ডেস্ক:: কারাগারে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া! টানা তৃতীয় ঈদও কারাগারে কাটাতে হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রধানকে ভুলেই যাচ্ছে দলটি। তার মুক্তিতে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
রাজনীতিতে, গণমাধ্যমের কাভারেজ পেতে আলোচনায় থাকতে বিএনপির ঘরে এখন এরশাদ চরিত্র। যদিও দলীয় কয়েক নেতার মত, বিএনপিতে চলছে এখন তারেক-ফখরুলের চমক। একের পর নাটক চললেও শেষ দৃশ্য জানেন দুই নেতা।
অন্য নীতিনির্ধারকরা শুধু দর্শক সারির ভূমিকায়। দলে একক সিদ্ধান্তের মালিক একজন। যৌথ পরামর্শের ভিত্তিতে আর বিএনপি চলছে না। একজন লন্ডনে বসে ছক তৈরি করেন, আর অন্যজন দেশে বসে তা বাস্তবায়ন করেন।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ খালেদা আদর্শের সিনিয়র অনুসারীরা। সমপ্রতি এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ও হতাশার কথা বলেছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম সদস্য ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া-তারেকের পক্ষে এখন বিএনপির হাল ধরা সম্ভব নয়। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়।
সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদেরই সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত। বিএনপি ও তার নেতাদের অনুরোধ করব, হয় আপনারা নেতৃত্ব দেন, না হলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন।
এমন পরিস্থিতিতে দলে তারকের শুধু আস্থাভাজন একজন। আর তিনি হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ নিয়ে আরো চরম ক্ষুব্ধ সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, লে জে মাহবুবুর রহমানসহ আরো বেশ কয়েকজন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মোশাররফ ও মওদুদের অনুসারীরা ফখরুলের প্রোগ্রাম বর্জন করে আসছে এমন কথাও শোনা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে বসে তারেক জিয়ার প্রেসক্রিপশনে দলের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য এ মুহূর্তে একমাত্র অনুগত ব্যক্তি মির্জা ফখরুল। অন্যদিকে সমঝোতার ফখরুলে সরকার খুশি এমন কথাও দলের মধ্যে রয়েছে।
তা ছাড়া ফখরুল বিরোধীদের দাবি মির্জা ফখরুল শুধু জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতীক প্রচার করেন, কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষক বলেন না।
তাছাড়া এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদার দল বিএনপির জন্যও তিনি ভোট প্রার্থনা করেননি, তিনি ভোট চেয়েছেন, সুশীল বুদ্ধিজীবীদের স্টাইলে! যাকে খুশি তাকে ভোট দেন… এমন ধরনের।
দলের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ নিয়ে দাবি তুলে বলেছিলেন, খালেদার অনুপস্থিতে মির্জা ফখরুলের উচিৎ ছিল ধানের শীষে ভোট চাওয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ভোট চাওয়া, কিন্তু তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শে না হেঁটে অন্যপথ অনুসরণ করেছেন।
সব মিলিয়ে ফখরুল এখন দলের ভেতরে-বাইরে সন্দেহের তালিকায়। অনেকে বলছেন, আসলে ফখরুল কার? তিনি কি বিএনপির নাকি অন্য কারো অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এমন প্রশ্নবিদ্ধ ফখরুলকে নিয়ে দলে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে।
তিনি সমপ্রতি বলেছেন, বিএনপি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। কিন্তু তিনিই সংসদে গেলেন না। ফখরুলের এমন দর্শনে বিব্রত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে ফখরুল সংসদে না গিয়ে ইতিহাস হয়েছেন। এখন সেই মির্জা ফখরুলই ফের বগুড়া-৬ উপনির্বাচন প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
ফখরুল সমর্থকদের অনেককেই দেখা গেছে, তখন এমন দাবি করতে, বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তাতে এই প্রথম একজন প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পরে সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন না।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংসদের যে কোনো ইতিহাস লেখা হলে এ বিষয় উল্লেখে থাকবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কারণেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ইতিহাসে আলোচিত হবেন। যে ফখরুল সংসদে না গিয়ে রাজনীতিতে ইতিহাস হয়েছেন, সেই ফখরুল আবার নির্বাচন করবেন এমন গুঞ্জনে অনেকে দলের অস্থিত্ব সংকটে ভুগছেন।
দলীয় কর্মীদের ভাষ্য, বিএনপি যদি একের পর এরশাদ চরিত্রের ভূমিকা পালন করেন, তাহলে জাতীয় পার্টি থেকে মানুষ যেমন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তেমনি বিএনপি থেকেও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে উৎসবে মেতে থেকে এমন আলোচনায় থাকা বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্রে উচিৎ নয় বলেও কথা উঠছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক অবস্থান করলেও ব্যাংকক থেকে মির্জা ফখরুল এক দিনের জন্য লন্ডন যাবেন। সেখানে তারেক জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য এমনই ধারণা করছেন।
সমপ্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে, ২০ দলীয় বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যে জটিলতা হয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তারেক জিয়ার সাথে লন্ডনে বৈঠকের পরই ঘোষণা আসতে পারে ফখরুল বগুড়াতে বিএনপি প্রার্থী হচ্ছেন।
দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে তিনি নির্বাচন করবেন। এ মুহূর্তে অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যরা লন্ডন নেতার উপর বিরক্ত থাকায় ফখরুলকে খুশি রাখতে চাচ্ছেন তারেক জিয়া।
এ ছাড়া নারী সংরক্ষিত আসনে কে সংসদে যাবেন তাও চূড়ান্ত হবে তারেক-ফখরুল বৈঠকে। ধারণা করা হচ্ছে, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা হতে পারেন চূড়ান্ত প্রার্থী।
এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে শান্ত রাখতে লন্ডন থেকে শীঘ্রই পুরস্কার আসছে বলে মত দলীয় কয়েকটি সূত্রের। রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জন্য মওদুদ আহমেদ
সর্বমহলে স্বীকৃত অন্য দিকে কূটনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞার জন্য রয়েছে আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরের গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয়তা। এ দুজন সমপ্রীতি প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে ফখরুলের সমালোচনা ও শপথ সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা তুলেছেন। যার জন্য স্বয়ং দলের হাইকমান্ডকে বিপদে পড়তে হয়েছে।
তাই এ দুজনকে শান্ত রাখতে চলতি সপ্তাহে বড় দায়িত্ব দিয়ে সন্তুষ্টি করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং ২০ দলীয় জোটে আলোচনা করেই এ বিষয়গুলোতে দল সিদ্ধান্ত নেবে, আসলে কে প্রার্থী হবে। তবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের মতামতও থাকবে এ ইস্যুতে।