই বেড়ে ওঠেছি।সস্তাদের সাথে চলার,স্রোতে গা ভাসিয়ে সুবিধা আদায়,স্বার্থের জন্য যারতার পায়ে নত হয়ে পড়ার আনন্দভোগীরা উল্লাস করুক।আমি তাদের কদর্য কুৎসিত চেহারা উপভোগ করি।মানুষেরাও দেখুক।
প্রেম মায়া মমতা আদর্শ মর্যাদা ব্যক্তিত্ব রুচি চরিত্র ওদের নাই থাক,আমার কি?আমি জেনেছি মানুষ নিয়ত একাকি,তবু আমি আমার আবেগ আমার নীতিবোধ আমার অহম কে বিসর্জন দেবোনা।আমি জানি সকল নষ্ট চরিত্রহীন স্রোতে গা ভাসানো সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজ ও তাদের অনুসারী লোভীদের পরাজয় নিশ্চিত।আদর্শিক সৎ মর্যাদাবান নীতিবান মানুষ যে মত পথেরই হোক মানুষের হৃদয়ে তারই আসন থাকবে।তারাই জয়ী হবে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন