অন্তর্বর্তী সরকার সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকারের বাংলাদেশ গড়তে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন সমাজ চাই না যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ দিয়ে উৎসব পালন করতে হবে। এ সরকার এমন বাংলাদেশে গঠন করতে চায় যেখানে সব সম্প্রদায় এবং নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। এ জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি দেশ গড়তে চায় যা নিয়ে গোটা দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়। ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে ড. ইউনূসকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর তিনি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন এবং পুরোহিতের সাথে কথা বলে পূজার খোঁজখবর নেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অত্যন্ত গৌরবপূর্ণ দুর্গাপূজা আমরা করতে পেরেছি সবাই মিলে। এর পেছনে সরকারের বড় বড় প্রতিষ্ঠান আমাদের সহযোগিতা করেছে। তারা হলো, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি সরকারের কাছে যত রকমের শান্তিরক্ষা বাহিনী ছিল সবাই। তিনি বলেন, সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এটা কঠিন কাজ, সহজ কাজ না। কঠিন কাজ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করতে পেরেছে। এই কঠিন কাজটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সমাধা করতে পেরেছে। সবাই মিলে কাজ করলে যে সফলতা পাওয়া যায়, সেটা তারা প্রমাণ করেছে। তারা কষ্ট করার কারণে আমরা ছুটি উপভোগ করতে পারছি। তাদের ধন্যবাদ জানাই।
দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়া প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজেদের মনে করিয়ে দেই, সেনাবাহিনীকে দিয়ে, পুলিশকে দিয়ে, র্যাবকে দিয়ে আমাদের আনন্দ, উৎসব করার আয়োজন করতে যাওয়াটা আমাদের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতাটাকে আমরা গ্রহণ করেছি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে পারি নাই যে, কোনো জায়গায় একটা অংশ আনন্দ-উৎসব করবে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে আনন্দ উৎসব করব। এ রকম সমাজকে নিয়ে আমরা কী করব? এ রকম সমাজ কি আমরা চাই? আমরা এ রকম সমাজ চাই না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সমাজের যেকোনো অংশ উৎসব করবে, আমরা সবাই মিলে সেখানে শরিক হবো, তারা যেন নির্বিঘেœ, আনন্দসহকারে উৎসব করতে পারে, তারা নিজেরা এই আনন্দে অংশ নেবে এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ওটা করতে পারছি না। এটা করতে পারছি না বলেই আমাদের ছাত্র-জনতার, শ্রমিক এরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে আজকে আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই যে আমরা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে আপনাদের উৎসবের সুযোগ করে দিলাম। এটা যেন ভবিষ্যতে আর কখনো করতে না হয়, সে জন্য আমরা একযোগে কাজ করব।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, যে বাংলাদেশে যারা এই দেশের নাগরিক তাদের সবার সমান অধিকার, এটা আমরা নিশ্চিত করছি। শিগগির এমন রাষ্ট্র গঠন করা হবে যা নিয়ে জাতি গর্ব করবে। সত্যিকার অর্থে নতুন বাংলাদেশের জন্য সবাইকে তৈরি হতে আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এবারের দুর্গাপূজা সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এবার দুর্গাপূজার আনন্দ বিশেষ আনন্দে পরিণত হয়েছে, দেশজুড়ে যেটা সবাই উপভোগ করছে। এ আনন্দ আরেকটু বেড়ে গেলে এজন্য, একদম নির্বিঘেœ সব জায়গায় পূজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই চেষ্টা করেছে, কোনোরকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, কোনোরকম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। এজন্য সরকার এবং সরকারের বাইরে সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছে।