ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেপথ্যেঃ বাড়ি ছাড়ার চাপ_ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ অফিসারের পরিবারের উপর নির্যাতনের অভিযোগ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ “ সদর থানার এসআই আমার সহকর্মী আজ ভোরে স্ট্রোকে মারা গেলে তাঁর লাশ প্রয়াত সহকর্মীর গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে এইমাত্র ফিরলাম থানায়, সারাদিন নানা রূদ্ধশ্বাস কাজে ব্যস্ত থাকি, বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করেনা।” কথাগুলো একজন পুলিশ অফিসারের যিনি সপরিবারে বাড়িওয়ালার অমানবিক গালাগালি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সপরিবারে নাজেহাল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। করোনা শুরু হলে এরকম নির্যাতন ও হয়রাণির স্বীকার হচ্ছেন বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী , পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে সাংবাদিকরাও।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি(অপারেশন) নাজমুল হক রোববার দুপুরে অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরগাঁও  পৌরসভার নরেশ চৌহানের সমাধির সামনে রতন নামের এক বাড়ি ওয়ালার দোতলা বাড়িতে ভাড়া ওঠেন প্রায় ৪ মাস হলো।প্রথম দিকে বাড়িওয়ালা ও তার সহধর্মিণী ভালো ব্যাবহার করলেও গত প্রায় দেড় মাস যাবত যা ইচ্ছে তাই ব্যাবহার করেন তার পরিবার।তাদের ভাবটা এমন যেন আপদ বিদায় হলেই বাঁচি।
এছাড়াও সেই বাসায় এর আগে কনেস্টবল আলমগীর ও এএসআই জসিম তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাদেরকেও নানা ভাবে হয়রানি করে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে করেছে বাড়ি মালিক।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘোষণা করেছেন ডাক্তার কিংবা পুলিশ অফিসার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবেনা, সেখানে প্রতিদিনই খারাপ ব্যবহারের শিকার হতে হয় এই পরিবারটিকে।
নাজমুল হক অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে গোসল করার পর তার স্ত্রী কাপড় শুকাতে গেলে  দেখে ছাদের দরজায় তালা মারা,কখনও খোলা থাকলে স্বয়ং বাড়িওয়ালা পুরুষ মানুষ হয়ে ছাদে বসে থাকে যেন মহিলা মানুষের অসুবিধা হয়।এছাড়া গতকাল এই পুলিশ অফিসারের  ছোট্ট ৫ বছরের শিশু মেয়ে নোভা বায়না ধরে ফুলের গাছ লাগাবে।নাজমুল তিনটি ফুলের টব নিয়ে ছাদে রেখে দেয় মেয়ের বায়না মেটাতে।এরপর থেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে নাজমুলের মেয়েকে আর পরিবার নিয়ে।এছাড়া ঘরের সামনে ময়লাও ফেলে রাখে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয় নাজমুল বাসায় না থাকলে।তার দুই সন্তানকে প্রায়ই মারতে যায় বাড়িওয়ালা ও তার স্ত্রী। অফিসারের স্ত্রী জাহানারা খাতুন নুপুর বলেন, প্রতিনিয়ত আমরা বাড়িয়ালার চিল্লাচিল্লি দুর্ব্যবহার আর নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
এমন কেন করছে বাড়িওয়ালা প্রশ্ন করলে নাজমুল বলেন,তারা চায় আমরা যেন বাড়ি ছেড়ে দেই।কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে কোথায় নতুন বাসা ভাড়া পাবো।নাজমুল আরও বলেন,দেশের এই ক্রান্তিকালে আমরা পুলিশ বাহিনী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।আমাদের যাই হোক মানুষ যেন ভালো থাকে।অথচ আমাদের পরিবারের সাথে যদি এমন ব্যাবহার করে বাড়িওয়ালারা তাহলে আমরা কোথায় যাবো।
নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা রতন টেলিফোনে বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল , তা মিটে গেছে। তার পুরো নাম কি সে প্রশ্ন করলে তিনি আমার নাম জানতে চান আমার নাম পরিচয় তাকে বলা হলেও তিনি নিজের পুরো নাম না বলেই ফোন কেটে দেন। ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে করোনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের পারিপার্শ্বিক হয়রাণির অভিযোগ লিখিতভাবে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ নাজিরুল আজিজ। একইভাবে একজন সাংবাদিকের ব্যাপারে “করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সাংবাদিকের বাসার লোকদের” এ ধরনের গুজব ছড়ায় শহরের একটি পাড়ায় কিছু উচ্ছৃংখল প্রতিবেশি। বিষয়টি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে সাংবাদিককে গলদঘর্ম হতে হয় , তবে সেটা মিথ্যা হওয়ায় সেখানেই থেমে যায়।
এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তানভিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিষয়টি আমার নলেজে এসেছে।আমরা আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো বলে চিন্তা করছি।
করোনা যুদ্ধে ফ্রন্টলাইন ফাইটার স্বাস্থ্যকর্মী-প্রশাসন- পুলিশ – সেনাবাহিনী-সাংবাদিকদের কাজে ও জীবনযাপনে অনর্থক কোনো বাঁধা হয়রাণি ও গুজব সৃষ্টি করা হলে প্রশাসনিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ডঃ কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এসব পেশার মানুষকে সাহায্য করার আহবান জানান।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

