ঢাকা ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাতিক্রমী পাঠদানে এগিয়ে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈলঃ- জাতীয় পর্যায়ে ও উপস্থিতিতে দুই বারের দেশ সেরা শ্রেষ্ঠ ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ব্যাতিক্রম পাঠদানে। প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি অভিভাবকদের যৌথ সহযোগিতায় ৫ম শ্রেনীর শিশু শিক্ষার্থীদের বিশেষ এমন পাঠদানের কারনে বরাবরের মতই ভাল ফলাফল করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান উপজেলার বাণিজ্যিক বন্দর মহাসড়ক ঘেষে শহর এলাকায়। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও পরিশ্রমের কমতি নেই। এছাড়াও উপজেলা জুড়ে আর অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে প্রাতিষ্ঠানিক এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানা যায় নি।
সম্প্রতি সন্ধার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি শ্রেনীকক্ষের বিদ্যুৎ লাইট জ¦ালানো ভিতরে যেতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে। এ প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেতেই এক যোগে সন্মান প্রর্দশন করে দাড়িয়ে সালাম জানালেন শিশু শিক্ষার্থীরা। এভাবে করে পাচটি শ্রেনী কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ শিক্ষকরা সম্বন্বয় করে ১ম তলায় বিউটি আক্তার ২৪ জন একরামুল হক ২৫ জন রুহুল আমিন ২৫ জন শেফালী বেগম ২৫ জন রনজিৎ ১২ জন শিক্ষাথীকে পাঠদান দিচ্ছেন। এসময় কথা হয় শিক্ষার্থী কায়েস, লাবিবের সাথে তারা বলেন,৫ম শ্রেনীতে ভাল ফলাফলের কারনে আমরা এখানে বাইরে কোচিং প্রাইভেট পড়ার বদলে অতিরিক্ত ক্লাশ করছি। এখানে কোন চাপ নেই অত্যন্ত সৃজনশীল হাতে কলমে শেখার মত আমরা স্যারদের কাছে শিখছি। এমনভাবেই আরো বলেন,কার্তিক বসাক,নাহিদ আফসানা মিমিসহ অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলেন,দিনের বেলা ক্লাশ চলাকালীন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাশ হয়। সে-সময় অনেক পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে ঐ স্যারের কাছে এখন ভালভাবে বুঝে নিতে পারি। একটা বইয়ের পড়া নিয়ে যত সমস্যা বা কৌতহুল জাগে তা সমাধান করে নিতে পারি।
এ উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করে রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন,শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠানে রাত্রী কালীন পাঠদানের এতিহ্য ধরে রাখার জন্য তাদের সাধুবাদ জানায়। একজন শিক্ষার্থীর ভাল ফলাফলের মুল স্থান হচ্ছে শ্রেনী কক্ষ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম পুতুল বলেন, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের ঐতিহ্য অহংকার এ অর্জন ধরে রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের রাত্রী কালীন পাঠদানের গুরুত্ব অপরসীম। শিক্ষকরা যে সারাদিন ক্লাশ নিয়ে আবার রাতে অতিরিক্ত সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয় এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানায়।
প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা যায়,সপ্তাহে ৬দিন প্রতিদিনি সন্ধা ৭টা থেকে রাত্রী ৯টা পর্যন্ত ৫ম শ্রেনীর মোট শিক্ষার্থী ১৫৫ জন এর মধ্যে ১১০ জন শিক্ষার্থী রাত্রী কালীন এ পাঠদান ব্যাবস্থায় উপস্থিত হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বাড়ী দুরে হওয়ায় এবং কোন কোন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত শিক্ষকের কাছে পড়ায় তারা উপস্থিত হয় না।
প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন,গরীব অসহায় কিংবা বড়লোকের সন্তান নিয়ে এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশেষ যতœ নিয়ে ভাল ফলাফল করাবো এটাই হচ্ছে আমাদের মুল লক্ষ্য।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জামালউদ্দীন চৌধুরী ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন,মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত যদি অন্যান্য বিদ্যালয়গুলো এ উদ্যোগ নেয় তাহলে উপজেলায় প্রাথমিকের পড়াশুনা ও ফলাফলের মান আরো বেড়ে যেত।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

