নঈম নিজাম:: রহস্যময় গোপন সব সিন্দুক খুলুন। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে গত ১১ বছরে অনেকে অর্থের পাহাড় গড়েছেন। নিয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্স। সেই লাইসেন্স বিক্রি করে হয়েছেন বড়লোক। আবার অনেকে রাজনীতিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তর করেছেন। কেউ কেউ রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় করেছেন ব্যাংক লুট। খালি করেছেন ব্যাংক ও আর্থিক খাত। বিদেশে কিনেছেন শপিং মল, পাঁচতারকা হোটেল, বিশাল অফিস ভবন। সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, দুবাই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে গেছেন দেশের অর্থ। অন্য দেশে ঘোষণা দিয়ে হয়েছেন শীর্ষ ধনী। আবার সরকারি চাকরি করেও অহংকারে মাটিতে পড়ত না পা অনেকের। একদিকে ক্ষমতা, অন্যদিকে অর্থের পাহাড়। হাঁটাচলাতেই দেখেছি পরিবর্তনের ঢেউ। জীবন চালানোর মতো দৃশ্যমান আয় ছিল না। কিন্তু ভোগবিলাসের শেষ ছিল না। লোক দেখানো কর্মকান্ড ছিল অনেক। জীবনে ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি দুই টাকার, কিন্তু গাড়ি হাঁকাতেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের। অনেক করেছেন। অনেক দেখিয়েছেন এই শহরের মানুষকে। এবার অবৈধ অর্থবিত্তের মালিকরা বেরিয়ে আসুন। ঘাপটি মেরে বসে থাকবেন আর কত? আজ মরে গেলে কাল আপনাদের এই সম্পদের কী হবে? আর করোনা হলে তো কথাই নেই। আক্রান্তের খবরেই প্রিয়জনরা সরে যাবে! লাশ দাফনেও কেউ যাবে না। আপনি যত ক্ষমতাবান হোন না কেন, কোনো লাভ নেই। দুনিয়া বদলে গেছে। পৌনে ৩ লাখ মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪০ লাখ। বিজ্ঞান লড়ছে সবকিছু সামাল দিতে। কিন্তু পারছে না। বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান। কখন গিয়ে শেষ হবে এই মহামারীর তান্ডব কেউ জানে না। লাশ দাফনের স্থান পাওয়া যাচ্ছে না এখন। এমন মৃত্যুর বিভীষিকা তৈরি হবে কে জানত!
আচ্ছা বলুন তো, এই জীবনে এত অর্থসম্পদ দিয়ে কী করবেন? মানুষের চলার জন্য কত লাগে? আর কত রেখে যেতে হবে আগামীর জন্য? আজ চলে গেলে কাল কিছু থাকবে না। সব শেষ হয়ে মিশে যাবে মাটিতে। আর ঠিকভাবে দাফন না হলে কোথায় দেহ মিশবে নিকটজনরাও জানবে না। পরিবার খোঁজও নেবে না। বলছি না, হজরত ওমর (রা.) কিংবা স্বামী বিবেকানন্দের মতো সবকিছু ছেড়ে দেবেন। মাদার তেরেসার মতো একটা জীবন কাটিয়ে দেবেন মানবসেবায়। কিন্তু ন্যূনতম অবদান রাখতে সমস্যা কোথায়? আপনি আপনার অবস্থান থেকেই দাঁড়ান না মানুষের পাশে। সরকার চাইলে, চাপ দিয়ে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে পারে। সেই টাকা নিয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। কিন্তু আপনি স্বেচ্ছায় দিন না ত্রাণ তহবিলে। এতে রাষ্ট্র ও সরকার উপকৃত হবে। আগামী দিনে আর্থিক সংকট থাকবে না। ঝামেলা থাকবে না। নগদ অর্থ মানুষের হাতে যাবে। খেটে খাওয়া মানুষ নিস্তার পাবে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও স্বস্তি পাবে। বিত্তশালীদের এখন লুকিয়ে থাকলে চলবে না। বিত্তশালী মন্ত্রী, এমপি রাজনীতিবিদদেরও মানুষ পাশে চায়। সরকারি ত্রাণ কর্মকর্তারা বিতরণ করুক। আপনারা দিন নিজের জমানো তহবিলের টাকা। তাহলে অনেক কিছু বদলে যাবে। প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের বড় অংশই বিত্তশালী। আগের যুগের আওয়ামী লীগ আর নেই। কমবেশি সবাই ব্যবসা করেন। কিছুদিন আগে একজন ব্যবসায়ী মন্ত্রীর মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এমন বিত্তশালী মন্ত্রীদের মানুষ তাদের পাশে চায়।
সরকারি ত্রাণ দিয়ে নিজের বড়াইয়ের কিছু নেই। পত্রিকায় ছবি প্রকাশ, টেলিভিশনে চিত্র প্রদর্শনের আগে বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার সিন্দুক খুলুন। বের করুন অর্থবিত্ত। মানুষের পাশে দাঁড়ান। বেশি কিছু লাগে না মানুষের মন জয় করতে। ঘাপটি মেরে পালিয়ে থাকলে মানুষ ব্যথিত হবে। এই ব্যথার দাগ আগামীতে আপনাকে আঘাত হানবে। সরকারি অর্থে এই সংকট সম্পূর্ণ মোকাবিলা সম্ভব নয়। দরকার সবার সম্মিলিত প্রয়াস। কাজ করতে বেশি কিছু লাগে না। একটা উদার মন দরকার। সেই মনটা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি এগিয়ে এলে অন্যরাও আসবে। পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করুন। নিজের এলাকার গরিব মানুষের তালিকা করে দান করুন। এরপর সব জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করুন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী দিন হাসপাতালে। আচ্ছা আমাকে কেউ বলবেন, কয় টাকা লাগে হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউ স্থাপনে? আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ফোন করলাম। তিনি ফেনীতে পাঁচটি আইসিইউ স্থাপন করেছেন ব্যক্তিগতভাবে। বৃহত্তর নোয়াখালীর কোনো হাসপাতাল এই প্রথম আইসিইউর মুখ দেখল। তিনি বললেন, পাঁচটি স্থাপনে খরচ পড়ছে ২ কোটির সামান্য বেশি। শুনে বিস্ময়ের ঘোর লেগে গেল। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫০ বছরে কী করেছে দেশবাসীর জন্য? বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ আছে। বাকি জেলা শহরগুলোয় পাঁচটি করে আইসিইউ স্থাপনে খরচ পড়বে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। অথচ আমরা তা করতে পারছি না। সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকে আল্লাহর বারো মাস। কারণ হাসপাতালের সামনে একটি করে ক্লিনিক থাকে। ওখানে হয় সব টেস্ট। ব্যবসার ওপর চলে আরেক ব্যবসা। এভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা টিকবে না। দরকার দুর্নীতিমুক্ত পরিকল্পিত উন্নয়ন; যা শুরুর সময় এখনই।
এক বন্ধু বললেন, আমরা পারছি না স্বভাব খারাপের জন্য। কিতাবে আছে গোয়ালে নেই নীতির কারণে। আমাদের হাসপাতালগুলোয় ইকুইপমেন্টের বিশাল তালিকা থাকে। বছর বছর কেনা হয়। মেরামত হয়। বাস্তবে কোনো সাপ্লাই হয় না। এসব ঘটনা ধরাও পড়ে। কারও কিছু হয় না। সমস্যা এখানেই। সরকারি দলের ব্যবসায়ী মন্ত্রী-এমপিদের বলছি, নিজের অর্থে হাসপাতালগুলোয় আইসিইউ স্থাপন করুন। মানুষের মন জয় করুন চিরস্থায়ীভাবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সরকারি ত্রাণ আমলারা বণ্টন করুক। আপনারা নিজের ব্যাংকের দরজা খুলুন। দান করুন নিরীহ মানুষকে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। সরকারি দলের অনেক এমপি রাতদিন কাজ করছেন এলাকায়। অনেকে রাতের অন্ধকারে মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। গরিবের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মানুষ এটুকুই চায়। বেশি কিছু না। এই মহামারী শেষ হতে সময় লাগবে। এত দ্রুত কোনো সমাধানই আসছে না। প্রকোপ কমছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না কোনো কিছু। আগামী দুই বছর থাকবে কঠিন এক অবস্থা। কে বাঁচব কে মরব কিছুই জানি না। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। কিন্তু এ কেমন মৃত্যু? কত মানুষের লাশ পথেঘাটে পড়ে থাকছে। পরে পুলিশ এসে দাফনের ব্যবস্থা করছে। দুনিয়ার ক্ষমতাবান মানুষটি অসহায়। লন্ডভন্ড দুনিয়াকে কে স্বাভাবিক করবে? আবার কবে ফ্লাইট হবে স্বাভাবিক? আতঙ্ক ছাড়া কবে মানুষ প্লেনে উঠবে? বলতে পারেন কেউ? পারবেন না। মাঝেমধ্যে মনে হয় সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন। একটু পর ঘুম থেকে উঠে দেখব সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো কিছুর বদল হয় না। বরং খারাপ খবরগুলো আরও বেশি করে আসতে থাকে।
ভেবেছিলাম মানবতা ফিরে আসবে। মহামারী দেখাবে নতুন পথ। দূর হবে সব হিংসা-বিদ্বেষ। কমবে ক্ষমতার অহংকার আর দম্ভ। মানবতার কথা বলবে সবাই। এই সময়ে অপরাধে জড়াবে না কেউ। হবে না খুনোখুনি। চুরি-ডাকাতি দেখব না। মানুষের চিন্তা-চেতনায় আসবে পরিবর্তন। নতুন এক সূর্যের আলো দেখব। অন্ধকার কেটে গেলে সুস্থতা ফিরে আসবে আমাদের সমাজে। কিন্তু না, আমার হিসাবটা ভুল হয়েছে। সবকিছু আগের মতোই আছে। কোথাও কোথাও হয়েছে আগের চেয়ে খারাপ। জগতে কেউ মদ বেচে দুধ কেনে। আবার কেউ দুধ বেচে কেনে মদ। জীবন থেকে আমরা কিছুই শিখি না। ছবি করতে গিয়ে স্ত্রীর গয়না বিক্রিও করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘পথের পাঁচালি’ বিভূতিভূষণের বইয়ের সঙ্গে মেলাতে গিয়ে কষ্ট করেছেন রাতদিন। সেই ছবির সব অভিনয়শিল্পীই বিখ্যাত হয়েছিলেন। উপন্যাসের ইন্দিরা চরিত্রের বৃদ্ধাকে খুঁজতে গিয়ে হয়েছিল সবচেয়ে বেশি ঝামেলা। পঁচাত্তর বছরের গাল তোবড়ানো, মাজা ভেঙে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া বৃদ্ধা কোথায় পাবেন? তারপর আবার অভিনয় জেনে কাজ করতে হবে সত্যজিতের মতো পরিশ্রমী মানুষের সঙ্গে। কত লোক আসে যায় কিন্তু মেলে না কোনো কিছু। হতাশার চূড়ান্ত মুহূর্তে ছবির এক অভিনেত্রী খবর দিলেন কলকাতার অন্ধকার গলিতে এক কক্ষে অভাব-অনটনে নিঃসঙ্গ এক বৃদ্ধার বাস। নাম চুনিবালা দেবী। বয়সকালে টুকটাক অভিনয় করেছেন। শেষ বয়সে সহায়হীন অবস্থায় এক কক্ষে থাকেন। জগৎ-সংসারে কেউ নেই। সত্যজিৎ এই বৃদ্ধাকে দেখেই পছন্দ করলেন। ছবি করতে গিয়ে বৃদ্ধার সাবলীল অভিনয় এতটাই মুগ্ধ করত সত্যজিৎকে অনেক সময় কাট বলতে ভুলে যেতেন। পথের পাঁচালি নির্মাণ শেষ হলো। বৃদ্ধারও জীবন ঘনিয়ে এলো। ছবির মুক্তি আর দেখে যেতে পারলেন না। বিদায়ের আগে জেনে যেতে পারলেন না সত্যজিতের ছবিতে অভিনয় করে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে নাম লেখানোর কথা।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সঙ্গে আমার চেনাজানা ছিল না। তিনিও সেভাবে পরিচিত ছিলেন না। তবে এই নামে অন্য একজন সাংবাদিক ছিলেন সত্তর ও আশির দশকে। সংবাদ ও খবরে কাজ করেছেন। তারপর পেশা ছেড়ে দূরে চলে গেছেন। বর্তমান সময়ে আলোচিত কাজল একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক। প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে কিছুদিন সম্পৃক্ত ছিলেন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় ভালোভাবে সুযোগ পাননি। কিন্তু অদম্য অবস্থান থেকে কাজ করেছেন বিভিন্ন স্থানে। সর্বশেষ একটি দৈনিকের ডিক্লারেশন নেন। এ পত্রিকাটি বের করতেন স্বল্পপরিসরে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময় কাজল অনেক ছবি তুলেছেন। সেই কাজল হঠাৎ নিখোঁজ হলেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে মামলা হলো পাপিয়াকান্ড নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে। কাজলের নিখোঁজের খবর পত্রিকাগুলোও প্রকাশ করে। সম্পাদক পরিষদ বিবৃতি দেয়। আমি নিজেও ফেসবুকে লিখি। তারপর ৫৪ দিন চলে যায়। কাজলের খবর নেই। ৫৪ দিন পর কাজল বেনাপোল সীমান্তে উদ্ধার হন নিজের দেশে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। বুঝলাম না কিছুই! নিজের দেশে আবার কীসের অনুপ্রবেশকারী? কীভাবে প্রমাণ করবেন তিনি এই লকডাউনে অনুপ্রবেশ করেছেন? ভারতের সীমান্ত দিয়ে এখন কারও কি আসা সম্ভব? বর্ডার গার্ড তাকে হস্তান্তর করল থানায়। পুলিশ পিছমোড়া বেঁধে নিয়ে যায় আদালতে। আদালত ৫৪ ধারায় পাঠায় জেলখানায়। কী বার্তা দিলাম আমরা বিশ্বের কাছে? বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত হলো কাজলের হ্যান্ডকাফ পরা পিছমোড়া ছবি। মানুষ লিখল মুক্ত সাংবাদিকতা দিবসে মিডিয়ার হাতে হাতকড়া। মিডিয়া নিয়ে সরকারকে কারা বুদ্ধি দেয় জানি না। তবে এটুকু বুঝি, কাজলকে দিয়ে একটা সর্বনাশ হয়েছে। কাজল হয়েছেন আন্তর্জাতিক তারকা। আর বিশ্ব মিডিয়ার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশের প্রেস ফ্রিডম।
যুগে যুগে অতি উৎসাহীরা সর্বনাশটা করে। তারা ভাব দেখায় অনেক কাজ করছে। বাস্তবে কাজের চেয়ে সর্বনাশটাই বেশি করে। কাজলকান্ডে সর্বনাশ হয়েছে। সরকারের ভালো অর্জনগুলো ম্লান হয়েছে। আগামীতে এমন আরও কান্ড ঘটালে সরকারের ভাবমূর্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। জানি এই কথাও কারও ভালো লাগবে না। সত্য সব সময় স্পর্শকাতর। আর স্পর্শকাতর বিষয়গুলো কারও কারও মাথাব্যথার কারণ। মিডিয়া চাল চোরের খবর প্রকাশ করলে কারও কারও শরীরে জ্বালা ধরে। পাপিয়াকান্ড, ক্যাসিনো আর চাঁদাবাজির খবর দিলে ওদের মাথা খারাপ হয়। আরে বাবা! চোর ধরছে কে? চোর তো আগে সরকার ধরছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অ্যাকশন নিয়েছে সরকারপ্রধানের নির্দেশে। তারপর মিডিয়া খবর দিচ্ছে। এ খবর কীভাবে ধামাচাপা দেবে সবাই! আর এসব খবর প্রকাশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন কোথায় হলো? বরং আইনের শাসনে সরকারের কঠোর অবস্থান সামনে আসে। সরকার চোর ধরবে মিডিয়া খবরও দিতে পারবে না! চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়েরা সাবধান হোন। বন্ধ করুন আপনাদের আজব কথাবার্তা। বাস্তবতায় ফিরে আসুন। এই মহামারীর সময়ে আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখুন। কোনো অন্যায়ই দীর্ঘ সময় চলতে পারে না। প্রকৃতি বলে একটা কিছু আছে। প্রকৃতির বিচারের চেয়ে বড় কিছু আর নেই। পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার বলা আছে- সীমা লঙ্ঘন করবে