আজম রেহমান, সারাদিন ডেস্ক:: কোনো রাজনৈতিক দলের ভোটের তাগাদা নয় , কোনো বিদেশি ফান্ডপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা নয় , এবার দরিদ্র উৎসববঞ্চিত শিশুদের পাশে ঈদ সামগ্রী নিয়ে দাঁড়ালো স্কুলের শিক্ষার্থীরাই , যারা নিজেরাই শিশু। ঈদ পূজার বর্ণাঢ্য ঝলমলে উৎসবে যে শিশুরা করুন চোখে তাকিয়ে দেখে বিত্তবানের দেশি বিদেশি পোষাকে সাজসজ্জা, বিত্তবানদের সন্তানদের রং বেরং এর বিলাশ বেশন তাদের খুশিকেই বড় করে দেখলো ঠাকুরগাঁও সরকারি উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের শ্ক্ষিার্থীদের সংগঠন একতার স্পন্দন এর অগ্রসর মহৎ হৃদয় সদস্যরা। নিজেদের পকেট খরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে আর কিছু বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে কিছু সাহায্য তুলে এই সংগঠনের ক্ষুদে শিশুরা ৪২ জন ছিন্নমূল দরিদ্র শিশুদের হাতে তুলে দিল ঐ শিশুদেরই পছন্দ করা ঈদ পোষাক। এর আগে এই কর্মউদ্যোগী ও সাহসী শিশুরা বন্যা , শীতে আক্রান্ত দরিদ্রদের জন্যও এমন সহায়তা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এছাড়া আগের বছরের ঈদেও তারা এমন ছিন্নমূল শিশুদের হাসিমুখ দেখবার জন্য নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিল।
এদেশের উন্নয়নের মূল রূপকার দরিদ্র কৃষাণ মজুরের সন্তান, এতিম ও ছিন্নমূল শিশুদের দুঃখ কষ্টের ভাগীদার হবার দৃপ্ত শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছিল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত সেবামূলক সংগঠন ‘একতার স্পন্দন’। প্রতিবারের ন্যায় এবারের ঈদেও তারা গরীব শিশুদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির জন্য আয়োজন করেছে ‘ওদের হাসি’ নামক একটি ইভেন্ট।
শনিবার (৯ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১ জন গরীব-অসহায় শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদের কাপড় ও শিক্ষা উপকরণ। সেই সাথে তাদের পরিবারের জন্য দেওয়া হয় কিছু ঈদসামগ্রী।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মু সাদেক কুরাইশী।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত কুমার সেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন আবু মো খয়রুল কবির, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুন নবী রাজা।
শনিবার ইভেন্টের দিনক্ষণ ঠিক করা থাকলেও শিশুদের মনমতো পোশাক কিনে দিতে ইভেন্টের ক’দিন আগেই ওদের নিয়ে হাজির হয় মৌচাক সুপার মার্কেটে। এই শিশুগুলোর মাঝে তুলে দেওয়া হয় তাদের পছন্দমত বাছাই করে রাখা সেই পোশাকটি। ২ দিনে মোট ৪১ জন শিশুকে মার্কেটে এনে পছন্দমত পোশাক কিনে দেয় তারা। আজ ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা আয়োজক একতার স্পন্দনের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, আগেরবারের মতো এবারও একতার স্পন্দনের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
কাঁপড় নিতে আসা হাজীপাড়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আশা জানায়, তার বাবা নেই, মা মানুষের বাসায় কাজ করে। ভাইয়া-আপুরা আমার পছন্দমতন কাঁপড় কিনে দিছে। এই কাঁপড়গেলা পিন্দে ঈদের দিন ঘুড়বো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একতার স্পন্দনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক স্বপ্নীল জানায়, আমরা যে সংগঠনটিকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থিত করেছিলাম দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বর্তমান সংগঠকরাও সে ধারা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের এটা আরো সার্থক হবে তখন যখন এই দরিদ্র শিশুরা দেশের উৎপাদন প্রযুক্তির মূল ধারায় ফিরবে। তারাও তাদের মেধা আর শ্রম দিয়ে আমাদের দেশটি গড়ে তুলতে আমাদের সমকাতারে দাঁড়াবে।