বুধবার বেলা পৌনে ১২ টায় ধানমন্ডির পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থার প্রধান ও পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, পুরোনা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজই আদালতে দেওয়া হবে। নতুন মামলার বাদী হতে পারেন মিতুর বাবা।
পিবিআই প্রধান বলেন, চৌকস পুলিশ অফিসার ছিলেন বাবুল আক্তার। অনেক কাজ করেছেন। তার স্ত্রীকে গুলি করে ও কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে এটি পরিগণিত। বাবুল আক্তার বাদী হয়েছিলেন। পুরনো মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন দুজন।
বনজ কুমার বলেন, প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন কতদিন মামলা ঝুলে থাকবে। সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা অন্যদিকে মোড় নেয়।
পুলিশের এই উপমহাপরিদর্শক বলেন, মামলার বাদীকে ইচ্ছে করলেই গ্রেপ্তার করা যায় না। বাদীকে গ্রেপ্তার করতে হলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। খুলশি থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে আজই কোর্টে যাচ্ছে পুলিশ। এটি দাখিলের পর নতুন মামলা হবে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হতে পারেন। কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম নিয়ে গেছেন। নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি হবেন বাবুল আক্তার।
পিবিআই প্রধান আরো বলেন, ঘটনাস্থলে মুসাকে দেখা যায়। মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যেতেন। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিতেন।
পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে মুসা সোর্স ছিল কিনা। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি হামলায় আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। মৃত্যুর পর যে আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।
তিনি বলেন, পিবিআই বাবুল আক্তারকে ঢাকায় ডেকেছিল। গত বৃহস্পতিবার বাবুল বলেন, উনি সোমবার ৯ টায় আসবেন। বাবুল পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানায় পিবিআই।
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক বলেন, নড়াইলে একটা লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নিই। তার নাম গাজী আল মামুন। অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। দুজন ই বাবুলের বন্ধু। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবাববন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ওই সময় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় তিনি বলেন, তার জঙ্গি-বিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মিতু হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।