না। সীমা লঙ্ঘন হলেই প্রকৃতি ভয়াবহ শোধ নেয়। এখন যেভাবে নিচ্ছে। সারা দুনিয়ার মানুষ আজ বন্দী। অসহায় হয়ে দিন কাটাচ্ছে সবাই। এই সময়ে ক্ষমতার দম্ভ কারোর ভালো লাগবে না। তাই দয়া করে সরকারে থেকে চোরদের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করুন। আপনাদের কথা বলতে দেখে মানুষ সন্দেহ করে। ক্যাসিনো আর পাপিয়াকান্ড মিডিয়ায় কখন এলো? এসেছে সরকার ধরার পর। ক্যাসিনো, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কমিটি ও টেন্ডার বাণিজ্যের খবর মিডিয়া কোথা থেকে পেয়েছে? সরকারই দিয়েছে।
বড় বড় চেয়ারে বসলে বিশালত্ব আসে না। ক্ষমতার মসনদ চিরস্থায়ী নয়। মোগলদের শেষ বংশধর বাহাদুর শাহকে আক্ষেপ নিয়ে মরতে হয়েছিল রেঙ্গুনের নির্জনবাসে। নিজের দেশে দাফনের জন্য একখন্ড জমিও মেলেনি। এই দেশে ৫০ বছরে কত লোক মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন, কয়জনের নাম কে মনে রেখেছে? প্রেসিডেন্ট ভবনে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কত দাপুটে আসছেন গেছেন, তাদের কথা কারও স্মরণে নেই। এরশাদের সামরিক সচিবালয়ের সেই মেজর মুন্নার জীবন কাটছে বড় অসহায় অবস্থায়। কেউ খবরও রাখে না। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের মোখলেসুর রহমান চৌধুরী এখন পরবাসে। এ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ দুই কর্মকর্তা এখন কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ইতিহাস ভীষণ নিষ্ঠুর। ক্ষমতা আসলে দুই দিনের। আমাদের এই বয়সে কম দেখা হলো না। আজ আছি, কাল না-ও থাকতে পারি। মিছে ক্ষমতার অহংকার করে কী হবে? মানবিকতাকে কেন শেষ করে দেবেন? দুই দিনের এই দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে ভয়াবহ সময় অতিবাহিত করছে মানবজাতি। হুট করে শুনি নিকটজনদের অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এক দিন পরে শুনি তিনি চলে গেছেন চিরতরে। জানাজাও ঠিকমতো হয় না। আপনজনরা অংশ নিতে পারে না শেষকৃত্যানুষ্ঠানে। তার পরও মানুষের অহংকার থাকবে কেন? শেষ করছি পুলিশের একজন কর্মকর্তার একটি লেখার অংশ দিয়ে। ডিএমপির কর্মকর্তা আক্ষেপ করে লিখছেন, ‘গুলশানের ফ্ল্যাটে থাকলেও মানুষের মানসিকতা বদল হয়নি।’ আসল কাহিনি এক দারোয়ানকে নিয়ে। এই খারাপ সময়ে ফেরিওয়ালা ঝাড়ু বিক্রি করতে যায় গুলশান এলাকায়। ফ্ল্যাটের গিন্নি নিচের দারোয়ানকে নিয়ে এলেন ঝাড়ু কিনতে। ফেরিওয়ালা দাম চায় ৬০ টাকা। দাম বেশি বলে গিন্নি ব্যথিত হলেন। এই ক্ষোভে ক্ষুব্ধ দারোয়ান থাপ্পড় মারল ফেরিওয়ালাকে। ফ্ল্যাট মালকিন ওপরে চলে গেলেন। মার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরিওয়ালা সামনে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ পুলিশের গাড়ি দেখে নিজের দুঃখের কথা জানায়। গাড়িতে ছিলেন এডিসি পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। তিনি সব শুনে গুলশানের সেই বাড়িতে গেলেন। ব্যবস্থা নিলেন। সতর্ক করলেন গুলশান গিন্নিকে। তারপর পুলিশ কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখলেন- ‘ওদের তুমি গুলশানে রেখেছ মানুষ করনি।’ গুলশানে অনেক ভালো মানুষও থাকেন। তারা আবার মন খারাপ করবেন না। সবাই এক নন।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।