ষ্টাফ রিপোর্টার:: ঐতিহ্যবাহী পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নিতীর মহোৎসব চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও অভিযোগের পর এবার খোদ বিদ্যালযের শিক্ষকরা অনিয়ম-দুর্নিতী-বৈষম্য-স্বজনপ্রীতি ও হয়রানীর বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অনুরুপ অভিযোগ সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরেও দাখিল করেছেন। এই অভিযোগে বিদ্যালযের সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ মোট ২১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন।
জানা যায়, শতবর্ষী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মো: ইমদাদুল হক। ৫ আগষ্টের পর নির্বাহী আদেশে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রমিজ আলম। ক্ষমতার পালাবদলের পর বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র-জনতা দুর্নিতীগ্রস্থ এই প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবীতে বিক্ষোভমিছিল ও ঘেরাও অবরোধ কর্মসূচী পালনের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে তারা দুর্নিতির হিসাব চেয়ে ইউএনও বরাবরে আবেদন করেন। প্রেক্ষিতে ইউএনও, এসিল্যান্ড কে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে বিদ্যালযের বিতর্কিত বিষয়গুলোর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। পরে উপজেলা প্রেসক্রাবের সাধারন সম্পাদক আজিজুল হক তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে সভাপতি বরাবরে আবেদন করলে সভাপতি অষ্পষ্ট কারনে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে দুর্নিতীর পক্ষাবলম্বন করেন। বিষয়টি পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে আপিল করেন তিনি। তথ্য প্রদানের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চাহিত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী। শিগগীরই তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হবেন বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে বিদ্যালযের সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ ২১ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক বিদ্যালয়ের দুর্নিতী-অনিয়ম-বৈষম্য-স্বজনপ্রীতি ও হয়রানীর বিচার চেয়ে গত ১১ নভেম্বর বিদ্যালযের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ইউএনও লিখিত অভিযোগটি গ্রহন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানালেও অজ্ঞাতকারনে অভিযোগের কোন রিসিভ কপি দেননি। তবে তদন্তকারী অফিসার এসিল্যান্ড অভিযোগ নিজে স্বাক্ষর দিয়ে রিসিভ কপি দিয়েছেন বলে জানান শিক্ষকগন।
শিক্ষকদের ১২ দফা অভিযোগের মধ্যে
১. স্কুলে ২০১০ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত আয়-ব্রাযের অভ্যন্তরীন কমিটি করা হয়নি।
২. শিক্ষার্থীদের বেতন ভাতা নিয়মিক আদায় হলেও শিক্ষকদের ১৮ মাসের বেতন ও ৫ টি উৎসব ভাতা বকেয়া রয়েছে।
৩. পূর্বে চালুকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করেছেন, যা অমানবিক।
৪. ২০২০ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত আয় ব্যাযের হিসাব গভর্নিং বডির স্বাক্ষর ও মতামত ছাড়াই বর্তমান সভাপতির কাছে দাখিল করেছেন যা অবৈধ।
৫. বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া স্কুলের অনেক পুরাতন গাছ বিক্রি করে আত্নসাৎ।
৬. স্কুলে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে স্বেচ্চাচারভাবে খরচ করা এবং ৮/১০বার চুরি হলেও সে বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়া রহস্যজনক।
৭. দোকানঘর ভাড়ার টাকা ব্যাংক হিসেবে চমা না করে যাচ্ছেতাই ভাবে খরচ করা।
৮. স্কুলের আয়-ব্যাযের হিসেব’র ক্যাশবুক মেনচেন না করা,ফলে অভিভাবকদের তথ্য জানানো সম্ভব হয়না।
৯. তার প্রিয়ভাজন কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া সকল শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক অশোভন আচরন করেন।
১০. শিক্ষার্থীদের নিকট হতে সনদ বাবাদ মাথাপিছু ১শ’ টাকা করে আদায় করে আত্নসাৎ।
১১. স্কুলের হল রুম ও উত্তর পাশে^র ৩ তলা ভবন, মসজিদ ও দোকানঘর গুলো টেন্ডার ছাড়াই নিজে নির্মান করেন।
১২. স্কুলের সকল প্রকার আদায় বইয়ের মুড়ি, দোকান ভাড়া আদায় রশিদের মুড়ি কপি সঠিকভাবে ক্যাশ বইয়ে জমা করা হয়নি উল্লেখযোগ্য।
অপরদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার দাবী আপাদমস্তক দুর্নিতীতে জড়িত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্কুলের সমূদয় আর্থিক কেলেঙ্কারীর হিসাবাদি নিষ্পত্তি করা হোক। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নিতীর মূলোৎপাটন করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জরুরী হয়ে পড়েছে।