ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালিয়াডাঙ্গীতে অলৌকিক আগুন আতঙ্কে একটি গ্রামের ২০টি পরিবার

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি::আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে দুই সন্তানকে বাবার বাড়ীতে রেখে এসেছেন আমেনা বেগম। দিন-রাত এক করে বাড়ীর জিনিসপত্র পাহাড়া দিচ্ছেন তিনি। আতঙ্ক ঘরবাড়ীতে যে কোন সময় আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার। আমেনা বেগমের মত আগুন আতঙ্কে দিন পার করছে নুর আলম, মোতালেব, মকসেদ আলীসহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সাবাজপুর গ্রামের ২০পরিবারের প্রায় শতাধিক লোকজন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি অলৌকিক ভাবে প্রতিদিন ৩-৪ বার আগুন ধরছে বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে। কখনো রান্নাঘরে, কখনোবা কাপড়ের ট্রাংকের ভিতর, কখনও ঘরে চালাতে। গত ২০ দিনে প্রায় শতাধিকবার আগুন লেগেছে ২০ পরিবারের বাড়ীগুলোতে। আগুন নেভানোর জন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈদ্যূতিক পাম্প স্থাপন করেছেন গ্রামের লোকজন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তিনবার আগুন লেগেছিল ওই গ্রামে। ভোরবেলা ও সকালে ঢাকনা দিয়ে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের ভিতর দুবার, দুপুরে গোয়াল ঘরে একবার।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল মাসের ২৯ তারিখে শবে বরাতের রাতে প্রথম আগুনের সুত্রপাত হয়। ওইদিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরের দিন ৩০
মার্চ আগুনে ৩টি পরিবারের ঘর-বাড়ীসহ আসবাবপত্র পুড়ে গিয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগী মসসেদ আলী জানান, আমরা এখন বিশ্বাস করে নিয়েছি এটা অলৌকিক আগুন। ঢাকনা দেওয়া গামলার ভিতর আগুন লেগে ভিতরে পুড়তেছে, কোরআন শরীফের উপর আগুন লেগে ঢাকনা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে। গত ২০ দিনের বেশি সময় ধরে আগুন লেগেই চলছে। বন্ধ হচ্ছে না।
মোতালেব হোসেন জানান, গ্রামে বেশ কয়েকজন তান্ত্রিক নিয়ে এসেছিলাম গ্রামে। তান্ত্রিকদের মতে পরিবারগুলোর উপর কালাজাদু করেছে কেউ। এগুলো দুর করতে
হবে। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করে আগুন বন্ধ করতে পারেননি। আমরা আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ৫টি পাম্প বসিয়েছি।
আমেনা বেগম বলেন, ২০টি পরিবারের সন্তানদের এখন আত্মীয়দের বাড়ীতে রেখে এসেছে। মাঠের কাজে যেতে পারছিনা। অনেকেই মাঠে ও বাইরে কাজ করতে গেলেও
আগুন লাগার খবরে ছুটে আসতে হচ্ছে বাড়ীতে। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে পরিবারগুলোর।
তাদের দাবী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুনের সুত্রপাত খুজে বের করে গ্রামের পুর্বের অবস্থা ফেরানোর। উপজেলায় ফায়ার ষ্টেশনের কর্মীরা জানান, অসতর্কতার কারণে আগুন লাগছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে ১ মাস মনিটরিং করতে পরামর্শ দিয়েছি। সঠিক ভাবে মনিটরিং করলে আগুনের সুত্রপাত খুঁজে পাওয়া যাবে। অলৌকিক কোন ঘটনা আমরা বিশ্বাস করি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বল ও
অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখার জন্য। ইউএনও আরও বলেন, পরিবারগুলো অলৌকিক আগুন দাবি করলেও বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবে দেখছি। ধারণা করছি একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে পরিবারগুলোর মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার। জড়িতদের সন্ধান পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি থেকে
মুক্তি পেতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

বালিয়াডাঙ্গীতে অলৌকিক আগুন আতঙ্কে একটি গ্রামের ২০টি পরিবার

আপডেট টাইম ১১:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি::আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে দুই সন্তানকে বাবার বাড়ীতে রেখে এসেছেন আমেনা বেগম। দিন-রাত এক করে বাড়ীর জিনিসপত্র পাহাড়া দিচ্ছেন তিনি। আতঙ্ক ঘরবাড়ীতে যে কোন সময় আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার। আমেনা বেগমের মত আগুন আতঙ্কে দিন পার করছে নুর আলম, মোতালেব, মকসেদ আলীসহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সাবাজপুর গ্রামের ২০পরিবারের প্রায় শতাধিক লোকজন।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি অলৌকিক ভাবে প্রতিদিন ৩-৪ বার আগুন ধরছে বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে। কখনো রান্নাঘরে, কখনোবা কাপড়ের ট্রাংকের ভিতর, কখনও ঘরে চালাতে। গত ২০ দিনে প্রায় শতাধিকবার আগুন লেগেছে ২০ পরিবারের বাড়ীগুলোতে। আগুন নেভানোর জন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈদ্যূতিক পাম্প স্থাপন করেছেন গ্রামের লোকজন।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তিনবার আগুন লেগেছিল ওই গ্রামে। ভোরবেলা ও সকালে ঢাকনা দিয়ে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের ভিতর দুবার, দুপুরে গোয়াল ঘরে একবার।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল মাসের ২৯ তারিখে শবে বরাতের রাতে প্রথম আগুনের সুত্রপাত হয়। ওইদিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরের দিন ৩০
মার্চ আগুনে ৩টি পরিবারের ঘর-বাড়ীসহ আসবাবপত্র পুড়ে গিয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগী মসসেদ আলী জানান, আমরা এখন বিশ্বাস করে নিয়েছি এটা অলৌকিক আগুন। ঢাকনা দেওয়া গামলার ভিতর আগুন লেগে ভিতরে পুড়তেছে, কোরআন শরীফের উপর আগুন লেগে ঢাকনা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে। গত ২০ দিনের বেশি সময় ধরে আগুন লেগেই চলছে। বন্ধ হচ্ছে না।
মোতালেব হোসেন জানান, গ্রামে বেশ কয়েকজন তান্ত্রিক নিয়ে এসেছিলাম গ্রামে। তান্ত্রিকদের মতে পরিবারগুলোর উপর কালাজাদু করেছে কেউ। এগুলো দুর করতে
হবে। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করে আগুন বন্ধ করতে পারেননি। আমরা আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ৫টি পাম্প বসিয়েছি।
আমেনা বেগম বলেন, ২০টি পরিবারের সন্তানদের এখন আত্মীয়দের বাড়ীতে রেখে এসেছে। মাঠের কাজে যেতে পারছিনা। অনেকেই মাঠে ও বাইরে কাজ করতে গেলেও
আগুন লাগার খবরে ছুটে আসতে হচ্ছে বাড়ীতে। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে পরিবারগুলোর।
তাদের দাবী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুনের সুত্রপাত খুজে বের করে গ্রামের পুর্বের অবস্থা ফেরানোর। উপজেলায় ফায়ার ষ্টেশনের কর্মীরা জানান, অসতর্কতার কারণে আগুন লাগছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে ১ মাস মনিটরিং করতে পরামর্শ দিয়েছি। সঠিক ভাবে মনিটরিং করলে আগুনের সুত্রপাত খুঁজে পাওয়া যাবে। অলৌকিক কোন ঘটনা আমরা বিশ্বাস করি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বল ও
অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখার জন্য। ইউএনও আরও বলেন, পরিবারগুলো অলৌকিক আগুন দাবি করলেও বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবে দেখছি। ধারণা করছি একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে পরিবারগুলোর মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার। জড়িতদের সন্ধান পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি থেকে
মুক্তি পেতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।