ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শরীরে শ’শ’ গুলি নি‌য়ে যন্ত্রণায় কাতরা‌চ্ছে লিটন, সরকারী সহায়তা নেই

স্বপ্ন ছিল শেষ বয়সে বাবা-মায়ের শেষ ভরসা হবে লিটন। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লিটন এখন পরিবারের বোঝা। গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্টচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেই গুলিতে ঝাঝরা হয় লিট‌নের পু‌রো শরীর।সরকারী কোন সহায়তা পাননি তিনি।
চি‌কিৎসকরা বল‌ছেন, লিট‌নের শরী‌রে এখনও প্রায় চার-পাঁচ‌শ গু‌লি র‌য়ে গে‌ছে। সেই গুলি বের করা সম্ভব না হওয়ায় এখনো হাঁটতে পারছেন না তিনি।
লিট‌নের বাড়ি ঠাকুরগাঁও পৌরশহ‌রের দ‌ক্ষিণ সালান্দর পাড়ার মিলন নগর মহল্লায়। বাবার নাম ইয়াকুব আলী। তিন ভাই‌য়ের মধ্যে লিটন সবার ছোট। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকা‌রি ক‌লে‌জের অনার্স প্রথম বর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবা ইয়াকুব আলী স্যানিটারি স্ল্যাব বি‌ক্রি করে সংসার চালান।
বর্তমা‌নে লিট‌নের চিকিৎসা, সুস্থ হওয়া ও তার কাজে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তার প‌রিবা‌রে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়িতে যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন লিটন। অভাবের সংসারে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে খণ্ডকা‌লীন চাক‌রি করতেন এক‌টি ওষুধ ফার্মেসিতে। সে‌ চাক‌রিটাও এখন আর নেই।
শনিবার লিট‌নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছনায় কাতরাচ্ছে লিটন। তার পাশে হতাশা আর চিন্তা নিয়ে বসে আছেন তার মা-বাবা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তারা। মা লি‌লি বেগমের কপা‌লে চিন্তার ভাজ, আর চোখ বেয়ে ঝরছে অশ্রু।সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লিটন বলেন, ছাত্রদের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। গত ৪ আগস্ট দুুপু‌রে শহ‌রের কোর্ট চত্বরের পূর্ব পা‌শের এক‌টি গলি‌তে শিক্ষার্থী‌দের এক‌টি অংশ অবস্থান ক‌রি। এ সময় পু‌লিশ আমাদের গু‌লি না করার প্রতিশ্রু‌তি দি‌য়ে সেখান থে‌কে চ‌লে যাওয়ার কথা ব‌লে। এ সময় চ‌লে যাওয়ার সময় পেছন দিক থে‌কে আমার মাথায় গু‌লি ক‌রে পু‌লিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এ‌তে কিছু সময় জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফে‌লি। প‌রে জ্ঞান ফেরার পর উ‌ঠে দাঁড়ালে পুলিশ আমার দিকে আবারও এ‌লোপাতা‌ড়ি ছররা গু‌লি কর‌তে থা‌কে। এ‌তে আমার পা থে‌কে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরী‌র গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় কোনো রকম হামাগু‌ড়ি দি‌য়ে পা‌শের এক‌টি বা‌ড়ি‌তে আ‌শ্রয় নেই। ওই বা‌ড়ির ‌লোকজন আমার রক্ত ঝরা মাথায় কাপড় দি‌য়ে বেঁধে দেন। বা‌ড়ির লোকজন‌কে হাসপাতা‌লে নেওয়ার জন্য বারবার আকুতি জানাচ্ছিলাম। তবে পু‌লি‌শের ভ‌য়ে কেউ আমাকে হাসপাতা‌লে নেয়নি। এক পর্যা‌য়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের হাসপাতা‌লে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বলে জানান লিটন।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

