ব্রাজিল কোচ তিতের সমস্যাটা ‘মধুর’। একাদশে কে থাকবেন জেসুস নাকি ফিরমিনো। বিশ্বকাপে এমন মধুর সমস্যায় পড়তে চাইবেন সব কোচই।
নেইমার! ব্রাজিলের প্রসঙ্গ উঠলে পিএসজি তারকার নামই মাথায় চলে আসে সবার আগে। দলটির সবচেয়ে বড় আশা-ভরসাই মনে হবে নেইমারকে। কিন্তু সত্যিই কি ব্রাজিল দলটি ‘ওয়ান ম্যান শো?’
তারকাখ্যাতিতে নেইমারকে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়তো অসম্ভব। কিন্তু ২০১৬ রিও অলিম্পিক যদি হয় মানদণ্ড, তবে বিশ্বকাপে তাঁকে কীর্তিতে অন্তত ছুঁয়ে ফেলার মতো খেলোয়াড় ব্রাজিলে আছে—গ্যাব্রিয়েল জেসুস। বিশ্বকাপে অবশ্য নেইমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ার আগে ছোট্ট আরেকটা লড়াইয়েও জিততে হবে ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকারকে। দলে জায়গা পাকা করার লড়াই। যে লড়াইয়ে তাঁর ‘প্রতিপক্ষ’ রবার্তো ফিরমিনো। এই লড়াইটা নাকি বেশ উপভোগই করছেন দুই ব্রাজিলীয় তরুণ-তুর্কি।
দুই বছর আগের রিও অলিম্পিকের স্মৃতি বলবে, জেসুস কেন এই লড়াইয়ে নামলেন সেটিই আশ্চর্যের। ব্রাজিলের অলিম্পিক সোনার চিরায়ত আক্ষেপটা সেবার ঘোচানোর কৃতিত্ব নেইমারের হলেও মাঠে নেইমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই আলো ছড়িয়েছেন তো জেসুসও। সদ্য ১৮ পেরোনো জেসুস ৩ ম্যাচে করেছিলেন ৬ গোল। ব্রাজিলের মূল দলে এসেও নিজের দ্যুতিটা ধরে রেখেছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই দেখুন, তিতের ব্রাজিল দলের জার্সিতে জেসুসই দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কুতিনহো-জেসুস-নেইমার ত্রয়ীতে হেক্সার স্বপ্নও উজ্জ্বল হয়েছে ব্রাজিলের। কিন্তু এত কিছুর পরেও বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে জেসুসের জায়গা নিশ্চিত কিনা, সেটি বলা যাচ্ছে না।
গত মৌসুমে চোট খুব ভুগিয়েছে জেসুসকে। প্রায় দুই মাস তিনি মাঠের বাইরে ছিলেন। সেটির আগে ও পরে ম্যানচেস্টার সিটিতে সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে জায়গা নিয়ে লড়তে হয়েছে। সিটিতে মৌসুমটা যে তাঁর খুব ভালো কেটেছে সেটা বল যাবে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২৯ ম্যাচে গোল মাত্র ১৩টি। মৌসুমে সব মিলিয়ে ১৭টি। অন্যদিকে লিভারপুলের জার্সিতে ফিরমিনো আলো ছড়িয়েছেন। মোহাম্মদ সালাহ মূল তারকা হলেও কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের মতে লিভারপুলের মূল ‘সিস্টেম’ নাকি ফিরমিনোই। তাঁর কারণেই ‘ডিফেন্সিভ ফরোয়ার্ড’ কথাটা এখন শোনা যাচ্ছে বেশ। লিগে ১৫, আর লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তোলার পথে আরও ১১ গোল করে ফিরমিনো ইতিমধ্যেই ব্রাজিল কোচের আনন্দ আর স্বস্তির কারণ হয়েছেন।
এই স্বস্তিই তিতেকে ফেলে দিয়েছে মধুর এক সমস্যার মধ্যে। নেইমার আর কুতিনহোর সঙ্গে জেসুস না ফিরমিনো—এমন সমস্যা যেকোনো কোচকেই উল্লসিত করে তুলবে। তবে জেসুসকে যে তিতে বিশেষ পছন্দ করেন, সেটা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁকে অধিনায়কত্ব দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেই দ্বিতীয় গোলটি করে বিশ্বকাপের একাদশে নিজের দাবিটা জোরালো করেছেন ফিরমিনো।
আগেই বলা হয়েছে ব্রাজিল দলে জায়গা পাওয়ার এই লড়াইটা জেসুস-ফিরমিনো দুজনই উপভোগ করছেন যথেষ্টই। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পরই ফিরমিনো বলে রেখেছিলেন, ‘তিতে যে সিদ্ধান্তই নিন, আমি সেটা শতভাগ মেনে নেব।’ জেসুসের ভাবনা আর ভিন্ন হতে যাবে কেন! ফিরমিনোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ‘স্বাস্থ্যকর’ই মনে করেন তিনি, ‘দলের জন্য, ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটা ভালো। তাঁর (ফিরমিনো) মৌসুমটা অসাধারণ কেটেছে, কিন্তু চোটের কারণে আমার মৌসুমটা ছিল মোটামুটি। আমি আরও ভালো খেলার চেষ্টাতেই আছি।’