প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাণীটি বাংলাদেশ জার্নাল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা; আমাকে হত্যাসহ বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।
মহান আল্লাহতায়া’লার অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন। তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। অনেকে আজও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বহন করছেন। অনেকে দেহে স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। আমি ২১ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আহতদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা করেছিল। হামলাকারীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ সব আলামত ধ্বংস করে। তদন্তের নামে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায়। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকেনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামাত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়। গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১১ আসামিকে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অপরাধ করার ধৃষ্টতা দেখাতে না পারে তা বন্ধ করা হয়েছে। আশা করি, সব আইনি বিধি-বিধান ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব এই রায় কার্যকর করা হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট যখনই সরকারে এসেছে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মদত দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা করেছে। বিএনপি-জামায়াতের সব অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত সাড়ে ১১ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিতদের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চির অবসান হবে এবং বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ-শান্তিপূর্ণ আবাসভূমিতে পরিণত হবে-আজকের দিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।