নেপথ্যেঃ বাড়ি ছাড়ার চাপ_ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ অফিসারের পরিবারের উপর নির্যাতনের অভিযোগ

আপডেট টাইম ০৩:০২:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মে ২০২০

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ “ সদর থানার এসআই আমার সহকর্মী আজ ভোরে স্ট্রোকে মারা গেলে তাঁর লাশ প্রয়াত সহকর্মীর গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে এইমাত্র ফিরলাম থানায়, সারাদিন নানা রূদ্ধশ্বাস কাজে ব্যস্ত থাকি, বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করেনা।” কথাগুলো একজন পুলিশ অফিসারের যিনি সপরিবারে বাড়িওয়ালার অমানবিক গালাগালি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সপরিবারে নাজেহাল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। করোনা শুরু হলে এরকম নির্যাতন ও হয়রাণির স্বীকার হচ্ছেন বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী , পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে সাংবাদিকরাও।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি(অপারেশন) নাজমুল হক রোববার দুপুরে অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরগাঁও  পৌরসভার নরেশ চৌহানের সমাধির সামনে রতন নামের এক বাড়ি ওয়ালার দোতলা বাড়িতে ভাড়া ওঠেন প্রায় ৪ মাস হলো।প্রথম দিকে বাড়িওয়ালা ও তার সহধর্মিণী ভালো ব্যাবহার করলেও গত প্রায় দেড় মাস যাবত যা ইচ্ছে তাই ব্যাবহার করেন তার পরিবার।তাদের ভাবটা এমন যেন আপদ বিদায় হলেই বাঁচি।
এছাড়াও সেই বাসায় এর আগে কনেস্টবল আলমগীর ও এএসআই জসিম তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তাদেরকেও নানা ভাবে হয়রানি করে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে করেছে বাড়ি মালিক।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘোষণা করেছেন ডাক্তার কিংবা পুলিশ অফিসার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী কারও সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবেনা, সেখানে প্রতিদিনই খারাপ ব্যবহারের শিকার হতে হয় এই পরিবারটিকে।
নাজমুল হক অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে গোসল করার পর তার স্ত্রী কাপড় শুকাতে গেলে  দেখে ছাদের দরজায় তালা মারা,কখনও খোলা থাকলে স্বয়ং বাড়িওয়ালা পুরুষ মানুষ হয়ে ছাদে বসে থাকে যেন মহিলা মানুষের অসুবিধা হয়।এছাড়া গতকাল এই পুলিশ অফিসারের  ছোট্ট ৫ বছরের শিশু মেয়ে নোভা বায়না ধরে ফুলের গাছ লাগাবে।নাজমুল তিনটি ফুলের টব নিয়ে ছাদে রেখে দেয় মেয়ের বায়না মেটাতে।এরপর থেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে নাজমুলের মেয়েকে আর পরিবার নিয়ে।এছাড়া ঘরের সামনে ময়লাও ফেলে রাখে। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয় নাজমুল বাসায় না থাকলে।তার দুই সন্তানকে প্রায়ই মারতে যায় বাড়িওয়ালা ও তার স্ত্রী। অফিসারের স্ত্রী জাহানারা খাতুন নুপুর বলেন, প্রতিনিয়ত আমরা বাড়িয়ালার চিল্লাচিল্লি দুর্ব্যবহার আর নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
এমন কেন করছে বাড়িওয়ালা প্রশ্ন করলে নাজমুল বলেন,তারা চায় আমরা যেন বাড়ি ছেড়ে দেই।কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে কোথায় নতুন বাসা ভাড়া পাবো।নাজমুল আরও বলেন,দেশের এই ক্রান্তিকালে আমরা পুলিশ বাহিনী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।আমাদের যাই হোক মানুষ যেন ভালো থাকে।অথচ আমাদের পরিবারের সাথে যদি এমন ব্যাবহার করে বাড়িওয়ালারা তাহলে আমরা কোথায় যাবো।
নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা রতন টেলিফোনে বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল , তা মিটে গেছে। তার পুরো নাম কি সে প্রশ্ন করলে তিনি আমার নাম জানতে চান আমার নাম পরিচয় তাকে বলা হলেও তিনি নিজের পুরো নাম না বলেই ফোন কেটে দেন। ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে করোনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের পারিপার্শ্বিক হয়রাণির অভিযোগ লিখিতভাবে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন, আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ নাজিরুল আজিজ। একইভাবে একজন সাংবাদিকের ব্যাপারে “করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সাংবাদিকের বাসার লোকদের” এ ধরনের গুজব ছড়ায় শহরের একটি পাড়ায় কিছু উচ্ছৃংখল প্রতিবেশি। বিষয়টি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে সাংবাদিককে গলদঘর্ম হতে হয় , তবে সেটা মিথ্যা হওয়ায় সেখানেই থেমে যায়।
এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তানভিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিষয়টি আমার নলেজে এসেছে।আমরা আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো বলে চিন্তা করছি।
করোনা যুদ্ধে ফ্রন্টলাইন ফাইটার স্বাস্থ্যকর্মী-প্রশাসন- পুলিশ – সেনাবাহিনী-সাংবাদিকদের কাজে ও জীবনযাপনে অনর্থক কোনো বাঁধা হয়রাণি ও গুজব সৃষ্টি করা হলে প্রশাসনিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ডঃ কে এম কামরুজ্জামান সেলিম। তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এসব পেশার মানুষকে সাহায্য করার আহবান জানান।