ব্যাতিক্রমী পাঠদানে এগিয়ে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

আপডেট টাইম ০১:৫১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈলঃ- জাতীয় পর্যায়ে ও উপস্থিতিতে দুই বারের দেশ সেরা শ্রেষ্ঠ ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ব্যাতিক্রম পাঠদানে। প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি অভিভাবকদের যৌথ সহযোগিতায় ৫ম শ্রেনীর শিশু শিক্ষার্থীদের বিশেষ এমন পাঠদানের কারনে বরাবরের মতই ভাল ফলাফল করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান উপজেলার বাণিজ্যিক বন্দর মহাসড়ক ঘেষে শহর এলাকায়। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও পরিশ্রমের কমতি নেই। এছাড়াও উপজেলা জুড়ে আর অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে প্রাতিষ্ঠানিক এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানা যায় নি।
সম্প্রতি সন্ধার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি শ্রেনীকক্ষের বিদ্যুৎ লাইট জ¦ালানো ভিতরে যেতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে। এ প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেতেই এক যোগে সন্মান প্রর্দশন করে দাড়িয়ে সালাম জানালেন শিশু শিক্ষার্থীরা। এভাবে করে পাচটি শ্রেনী কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ শিক্ষকরা সম্বন্বয় করে ১ম তলায় বিউটি আক্তার ২৪ জন একরামুল হক ২৫ জন রুহুল আমিন ২৫ জন শেফালী বেগম ২৫ জন রনজিৎ ১২ জন শিক্ষাথীকে পাঠদান দিচ্ছেন। এসময় কথা হয় শিক্ষার্থী কায়েস, লাবিবের সাথে তারা বলেন,৫ম শ্রেনীতে ভাল ফলাফলের কারনে আমরা এখানে বাইরে কোচিং প্রাইভেট পড়ার বদলে অতিরিক্ত ক্লাশ করছি। এখানে কোন চাপ নেই অত্যন্ত সৃজনশীল হাতে কলমে শেখার মত আমরা স্যারদের কাছে শিখছি। এমনভাবেই আরো বলেন,কার্তিক বসাক,নাহিদ আফসানা মিমিসহ অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলেন,দিনের বেলা ক্লাশ চলাকালীন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাশ হয়। সে-সময় অনেক পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে ঐ স্যারের কাছে এখন ভালভাবে বুঝে নিতে পারি। একটা বইয়ের পড়া নিয়ে যত সমস্যা বা কৌতহুল জাগে তা সমাধান করে নিতে পারি।
এ উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করে রানীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন,শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠানে রাত্রী কালীন পাঠদানের এতিহ্য ধরে রাখার জন্য তাদের সাধুবাদ জানায়। একজন শিক্ষার্থীর ভাল ফলাফলের মুল স্থান হচ্ছে শ্রেনী কক্ষ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান মাহফুজা বেগম পুতুল বলেন, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের ঐতিহ্য অহংকার এ অর্জন ধরে রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের রাত্রী কালীন পাঠদানের গুরুত্ব অপরসীম। শিক্ষকরা যে সারাদিন ক্লাশ নিয়ে আবার রাতে অতিরিক্ত সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয় এ জন্য তাদের সাধুবাদ জানায়।
প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা যায়,সপ্তাহে ৬দিন প্রতিদিনি সন্ধা ৭টা থেকে রাত্রী ৯টা পর্যন্ত ৫ম শ্রেনীর মোট শিক্ষার্থী ১৫৫ জন এর মধ্যে ১১০ জন শিক্ষার্থী রাত্রী কালীন এ পাঠদান ব্যাবস্থায় উপস্থিত হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বাড়ী দুরে হওয়ায় এবং কোন কোন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত শিক্ষকের কাছে পড়ায় তারা উপস্থিত হয় না।
প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন,গরীব অসহায় কিংবা বড়লোকের সন্তান নিয়ে এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশেষ যতœ নিয়ে ভাল ফলাফল করাবো এটাই হচ্ছে আমাদের মুল লক্ষ্য।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জামালউদ্দীন চৌধুরী ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন,মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত যদি অন্যান্য বিদ্যালয়গুলো এ উদ্যোগ নেয় তাহলে উপজেলায় প্রাথমিকের পড়াশুনা ও ফলাফলের মান আরো বেড়ে যেত।