ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ড. মো. হারুনুর রশীদ পরিচালিত সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া বুধা’ মুক্তি পেয়েছে ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

দ্রুত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের ‘সুসংবাদ’ দিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত, কড়া নজর ভারতের

বিশেষ প্রতিনিধি::  তিস্তা ব্যারেজ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সহ তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের দল। রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ এলাকা ও সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করে তারা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় লি জিমিং উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমার আসলেই স্থানীয় জনগণের চাহিদা এবং কিসে তাদের ভালো হয় সেটা জানা দরকার। সেটাই আমার বা চীনের কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে বিআরআই (চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) একটি বড় প্রকল্প। আমাদের সব অংশীদারদের কাছ থেকে সব ধরনের অংশগ্রহণ দরকার।  তিস্তা একটি বৃহৎ নদী, এটি খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে। এটি বাংলাদেশে আমার প্রথম কাজ। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের, এরপরও এটি করবো।’

নদীটি খননের সম্ভবতা যাচাই করতেই তাদের দুইদিনের এই সফর জানিয়ে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “আমাদের প্রকৌশলীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর পরিকল্পনা করবো কবে থেকে কাজটি শুরু করা যায়। তবে আশা করছি শিগগির তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করতে পারবো। এটি শুধু এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুসংবাদ নয়, পুরো বাংলাদেশিদের জন্যেও গর্বের বিষয়।”

শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট দূর করা, তীর ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে তিস্তা নদী ঘিরে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

তিনি বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। এখানকার মানুষ, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ, লোকজনের চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা তিস্তা মহাপরিকল্পনার পক্ষেই। তাই আমরা এই মহাপরিকল্পনাটির পুরো বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।”

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, “চীনের রাষ্ট্রদূত এখানে আসছেন। উনার সাথে আলোচনায় দেখলাম, উনারা খুব পজিটিভ এই ব্যারেজের কাজ করতে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে (এটা) মনে করি। আমি ১১/১২ বার চীন গিয়েছি। ৫ বার আমি ওদের হোয়াং হো নদী দেখতে গিয়েছিলাম। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে যে, তারাই পারবে, আর কেউ পারবে না। চীন দিয়েছে আট হাজার চারশো কোটি টাকা। আর ভারত দিয়েছে দুই হাজার চারশো কোটি টাকা। আমাদের ফাইনান্সাররা (বিশ্বব্যাংক, এডিবি) বললো, এটা কিভাবে সম্ভব! দুই হাজার কোটি আর আট হাজার কোটি!”

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল প্রকৌশলী আমিনুল হক ভূঁইয়া, লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, ডালিয়া পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ্দৌলা, লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।

উল্লেখ্য, ২ দিনব্যাপী এই সফরের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল চীনা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দলটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ২ দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর ওপর  নির্মাণাধীন ব্রিজও পরিদর্শন করবেন।

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে নানা ইস্যুতে আলোচনা-অগ্রগতি হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বরাবরের মতো এবারও অধরাই থেকে যায়। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা চুক্তি এখন ভারতের ওপরই নির্ভর করছে।

ওদিকে, গত কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে, তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প হাতে নিয়েছে চীন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, চীন সরকার নিজ উদ্যোগ ও খরচে দুই বছর ধরে তিস্তার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, তিস্তা নদীর ভূপ্রাকৃতিক গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। তাছাড়া, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে যে ২৭টি প্রকল্পের চুক্তি হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে তিস্তা প্রকল্পও ছিল। সবমিলিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ এবং কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপে ভারত যে কড়া নজর রাখবে তা বলাইবাহুল্য।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

দ্রুত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের ‘সুসংবাদ’ দিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত, কড়া নজর ভারতের

আপডেট টাইম ১২:৩৩:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২
বিশেষ প্রতিনিধি::  তিস্তা ব্যারেজ এলাকা পরিদর্শন করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সহ তিন সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের দল। রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ এলাকা ও সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করে তারা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এ সময় লি জিমিং উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমার আসলেই স্থানীয় জনগণের চাহিদা এবং কিসে তাদের ভালো হয় সেটা জানা দরকার। সেটাই আমার বা চীনের কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে বিআরআই (চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) একটি বড় প্রকল্প। আমাদের সব অংশীদারদের কাছ থেকে সব ধরনের অংশগ্রহণ দরকার।  তিস্তা একটি বৃহৎ নদী, এটি খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে। এটি বাংলাদেশে আমার প্রথম কাজ। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের, এরপরও এটি করবো।’

নদীটি খননের সম্ভবতা যাচাই করতেই তাদের দুইদিনের এই সফর জানিয়ে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “আমাদের প্রকৌশলীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর পরিকল্পনা করবো কবে থেকে কাজটি শুরু করা যায়। তবে আশা করছি শিগগির তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করতে পারবো। এটি শুধু এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুসংবাদ নয়, পুরো বাংলাদেশিদের জন্যেও গর্বের বিষয়।”

শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট দূর করা, তীর ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে তিস্তা নদী ঘিরে সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

তিনি বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। এখানকার মানুষ, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ, লোকজনের চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা তিস্তা মহাপরিকল্পনার পক্ষেই। তাই আমরা এই মহাপরিকল্পনাটির পুরো বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।”

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, “চীনের রাষ্ট্রদূত এখানে আসছেন। উনার সাথে আলোচনায় দেখলাম, উনারা খুব পজিটিভ এই ব্যারেজের কাজ করতে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে (এটা) মনে করি। আমি ১১/১২ বার চীন গিয়েছি। ৫ বার আমি ওদের হোয়াং হো নদী দেখতে গিয়েছিলাম। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে যে, তারাই পারবে, আর কেউ পারবে না। চীন দিয়েছে আট হাজার চারশো কোটি টাকা। আর ভারত দিয়েছে দুই হাজার চারশো কোটি টাকা। আমাদের ফাইনান্সাররা (বিশ্বব্যাংক, এডিবি) বললো, এটা কিভাবে সম্ভব! দুই হাজার কোটি আর আট হাজার কোটি!”

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল প্রকৌশলী আমিনুল হক ভূঁইয়া, লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, ডালিয়া পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ্দৌলা, লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন, হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।

উল্লেখ্য, ২ দিনব্যাপী এই সফরের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল চীনা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে দলটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ২ দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর ওপর  নির্মাণাধীন ব্রিজও পরিদর্শন করবেন।

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে নানা ইস্যুতে আলোচনা-অগ্রগতি হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বরাবরের মতো এবারও অধরাই থেকে যায়। ভারতের সংবাদ মাধ্যম এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তা চুক্তি এখন ভারতের ওপরই নির্ভর করছে।

ওদিকে, গত কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে, তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প হাতে নিয়েছে চীন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, চীন সরকার নিজ উদ্যোগ ও খরচে দুই বছর ধরে তিস্তার ওপর সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, তিস্তা নদীর ভূপ্রাকৃতিক গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। তাছাড়া, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে যে ২৭টি প্রকল্পের চুক্তি হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে তিস্তা প্রকল্পও ছিল। সবমিলিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ এবং কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপে ভারত যে কড়া নজর রাখবে তা বলাইবাহুল্য।