ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ওয়াকিল। রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ফ্রি ল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ শেষে সেখানেই বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা পেতে থাকায় ধীরে ধীরে বাড়ান বিনিয়োগ। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে শেষ পর্যন্ত জমা করেন ১৪ লাখ টাকা। কিন্তু এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় মুনাফার টাকা। এখন আসলও তুলতে পারছেন না।
রেক্স আইটির স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম পলাশ এই টাকা নিয়েছেন ওয়াকিলের কাছ থেকে। এক পর্যায়ে এই তরুণ যখন টাকা ফেরত চান, তখন শুরু হয় টালবাহানা।
এই রকম গল্প আছে কয়েক হাজার। অন্তত দুই হাজার মানুষের অভিযোগ, তাদের টাকা মেরে দিয়েছেন রেক্স আইটির আবদুস সালাম পলাশ।
রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রতারিত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। তারা জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে বলা হয় এখানে নন পেইড মার্কেটিং আর পেইপ মার্কেটিংয়ে সুযোগ রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগ করলে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ওয়াকিল বলেন, ‘দেখুন ওখানে শত শত মানুষ কাজ করেছেন, তারা টাকা দিয়েছেন আবার ফেরতও পেয়েছেন। তাই পরিবারের কাছ থেকে ধার করে একটু ভালো থাকার আশায় টাকা দিয়েছিলাম। আমাদের এই সরলতার সুযোগ নিয়ে পলাশ হাজার হাজার মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।’
সিআইডির সাইবার অপরাধ দলের সদস্যরা শুক্রবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে আবদুস সালাম পলাশকে গ্রেপ্তার করে। তার পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে। পুলিশ ওই ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে দেওয়ার আবেদন করবে আদালতে।
তাহসান ও হাবিবুল্লাহ নামে দুজন শিক্ষার্থীও টাকা দিয়েছিলেন অতিরিক্ত মুনাফার আশায়।
হাবিবুল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একটু ভালো থাকার আশায় পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলাম। যদি টাকা না পাই তাহলে যাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম তারা আমাকে ছাড়বে না।’
নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, তিনি প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না। এখন যে প্রতারিত হয়েছেন তা পরিবারকেও বলতে পারছেন না।
আবদুস সালাম পলাশের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়েছে। সিআইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রেখেছে।
তদন্ত সংস্থাটির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শাহ আলম তার দপ্তরে আনা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমরা তার (পলাশের) শাস্তির ব্যবস্থা করব। আর আপনাদের টাকা কীভাবে পাওয়া যায় সেই চেষ্টাও আমরা করব। তবে কত তাড়াতাড়ি টাকা পাবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এটা আদালতের বিষয়।’
রেক্স আইটি
২০১৫ সালে আইটি ভিশন নামে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা। আউটসোর্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিত এরা। সেখানে আবদুস সালাম পলাশ প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। পরে ২০১৭ সালের দিকে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানটি কিনে ব্যবসা শুরু করেন।
প্রতিষ্ঠানটি আউটসোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামেই বাড়তি অর্থ আয়ের কথা বলত তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে পেইড মার্কেটিংয়ের প্রচারণা চালাত তারা। বলত, পেইড মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ করলে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া যাবে।
এ প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে এ ধারণা ঢুকিয়ে দেয় রেক্স আইটি। তারাই মূলত টাকা বিনিয়োগ করেছে। প্রথম কয়েক মাসে লোভনীয় মুনাফা পাওয়ার পর ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা এবং এতে ঠকেছে তারা।
আবদুস সালাম পলাশের জন্ম ১৯৯২ সালের পহেলা জানুয়ারি। বাড়ি লক্ষ¥ীপুরের চন্দ্রগঞ্জের কল্যাণপুর গ্রামে। ২০০৭ সালে সোনাইমুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখা থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ধানমন্ডি চাটার্ড ইউনির্ভাসিটি কলেজে সিএ পড়া শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি। ২০১০ সালে আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি আইটি ভিশনে ট্রেইনার হিসেবে নয় মাস চাকরি করেন। এরপর ২০১৭ সালে কয়েকজন অংশীদার নিয়ে রেক্স আইটি প্রতিষ্ঠা করেন।