ঢাকা ১০:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ নম্বর মহাবিপৎসঙ্কেত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মানুষ ॥ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুবলারচরে শুঁটকি পল্লীতে আঘাত

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের আঘাতে তছনছ করে দিয়েছে সুন্দরবনের দক্ষিণে অবস্থিত দুবলারচরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। গতকাল শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুপুর ১২টা থেকে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলেও শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করেছে। একই সাথে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট পানির উচ্চতা। সুন্দরবনের দুবলারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ আঘাত হানতে শুরু করে। দুবলার মাঝের চর থেকে জেলেরা মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ১০-১৫ মিনিটব্যাপী ঝড়োবাতাস বয়ে গেছে। দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের হিসাবরক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলারচরের জেলেপল্লীগুলো তছনছ করে দেয়। সিডরের মতোই বুলবুলের গতি প্রকৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। দুবলা ফিশার ম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ আলোরকোল থেকে মোবাইল ফোনে জানান, শনিবার ভোর থেকে অফিসকিল্লা, মাঝেরচর, আলোরকোল, মরণেরচর প্রভৃতি এলাকার অস্থায়ী জেলে ঘরে অবস্থানরত জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ কাজে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বন বিভাগ ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা এবং জেলেদের তরুণ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ এলাকার পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার এবং শত শত ট্রলার ও জেলে নৌকায় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। আলোরকোল, মেহেরআলীর খাল, ভেদাখালীর খাল ইত্যাদি খালে এ জেলেরা আশ্রয় নিয়েছে। জেলে পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের অনেকটা জোর করে নিরাপদে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে দেয়া হয়েছে শুকনা খাবার, চাল ভাজা, চিড়া ও খাবার পানি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম জানান, তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা জেলেদের সাইক্লোন শেল্টারে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। দুবলারচর এলাকার আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, মাঝেরকেল্লা, অফিসকিল্লা ও শেলারচরে যে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। তা ২২ বছর আগে নির্মিত হওয়ায় অনেকটা জরাজীর্ণ। সিডরের আঘাতে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী। তারপরও ঝুঁকির মধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক জেলেকে গতকাল শনিবার দুপুরের মধ্যে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে আনা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্নস্থানে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাম্মদ আয়েশা খাতুন শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

১০ নম্বর মহাবিপৎসঙ্কেত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মানুষ ॥ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুবলারচরে শুঁটকি পল্লীতে আঘাত

আপডেট টাইম ০৫:২৮:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০১৯

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশের আঘাতে তছনছ করে দিয়েছে সুন্দরবনের দক্ষিণে অবস্থিত দুবলারচরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। গতকাল শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুপুর ১২টা থেকে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলেও শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অংশে আঘাত হানতে শুরু করেছে। একই সাথে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট পানির উচ্চতা। সুন্দরবনের দুবলারচর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের অগ্রবর্তী অংশ আঘাত হানতে শুরু করে। দুবলার মাঝের চর থেকে জেলেরা মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ১০-১৫ মিনিটব্যাপী ঝড়োবাতাস বয়ে গেছে। দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের হিসাবরক্ষক ফরিদ আহমেদ জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে সিডর এভাবেই প্রথমে আঘাত হানে এবং বিকাল থেকে তা প্রায় ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে দুবলারচরের জেলেপল্লীগুলো তছনছ করে দেয়। সিডরের মতোই বুলবুলের গতি প্রকৃতি লক্ষ করা যাচ্ছে। দুবলা ফিশার ম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ আলোরকোল থেকে মোবাইল ফোনে জানান, শনিবার ভোর থেকে অফিসকিল্লা, মাঝেরচর, আলোরকোল, মরণেরচর প্রভৃতি এলাকার অস্থায়ী জেলে ঘরে অবস্থানরত জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ কাজে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বন বিভাগ ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা এবং জেলেদের তরুণ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ এলাকার পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার এবং শত শত ট্রলার ও জেলে নৌকায় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। আলোরকোল, মেহেরআলীর খাল, ভেদাখালীর খাল ইত্যাদি খালে এ জেলেরা আশ্রয় নিয়েছে। জেলে পল্লীগুলোর বাসিন্দাদের অনেকটা জোর করে নিরাপদে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গে দেয়া হয়েছে শুকনা খাবার, চাল ভাজা, চিড়া ও খাবার পানি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) দুবলারচর ভিএইচএফ স্টেশনের অপারেটর মো. কাশেম জানান, তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা জেলেদের সাইক্লোন শেল্টারে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। দুবলারচর এলাকার আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, মাঝেরকেল্লা, অফিসকিল্লা ও শেলারচরে যে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। তা ২২ বছর আগে নির্মিত হওয়ায় অনেকটা জরাজীর্ণ। সিডরের আঘাতে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী। তারপরও ঝুঁকির মধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক জেলেকে গতকাল শনিবার দুপুরের মধ্যে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে আনা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্নস্থানে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাম্মদ আয়েশা খাতুন শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।