মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উত্ত্যক্তের জের ধরে বখাটের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীর বড়ভাই। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও বখাটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভয়ে গত ৭ দিন ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ওই ছাত্রীটি।
স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিন ঘটনাটি আপোস নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে থানা থেকে সময় চেয়ে ছাত্রী ও তার অভিভাবকদের সঙ্গে রীতিমত তামাশা ও অভিযুক্তদের আত্মগোপন করতে সহায়তা করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রীকে (১৫) একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র বখাটে ফাহিম আহমদ (১৯) গত ২ বছর ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। ফাহিম বর্ণি সৎপুর গ্রামের বলাই মিয়ার ছেলে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে সহযোগীদের নিয়ে ফাহিম কয়েকবার এ ছাত্রীটির শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এ কারণে বড়ভাই আজাদ আহমদ প্রতিদিন বোনকে স্কুলে নিয়ে যান এবং ছুটির পর সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
গত ১৪ জুলাই বোনকে স্কুলে দিয়ে ফেরার সময় বখাটে ফাহিম স্কুল গেটেই আজাদ আহমদকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় ছাত্রীটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট বিচারপ্রার্থী হলে এ বখাটে ছাত্রের বিচার করতে তিনি ব্যর্থ জানিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার অনুরোধ করেন। পরে ছাত্রীটির নানা আরব আলী ইউএনওর পরামর্শে বখাটে ফাহিম আহমদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ঘটনাটি নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য শুধু আমি একা সময় নেইনি। প্রফেসর একেএম হেলাল উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন সঙ্গে ছিলেন। তবে বাদীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করিনি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কলেজের উপাধ্যক্ষ একেএম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি দেখে দেব বলে সময় নিইনি। এ ঘটনায় আমর কোনো লাভ-ক্ষতি নেই। ছেলেটা ভালো নয়। এর আগেও একবার ছেলেটাকে (অভিযুক্ত ফাহিম) স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাময় ভট্টাচার্য্য সোমবার (২৩ জুলাই) বলেন, ‘ফাহিম আহমদ বখে যাওয়া ছাত্র। ইতিপূর্বে সে অনেক অপকর্ম করেছে। অভিভাবকদের জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। আমি ছাড়াও ম্যানেজিং কমিটি তার বিচার করেছে। এরপরও সে ভালো হয়নি। তাই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’
স্কুল ছাত্রীটির নানা আরব আলী সোমবার বিকেলে বলেন, ‘আপোস মীমাংসার জন্য কেউ আমার সঙ্গে যোযাযোগ করেনি। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরো বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় গত ৭ দিন ধরে আমার নাতনী (স্কুলছাত্রী) স্কুলে যাচ্ছে না। স্থানীয় কয়েকজন নেতা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আশ্বাস দিয়ে আমার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করে তারা থানা থেকে সময় নিয়ে বখাটে ফাহিমকে আত্মগোপন করতে সহায়তা করেছে।’
এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান সোমবার বিকেলে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর একজন উপ-পরিদর্শককে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশ সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে। কিন্তু এরপরই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, স্কুল ও অভিভাবক কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি আপসে নিষ্পত্তির জন্য সময় চেয়ে নেন। তবে বিষয়টি সমাধান না হলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ সোমবার বিকেলে বলেন, ‘ছাত্রীটির নানা আরব আলী ইটিজিং ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ওসিকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেই। এরপর আর কেউ কোনো কিছু জানায়নি। ছাত্রীটি যে স্কুলে যাচ্ছে না এটি খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’