ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

সোনার হরিণ ধরতে পেরে আবেগাপ্লুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পূজা তিগ্যা সহ দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা, ঠাকুরগাঁওয়ে আবেদন ফরমের ১২০ টাকা খরচেই পুলিশে চাকরি

আজম রেহমান, ঠাকুরগাঁও::
“তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই” বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথের সর্বজনবিদিত গীতিকাব্যের এ লাইনটি থেকেই বোঝা যায় সোনার হরিণ এর মূল্য আর চাহিদা কতটুকু তা আর বলাই বাহুল্য।
আজকাল সরকারী চাকরিও ঠিক তেমনি সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল বা দালালি ছাড়া যে বর্তমান সময়ে সরকারী চাকরি নামের এ সোনার হরিণটি কেউ ধরতে পারেনা তা প্রায় সবাই জানে। তবে এবার কোন ধরনের দালালি বা ঘুষ ছাড়া, নিজ যোগ্যতায় পুলিশে নিয়োগ দিয়ে এ কথাটিকে মিথ্যে প্রমান করেছে বাংলাদেশ পুলিশ ঠাকুরগাঁও।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের প্রার্থীদের চুরান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয় ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনসে। এতে আবেদন ফরমের মাত্র ১২০ টাকা খরচে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছে জেলার ৩০ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এদের কেউ রিকশা বা ভ্যানচালকের সন্তান, কেউ দিনমজুরের সন্তান, আবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সন্তানও রয়েছে এ তালিকায়। কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তারা ধন্যবাদ জানান জেলা পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক এবং বাংলাদেশ পুলিশকে। এসময় অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থীদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায় দরিদ্র পরিবারের অবিভাবকদের।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। মেডিকেল পরীক্ষা শেষে তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে। গত ৮ মার্চ প্রথম শারীরিক পরীক্ষা শেষে ৩০০ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। পরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৩৫ জন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঠে খেটে খাওয়া পরিবারের মেয়ে পূজা তিগ্যা জানান, আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছে। আমার পরিবারের নারী পুরুষ সবাই মাঠে কাজ করে দিনাতিপাত করে। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি সরকারী চুকরি নামের এ সোনার হরিণ আমি পেয়েই যাবো। স্বপ্ন সত্যি হয়েছে এবং তা নিজ যোগ্যতায় আর পুলিশ সুপারের স্বচ্ছ প্রচেষ্টায়। একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নব কুমার বর্মণও।
ইতি আক্তার নামে চাকরি পাওয়া একজন জানান, যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি টাকা দেব কীভাবে? তবুও মনের জোর নিয়ে আমি অঅবেদন করি এবং এর ফল আমি নিজেই পেয়েছি। এজন্য আমি ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক স্যার ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে আমাদের যে সিস্টেম চালু হয়েছে তা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যে যথেষ্ট। আমরা কোনো প্রকার তদবির তোয়াক্কা না করে শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, সকল পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থিদেরই নির্বাচিত করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল ধাপ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

পীরগঞ্জে জুয়ার আসর থেকে ৩ জুয়ারী আটক

সোনার হরিণ ধরতে পেরে আবেগাপ্লুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পূজা তিগ্যা সহ দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা, ঠাকুরগাঁওয়ে আবেদন ফরমের ১২০ টাকা খরচেই পুলিশে চাকরি

আপডেট টাইম ০৫:১৬:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

আজম রেহমান, ঠাকুরগাঁও::
“তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই” বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথের সর্বজনবিদিত গীতিকাব্যের এ লাইনটি থেকেই বোঝা যায় সোনার হরিণ এর মূল্য আর চাহিদা কতটুকু তা আর বলাই বাহুল্য।
আজকাল সরকারী চাকরিও ঠিক তেমনি সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল বা দালালি ছাড়া যে বর্তমান সময়ে সরকারী চাকরি নামের এ সোনার হরিণটি কেউ ধরতে পারেনা তা প্রায় সবাই জানে। তবে এবার কোন ধরনের দালালি বা ঘুষ ছাড়া, নিজ যোগ্যতায় পুলিশে নিয়োগ দিয়ে এ কথাটিকে মিথ্যে প্রমান করেছে বাংলাদেশ পুলিশ ঠাকুরগাঁও।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের প্রার্থীদের চুরান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয় ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনসে। এতে আবেদন ফরমের মাত্র ১২০ টাকা খরচে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছে জেলার ৩০ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এদের কেউ রিকশা বা ভ্যানচালকের সন্তান, কেউ দিনমজুরের সন্তান, আবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সন্তানও রয়েছে এ তালিকায়। কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তারা ধন্যবাদ জানান জেলা পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক এবং বাংলাদেশ পুলিশকে। এসময় অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থীদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায় দরিদ্র পরিবারের অবিভাবকদের।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে নিয়োগ পেতে ব্যাংক ড্রাফট বাবদ ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ২০ টাকাসহ মোট ১২০ টাকা খরচ হয়েছে প্রার্থীদের। মেডিকেল পরীক্ষা শেষে তাদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হবে। গত ৮ মার্চ প্রথম শারীরিক পরীক্ষা শেষে ৩০০ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। পরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হন ৩৫ জন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাঠে খেটে খাওয়া পরিবারের মেয়ে পূজা তিগ্যা জানান, আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছে। আমার পরিবারের নারী পুরুষ সবাই মাঠে কাজ করে দিনাতিপাত করে। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি সরকারী চুকরি নামের এ সোনার হরিণ আমি পেয়েই যাবো। স্বপ্ন সত্যি হয়েছে এবং তা নিজ যোগ্যতায় আর পুলিশ সুপারের স্বচ্ছ প্রচেষ্টায়। একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নব কুমার বর্মণও।
ইতি আক্তার নামে চাকরি পাওয়া একজন জানান, যখন আবেদন করেছিলাম তখন অনেকের কাছে অনেক কথাই শুনেছি। তদবির লাগে, টাকা লাগে। এসব ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমি টাকা দেব কীভাবে? তবুও মনের জোর নিয়ে আমি অঅবেদন করি এবং এর ফল আমি নিজেই পেয়েছি। এজন্য আমি ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক স্যার ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে আমাদের যে সিস্টেম চালু হয়েছে তা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যে যথেষ্ট। আমরা কোনো প্রকার তদবির তোয়াক্কা না করে শারীরিকভাবে যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন, সকল পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থিদেরই নির্বাচিত করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল ধাপ সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।