গণহত্যার পক্ষে কাজ করা গণমাধ্যমের বিচার হবে : উপদেষ্টা নাহিদ

শরীরে শ’শ’ গুলি নি‌য়ে যন্ত্রণায় কাতরা‌চ্ছে লিটন, সরকারী সহায়তা নেই

আপডেট টাইম ০৮:১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বপ্ন ছিল শেষ বয়সে বাবা-মায়ের শেষ ভরসা হবে লিটন। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লিটন এখন পরিবারের বোঝা। গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্টচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেই গুলিতে ঝাঝরা হয় লিট‌নের পু‌রো শরীর।সরকারী কোন সহায়তা পাননি তিনি।
চি‌কিৎসকরা বল‌ছেন, লিট‌নের শরী‌রে এখনও প্রায় চার-পাঁচ‌শ গু‌লি র‌য়ে গে‌ছে। সেই গুলি বের করা সম্ভব না হওয়ায় এখনো হাঁটতে পারছেন না তিনি।
লিট‌নের বাড়ি ঠাকুরগাঁও পৌরশহ‌রের দ‌ক্ষিণ সালান্দর পাড়ার মিলন নগর মহল্লায়। বাবার নাম ইয়াকুব আলী। তিন ভাই‌য়ের মধ্যে লিটন সবার ছোট। তিনি ঠাকুরগাঁও সরকা‌রি ক‌লে‌জের অনার্স প্রথম বর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবা ইয়াকুব আলী স্যানিটারি স্ল্যাব বি‌ক্রি করে সংসার চালান।
বর্তমা‌নে লিট‌নের চিকিৎসা, সুস্থ হওয়া ও তার কাজে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তার প‌রিবা‌রে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়িতে যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন লিটন। অভাবের সংসারে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে খণ্ডকা‌লীন চাক‌রি করতেন এক‌টি ওষুধ ফার্মেসিতে। সে‌ চাক‌রিটাও এখন আর নেই।
শনিবার লিট‌নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছনায় কাতরাচ্ছে লিটন। তার পাশে হতাশা আর চিন্তা নিয়ে বসে আছেন তার মা-বাবা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তারা। মা লি‌লি বেগমের কপা‌লে চিন্তার ভাজ, আর চোখ বেয়ে ঝরছে অশ্রু।সেদিনের রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে লিটন বলেন, ছাত্রদের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। গত ৪ আগস্ট দুুপু‌রে শহ‌রের কোর্ট চত্বরের পূর্ব পা‌শের এক‌টি গলি‌তে শিক্ষার্থী‌দের এক‌টি অংশ অবস্থান ক‌রি। এ সময় পু‌লিশ আমাদের গু‌লি না করার প্রতিশ্রু‌তি দি‌য়ে সেখান থে‌কে চ‌লে যাওয়ার কথা ব‌লে। এ সময় চ‌লে যাওয়ার সময় পেছন দিক থে‌কে আমার মাথায় গু‌লি ক‌রে পু‌লিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। এ‌তে কিছু সময় জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফে‌লি। প‌রে জ্ঞান ফেরার পর উ‌ঠে দাঁড়ালে পুলিশ আমার দিকে আবারও এ‌লোপাতা‌ড়ি ছররা গু‌লি কর‌তে থা‌কে। এ‌তে আমার পা থে‌কে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরী‌র গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় কোনো রকম হামাগু‌ড়ি দি‌য়ে পা‌শের এক‌টি বা‌ড়ি‌তে আ‌শ্রয় নেই। ওই বা‌ড়ির ‌লোকজন আমার রক্ত ঝরা মাথায় কাপড় দি‌য়ে বেঁধে দেন। বা‌ড়ির লোকজন‌কে হাসপাতা‌লে নেওয়ার জন্য বারবার আকুতি জানাচ্ছিলাম। তবে পু‌লি‌শের ভ‌য়ে কেউ আমাকে হাসপাতা‌লে নেয়নি। এক পর্যা‌য়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমাকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের হাসপাতা‌লে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বলে জানান লিটন।