গত এক যুগেরও বেশি সময় শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের চলার পথের অর্জনের তালিকা অনেক লম্বা। তবে সংকট বিবেচনায় চলতি মেয়াদে ঘরে-বাইরের রাজনীতি ছাড়াও মহামারি, যুদ্ধ আর বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে।
বিশাল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে করোনার টিকা নিশ্চিত করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে দেশের বাইরে থেকে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বেড়েছে জ্বালানি আর ডলারের দাম। বিপরীতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চলমান মেগা প্রকল্পের ব্যয়। গত বছর ১৪ বছরের সাফল্য এক সঙ্গে উঠে আসে।
গত বছরের মার্চে, পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর জুনে দেশের সবচেয়ে আলোচিত-আকাঙ্খিত ও আবেগের প্রকল্পের বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পদ্মা সেতুর অর্জনের পর পরই স্বচ্ছ মধুমতির উপরের দেশের ৬ লেনের প্রথম কালনা সেতু। দেশের কেন্দ্রের আর দক্ষিণের সাথে পশ্চিমের খুলনা বিভাগের নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অন্যদিকে, নভেম্বরে একসাথে ১০০ সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্গম-পার্বত্য এলাকাসহ এক চট্টগ্রাম বিভাগেই চালু হয় ৪৫টি সেতু। সিলেটে ১৭, বরিশালে ১৪, ময়মনসিংহে ছয়, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও রংপুরে পাঁচটি করে এবং ঢাকা বিভাগে চালু হয় নতুন দুটি সেতু।
তারপর ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা ঘিরেই ২৯ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। একই মাসের ২১ ডিসেম্বর ৫০ জেলায় ১০০ নতুন সড়ক উদ্বোধন করে সরকার। পাঁচ দিন পরেই, যানজটের ঢাকায় উড়াল দেয় মেট্রোরেল।
পুরো প্রকল্প একসাথে চালু হলেও, ২০২০-২০২২ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ তা প্রশংসা পেয়েছে সব মহলে। প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস্তবায়নের হার নিয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন সংযোজন কর্ণফুলী টানেলও।
শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের যৌথসভায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত মধুমতি নদীতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনসহ গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাস্তবায়িত ২৮টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
টুঙ্গিপাড়ায় উপস্থিত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত দুইটি ঘাটলা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়া বাস টার্মিনাল, পাটগাতি ভূমি অফিস, টুঙ্গিপাড়া পৌর মার্কেট, টুঙ্গিপাড়া বাস টার্মিনাল, জেলা প্রসাশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, সোনাখালির জোড়াসেতু, রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়, দারুছুন্নাহ সালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মাঝবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পাটগাতী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বাঁশবাড়িয়া ঝনঝনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, গোপালগঞ্জ সদরের স্বাধীনতা নামে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গার্ডার ব্রিজ উদ্বোধন। এছাড়াও শেখ লুৎফর রহমান গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭টি প্রকল্প ও একটি ভিত্তি প্রস্তরের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প, শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করে।
সাফল্যের ১৫তম বছরের শুরুতেই এতগুলো প্রকল্প তাক লাগানোর মতই। উন্নয়নের সকল রেকর্ড অতিতেই ভেঙ্গে ফেলে শেখ হাসিনা সরকার। নতুন বছরে এই সরকার যেনো আরও নতুন রেকর্ডের দিকেই ধাবমান।
ঘুরে দাঁড়ানো শেখ হাসিনা
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে অন্তত ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তাকে নতুন উদ্যমে জীবিত করে তোলে।
দুই বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো মুজিবকন্যার ওপর হামলার ক্ষত শুধু আওয়ামী লীগেই না, দৃশ্যমান সমগ্র জাতির ওপর। তার সাথে রচিত হয় বাংলার রাজনীতির ময়দানে সুস্পষ্ট অভেদ্য বিভেদ রেখা।
এ ঘটনায় সহমর্মিতার বদলে ক্ষমতাসীন বিএনপির তাচ্ছিল্য সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি। বিরোধীদলের সর্বোচ্চ নেতার ওপর এমন হামলায় সমালোচনার ঝড় ওঠে সারা বিশ্বে। নিন্দা প্রতিবাদের বাইরে এই ইস্যুতে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ডাকা ব্রিফিং-এর জন্য বিদেশি দূতদের আমন্ত্রণ জানালেও তারা তাতে অংশ নেননি। বরং দেশে থাকা বৈদেশিক কূটনীতিবিদদের দেখা গেছে সুধাসদনে শেখ হাসিনা পরিবারের পাশে। সেইসঙ্গে বিশ্ব রাজনীতির সাথে শেখ হাসিনার অন্যমাত্রার সম্পর্কের শুরু।
২০০৬ সালে রাজপথে অবিশ্বাস্য অবস্থান গড়ে তোলে আওয়ামী লীগ। জোট ভিত্তিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ হাসিনা। তারপরই বাংলার রাজনীতির আরেক অধ্যায় এক-এগারো। মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা।
দুই বছরের সময়ানুক্রমে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ। স্বাধীনবাংলার সবচেয়ে নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের ঐতিহাসিক জয়।
রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গৌরবান্বিত অধ্যায়ের সূচনা। স্বর্ণোজ্বল এই অধ্যায়ের যেন নেই কোনো শেষ। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অলংকৃত অধ্যায়ের ধারা এখনো ধাবমান। গড়ে ওঠে ডিজিটাল বাংলাদেশ। লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ।