পীর হাবিবুর রহমান:: ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি তার লন্ডনের বাসভবনে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের স্মৃতিময় ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেকের গল্পই তুলে এনেছিলেন। এর মধ্যে একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বেসামরিক বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর যোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী বাঘা সিদ্দিকী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একজন বেপরোয়া অসীম সাহসী বীর যোদ্ধা ও সংগঠক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলে ভারতসহ বাইরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন লম্বা, হালকা-পাতলা অকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। যিনি একাই তার নেতৃত্বে ১০ হাজারের শক্তিশালী গেরিলা যোদ্ধার দল তৈরি করেছিলেন। যেটি কাদেরিয়া বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। তার বীরত্বের মধ্য দিয়ে তিনি ভারতীয় বাহিনীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ও যুদ্ধে যৌথ সহযোগিতায় সম্মত হন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে তার পরিচালিত দুর্ধর্ষ গেরিলা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটা গৌরবময় দিক।
পাকিস্তান যখন পরাজয়ের মুখে, মিত্রবাহিনী যখন ঢাকায় প্রবেশের মুখে, তখন পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার ভয়ঙ্কর ভুল করে প্রায় আত্মঘাতী একটা পথ বেছে নিয়ে সরাসরি পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদের ভিতরে পড়তে যাচ্ছিলেন, সেই পথে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অ্যান্টি পার্সোনেল ও অ্যান্টি ট্যাংক, ল্যান্ড মাইন বিছিয়ে রেখেছিল। লাইনের পেছন থেকে বাঘা সিদ্দিকী এই আসন্ন বিপদের খবর জানতে পেরে দুর্দান্ত গতিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং তার বাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ পদযাত্রা নিরাপদ রাস্তায় সরিয়ে নেন। সেদিন বাঘা সিদ্দিকীর সময়মতো হস্তক্ষেপের ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। সঠিক সময়ে কাদের সিদ্দিকীর সঠিক সিদ্ধান্ত ও সাহসিকতার জন্য ভারত তাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমাদানের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কয়েকদিন পরই মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর পল্টনে অস্ত্র জমাদানের নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর আহ্বানে ব্যাপক সাড়া দেন। মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের যোদ্ধারা হাজার হাজার টন আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড তাঁর পায়ের কাছে এনে রাখেন। আমরা সেদিনের সামরিক কায়দায় পোশাক পরিহিত লম্বা চুল, মুখভর্তি দাড়ি ও মাথায় টুপি শোভিত এই বীর যোদ্ধাকে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করলেও শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বিশ্বনন্দিত বিপ্লবী চে গুয়েভারার সঙ্গে তার অবয়ব তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, চে গুয়েভারার মতো লম্বা চুল বাতাসে উড়িয়ে একটা সাদা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে নাটকীয়ভাবে কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর সামনে আসেন। ঘোড়া থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। তারপর পা ছুঁয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেন। যেটি তার নেতার প্রতি অনুগত আচরণ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামী মানুষের কাছে কিংবদন্তিই হয়ে ওঠেননি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সম্পদে পরিণত হয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তাদের গোটা পরিবার বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি নিজেদের উৎসর্গ করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দীর্ঘ পথ হেঁটেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু তাঁর এই স্বাধীন মাতৃভূমির বীর যোদ্ধাকে একটু বেশি স্নেহ-মমতা দিয়েছিলেন। বাঘা সিদ্দিকীখ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমও জাতির পিতাকে পিতার আসনে বসিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে সংসদ সদস্য ও বাকশাল ব্যবস্থায় টাঙ্গাইলের জেলা গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যৌবনে বঙ্গবন্ধুর প্রেমে পড়ে আওয়ামী লীগ ও মাতৃভূমির ভালোবাসার ঋণে বাঁধা পড়েছিলেন এই সাহসী বীর। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় হত্যাকা- সংঘটিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ একদল বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় নৃশংসভাবে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সেদিন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুনিদের প্রহরায় গঠিত অসাংবিধানিক অবৈধ সরকারের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ইতিহাস তাকে মীরজাফর হিসেবে কুখ্যাতি দিয়েছে। সেদিন এ হত্যাকা- প্রতিরোধ বা খুনিচক্রকে প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের সব বাহিনী ব্যর্থই হয়নি, অবৈধ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ বা বাকশালের সিনিয়র নেতারাও রাজনৈতিক প্রতিরোধের ডাক দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মগোপনে যান। নতুবা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়ে খুনিদের হাতে জীবন দেন। তরুণ নেতৃত্ব বিভ্রান্ত হয়ে খুনিদের হাতে আটক হয়ে শারীরিক, মানসিক ও কারাগারে নির্যাতন ভোগ করেন। একদিকে সশস্ত্র খুনির প্রহরায় খুনিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আয়োজনে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু সরকারের অনেক মন্ত্রী-নেতা অস্ত্রের ভয়ে হোক আর স্বেচ্ছায় হোক, খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। আর সারাটি জীবন যে মহান নেতা জীবন-যৌবন কারাগারে কাটিয়ে দুঃসাহসী অভিযাত্রায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা-সংগ্রামের পথে গণরায়ে নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছেন, সেই জাতির জনকের রক্তাক্ত দেহ অনাদর-অবহেলায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সশস্ত্র খুনিদের প্রহরায় পড়ে থাকে। তড়িঘড়ি করে পরিবারের সব সদস্যের লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করে দেওয়া হয়।
জাতির পিতার লাশ ভয়ে তটস্থ খুনিরা হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করে। ইমামের আপত্তির কারণে জনাকয় লোককে জানাজা পড়ার সুযোগ দেয়। জীবিত মুজিবকে ওরা বাঘের মতো ভয় করেছিল বলে হত্যা করে। আর মৃত মুজিবকে ভয় পেয়েছিল বলে অস্ত্র আর কারফিউ দিয়ে নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে জনগণকে দমবন্ধ পরিবেশে রেখে তড়িঘড়ি দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের ভয় পেয়েছিল বলে খুনিচক্র তাঁর হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। যারা প্রচার করেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেউ প্রতিবাদ করেনি, তারা মিথ্যাচার করেছিলেন। সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে কর্মী ও মানুষ প্রতিবাদের ডাক না পেয়ে প্রতিবাদে নামতে পারেনি। গুমরে গুমরে মানুষ কেঁদেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী। যে আবেগ দিয়ে, যে অন্তর দিয়ে, যে সাহস নিয়ে বাঘা সিদ্দিকী একদিন বঙ্গবন্ধুর প্রেমে পড়েছিলেন, আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য নেতার ডাকে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, সেই কাদের সিদ্দিকী, সেই অনুরূপ আবেগ-অনুভূতি ও বিশ্বাস থেকে পিতৃহত্যার প্রতিরোধযুদ্ধের ডাক দিয়ে বসলেন। তখন তিনি দলের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে নেই। ‘বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ পুত্র এখনো জীবিত’ এই কথা বলে তিনি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়লেন।
খুনি অবৈধ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ১৮ হাজার তরুণ কর্মী অস্ত্রহাতে যুক্ত হলেন। খেয়ে না খেয়ে খুনি ও অবৈধ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে ১০৮ জন বীর যোদ্ধা যারা জাতীয় মুক্তিবাহিনীর ব্যানারে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধযুদ্ধে নেমেছিলেন তারা নিহত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ বার বার ক্ষমতায় এলেও পিতার জন্য জীবন দেওয়া সেই বীর শহীদ ও বীর যোদ্ধাদের স্বীকৃতি কেন মেলেনি আমার কাছে সেটি এখনো রহস্যময়! বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। সে সময়ও তারা জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর মহানুভবতা ও সাহস যেমন দেখেছেন, তেমনি সানাউল হক খানের মতো বঙ্গবন্ধুর অনুকম্পায় নিয়োগ পাওয়া বিপদে চোখ পাল্টে ফেলা কাপুরুষোচিত বেপশম চরিত্র রাষ্ট্রদূত দেখেছেন।
পিতৃহত্যার বেদনায় এক পর্যায়ে তাকে ভারতে নির্বাসিত জীবন নিতে হয়েছে। টানা ১৫ বছর দেশের একজন বীর যোদ্ধার নির্বাসিত জীবন কতটা বেদনার তা তিনি যতটা উপলব্ধি করেছেন, তার চেয়ে কম উপলব্ধি করেননি বঙ্গবন্ধুর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরের আগে যেসব স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের উগ্র ও হঠকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল, কুৎসা রটিয়েছিল, পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসনকবলিত আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগবিদ্বেষী রাজনীতির প্রতিহিংসার সেই পথ তারা অব্যাহত রেখেছিল। একাত্তর ও পঁচাত্তরের বীরত্ব বাঘা সিদ্দিকীকে ভারতের গণতন্ত্রের মহান নেত্রী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরম সুহৃদ ও আশ্রয়দাতা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী যেমন সম্মান দিয়েছিলেন, তেমনি বিভিন্ন দলমতের নেতাও দিয়েছিলেন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশে তার দুজন ভাইবোন রয়েছেন। একজন শেখ হাসিনা আরেকজন বাঘা। তাকে কখনো কাদের সিদ্দিকী ডাকতে শুনিনি। যতবার দেখা হয়েছে, ততবার তিনি বাঘা বলেই সম্বোধন করেছেন। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছেই নয়, বঙ্গবন্ধু অনুসারী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মনেও টাইগার সিদ্দিকীখ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম নায়কের আসন নিয়েছিলেন। দুঃসময়ের আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাহসের প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন।
মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা বয়সে তার কয়েক দিনের ছোট হলেও বাঘা সিদ্দিকী অন্তর দিয়ে তাকে বড় বোনের আসনে বসিয়েছিলেন। রাজনীতির জটিল সমীকরণ বুঝতে না পারা কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম অনেক নেতার ঈর্ষার কারণও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শেখ হাসিনার জায়গাটি আমার পর্যবেক্ষণে যতটা না দলের সভানেত্রী তার চেয়ে বেশি বড় বোনের জায়গায় রেখেছিলেন। নব্বইয়ে সামরিক শাসনের অবসানের পর তিনি যেদিন ঢাকায় এসে নামলেন, সেদিন বিমানবন্দরে লাখো মানুষের ঢল। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো বড় নেতা এই সাহসী বীরকে দলের অহংকার করার মতো এই সম্পদকে অভ্যর্থনা জানাতে কেন গেলেন না সেই প্রশ্নের উত্তর আমি অনেক খুঁজেছি। জীবনের অনেক প্রশ্নের মতো এর উত্তরও মেলেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাকে সম্মানজনকভাবে ওয়ার্কিং কমিটির এক নম্বর সদস্য পদটি দিয়েছিলেন। কিন্তু ’৯৬ শাসনামলে তার টাঙ্গাইলে বাসভবনে পুলিশি অভিযান না চালিয়ে তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ কেন খুঁজতে যাওয়া হলো না- সেটিও আমি বুঝতে পারি না। তিনি যখন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ গঠন করেন, সংসদে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া ও তার টাঙ্গাইলের জনসভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। বক্তৃতার চেয়ে শিশুর মতো সেদিন তিনি ডুকরে কেঁদেছিলেন।
স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর কাছে তিনি যখন পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছিলেন আমার মনে হচ্ছিল পদত্যাগপত্র গ্রহণকালে মরহুম চৌধুরীর হাত কাঁপছিল। রক্তে-মাংসে মানুষ ষাটের ছাত্রলীগ নেতা সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তখন হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর অফিসকক্ষে বসা ছিলেন। তাকেও মনে হয়েছিল যেন বিব্রতবোধ করছেন। একজন মানুষ যেখানে জীবনে একবার অগ্নিপরীক্ষা দিতে পারে না। সেখানে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃত্যুকে পরোয়া না করে কাদের সিদ্দিকী দুবার বীরত্বের অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছেন। এমন কোনো রাজনীতিবিদ নেই যাদের জীবন বর্ণাঢ্য হলেও জীবনে দু-চারটি ভুলত্রুটি নেই। কাদের সিদ্দিকীর জীবনে যদি ভুলত্রুটি থেকেও থাকে তার সেই দুটি বীরত্বের কারণে তা কি ক্ষমার যোগ্য ছিল না? এ প্রশ্ন এখনো আমার মধ্যে রয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধুর লাশ ধানমন্ডির বাড়িতে ফেলে রেখে খুনি মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করে এসে যদি কেউ আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন, যদি বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করে এসে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা হয়ে, এমপি হয়ে মরতে পারেন; বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কেন ’৯৬ সালে মন্ত্রিত্ব পাওয়া দূরে থাক, আওয়ামী লীগেই থাকতে পারলেন না? মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নেই, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কোনো অবদান নেই, এমন ব্যক্তিরাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী হয়েছেন।
সেখানে মুজিবকন্যার সঙ্গে ভাই-বোনের আবেগের সম্পর্ক থাকার পরও একাত্তর ও পঁচাত্তরে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পরও বাঘা সিদ্দিকীসহ তার যেসব অনুসারী রাস্তায় রাস্তায় বঙ্গবন্ধুর নাম জপতে জপতে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন, অন্তহীন বেদনায় হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করছেন, জীবনের পড়ন্ত বেলায় বাঘা সিদ্দিকীসহ তাদের কি আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনা যায় না? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমার নিবেদন যে জাতীয় বীর বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, শেখ হাসিনার প্রতি অন্তরের মমত্ববোধ রয়েছে, সেই কাদের সিদ্দিকীকে দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে আনতে পারেন। বরেণ্য পার্লামেন্টারিয়ান মিজানুর রহমান চৌধুরী রাজনীতি করতে এসে রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে, ঋণখেলাপি হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মাতৃভূমির জন্য ও পিতৃহত্যার প্রতিবাদে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিটাকেই ভালোবেসেছেন। যেখানে আমাদের ব্যাংকপাড়া থেকে টাকা লুট করে নিয়ে অনেকে ঋণখেলাপি হন না, সমাজে ও ক্ষমতায় দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেন, যেখানে শেয়ারবাজারকে কবরে শুইয়ে দিয়ে একদল জুয়াড়ি বুক ফুলিয়ে হাঁটে। লাখ লাখ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়, সেখানে কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের ঋণখেলাপি হওয়ার অপরাধ কতটা বড়- সেই প্রশ্ন সামনে দাঁড়ায়।
মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির বাতিঘর হয়ে যেখানে সবার নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছেন, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়েছেন, সেখানে কাদের সিদ্দিকীসহ দলের নিবেদিতপ্রাণ দুঃসময়ের পথের সাথী নেতা-কর্মীরা যারা দল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, যারা দল থেকে ছিটকে বাইরে চলে গেছেন, তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে আনার মতো মহৎ হৃদয়ের নজির স্থাপন করতে পারেন। যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বক্তৃতাই করেনি, তার সরকারকে উৎখাত করতে হঠকারী পথ নিয়েছিল, পঁচাত্তরের পর যারা বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু বলেনি, তাদের যদি মুজিবকন্যা বিশাল হৃদয় দিয়ে নৌকায় তুলে এমপি-মন্ত্রী-নেতা বানাতে পারেন, তাহলে জীবনের পড়ন্ত বেলায় বঙ্গবন্ধুকে যারা অন্তরে লালন করেন বিভিন্ন সময়ে যারা ছোট ছোট ভাঙন বা বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বাইরে চলে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে অসুবিধা কই!
এ দেশের অনেক বরেণ্য আইনজীবী মৃত্যুবরণ করেছেন। সমাজের সব ক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ ও আলোকিত মানুষের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের কঠিন দুঃসময়ে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের মতো যেসব প্রখ্যাত আইনজীবী মুজিবকন্যার পাশে ছিলেন, তাদের পরবর্তী ভুলত্রুটি থাকলে তা ক্ষমা করে দিয়ে তাদেরও ফিরিয়ে আনতে পারেন। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ৩৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতনের ভিতর দিয়ে বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে জীবন নিয়ে ফিরে এসে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বকে সুসংহতই করেননি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার বিকল্প হিসেবে তাকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জ্ঞানে-গরিমায়, অভিজ্ঞতায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরোধী দলের বা বিরোধী মতের নানা সমালোচনার মুখেও দেশকে উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে নিয়ে গেছেন। তিনি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্ব রাজনীতিতে নন্দিত হয়েছেন। বিশ্ব মোড়লদের ষড়যন্ত্র পরাস্ত করে বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিতই করেননি, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তাদের সামনে বিস্ময়কর জায়গায় নিয়েছেন। দেশের জনগণের চাহিদা পূরণে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। দ্রুত নুসরাত হত্যার বিচার হয়েছে। আবরার হত্যার বিচার শুরু হয়েছে।
এবার ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন। যেটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন যুদ্ধ। যে যুদ্ধ প্রায় ৫০ বছরের শাসনামলে কেউ শুরু করতে পারেননি। তার চেয়ে কঠিন তিনি দুর্নীতিবিরোধী যুদ্ধ বা শুদ্ধি অভিযান নিজের ঘর থেকে শুরু করেছেন। এটি শুরু করতে গিয়ে তিনি আজ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছেন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুষ্টিমেয়, দাপটে ও বেআইনি কর্মকান্ডে দাম্ভিক দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। বার বার বলছি, এ যুদ্ধে শেখ হাসিনা জিতলে বাংলাদেশ জিতবে। শেখ হাসিনা হারলে বাংলাদেশ পরাজিত হবে। দুর্নীতি আরও সর্বগ্রাসী রূপ নেবে। দুর্নীতিবাজরা আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত, বিতর্কিত নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিগ্রস্ত কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাদেরও এ অভিযানে পাকড়াও করা হবে। দলের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও পেশার দুর্নীতিবাজরাও এ অভিযান থেকে মুক্তি পাবেন না। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফল হলে দেশে দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নয়নই ঘটবে না, আওয়ামী লীগও তার ঐতিহ্যের, সততার আদর্শিক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসবে। সেই ধারায় ফিরে এলে দল জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। দলের দাম্ভিক দুর্নীতিবাজদের পতন হলে আদর্শিক মেধাবী, সৎ, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সংগঠনের নেতৃত্বের জায়গায় উঠে আসবে। বঙ্গবন্ধু যেভাবে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনকালে তৃণমূল থেকে সৎ-আদর্শিক সংগঠক ও নেতৃত্ব তুলে এনেছিলেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা এবার তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে সফলতা অর্জন করতে পারেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ক্যাসিনো আর মদের আখড়ায় রাখলেই চলবে না।
জি কে শামীমের মতো অনুপ্রবেশ করে হাওয়া ভবনের যেসব টোকাই ঠিকাদার এখন বড় বড় কনস্ট্রাকশন ফার্মের মালিক হয়ে দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করছে, তাদেরও ধরতে হবে। ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার লুটেরা ও বিদেশে অর্থ পাচারকারী এবং বিগত ১০ বছরে দলের যেসব নারী-পুরুষ পদ-পদবিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া অঢেল অর্থ, দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদ গড়েছে তাদেরও পাকড়াও করে আইনের আওতায় এনে অন্যদের মতো দলের পদবি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। একেকটি জেলা ধরে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ অভিযান শুরুর পর মুজিবকন্যা শুধু আর আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি দেশের জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গায় থাকা অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রনায়ক ও নেতা। পঁচাত্তর থেকে ’৯৬ ও ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সারা দেশে কারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা এখন কে কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের তালিকা ও বায়োডাটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন নেতৃত্বে তুলে আনার পদক্ষেপ নেওয়া যায়। পঁচাত্তর-পরবর্তী ছাত্রলীগের সবচেয়ে সফল সাধারণ সম্পাদক বাহালুল মজনুন চুন্নু এবার দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে জায়গা পাবেন না? মুজিবকন্যা তাকে কাজে লাগালে দল একজন নির্লোভ আদর্শবান নেতা পেত।
১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনার চট্টগ্রামমুখী ট্রেনমার্চ যখন বিকাল ৪টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ল, পরদিন ফেনী স্টেশনে পৌঁছলে তৎকালীন ফেনী আওয়ামী লীগের কান্ডারি জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা সুশৃঙ্খলভাবে অভ্যর্থনা ও স্লোগানে সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। বিএনপির প্রথম শাসনামলে জয়নাল হাজারী তখন সংসদ সদস্য। ফেনীতে আওয়ামী লীগের ওপর সরকারের দমন-নিপীড়ন শুরু হয়েছিল। নেতা-কর্মীরা তৎকালীন বিডিআরের সঙ্গেও সংঘর্ষ করেছেন। বিএনপির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে বেপোরায়া তল্লাশি করেছিল। সেই ঘটনার প্রতিবাদ সভায় তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হয়েছিলেন। বিশাল জনসভার মাঠে মঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতারা মাঠে সুশৃঙ্খল ছাত্রলীগ কর্মীরা ছন্দে ছন্দে স্লোগান তুলছিল। জয়নাল হাজারী মুক্তিযুদ্ধ করে এসেছিলেন। পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ’৮৬, ’৯১ ও ’৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সামরিক শাসকদের গড়া রাজনৈতিক দলের পেটোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। কিন্তু ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। দম্ভ এতটাই হয়েছিল যে, যাকে-তাকে অপমান করতেও কার্পণ্য করেননি। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বাসভবনে তল্লাশি চালিয়েছে। তিনি দেশ ছেড়েছেন। পরে জেল খেটে মামলায় জামিনে আছেন। এদিকে শেখ হাসিনা তাকে দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় তিনি শূন্য হয়েছেন। রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হলেও দল ও নেতৃত্বের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা হারাননি।
দলীয় দ- ও শাস্তি তিনি দীর্ঘদিন ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে কখনো আমার দেখা হয় না। হঠাৎ টেলিফোন করেন। কিছুদিন আগে ফোন করে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার জন্য তাকে ৪০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। তখন মনে হলো, সন্ত্রাসকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেও রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণ হয়তো করেননি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করেছেন। দীর্ঘ শাস্তিভোগের পর দলের প্রতি আনুগত্য থাকা তার এ প্রাপ্য মর্যাদা বা সম্মান আমি সঠিক বলে মনে করি। ভুলের মাশুল তিনি যেমন দিয়েছেন, দলের দুঃসময়ের অবদানের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি মানুষের প্রতি মানবিক গুণের পরিচয়। তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই দেওয়ায় অনেকে খুশি, অনেকে বেজার। যারা বেজার তাদের কাছে প্রশ্ন রেখে যাই- জয়নাল হাজারীকে সরিয়ে উত্তম নেতৃত্ব কি বিভিন্ন এলাকা পেয়েছে? শেখ হাসিনা সম্প্রতি যুবলীগের সভায় দলের প্রবীণ, অভিজ্ঞ, দক্ষ দুই নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রেখে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা আশা করি, দলের এবার জাতীয় কাউন্সিলে শক্তিশালী প্রেসিডিয়াম ও ওয়ার্কিং কমিটি আওয়ামী লীগকে উপহার দেবেন। যারা গণমুখী রাজনীতিতে সংগঠনের জন্য ভূমিকা রাখতে পারেন। একই সঙ্গে তৃণমূলে আদর্শিক নির্লোভ ছিটকে পড়া নেতৃত্বকে তুলে আনবেন। দলের অনেক নেতা তৃণমূলের অপরাধের কারণে গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করেন। এসব গানম্যান প্রত্যাহার ও অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা দরকার। এটা যেন সাময়িক অভিযান না হয়।
যে কাউকে মন্ত্রী করে সফলতা পাওয়া যায়। কিন্তু যে কাউকে দলের পদবি দিয়ে নেতা বানানো যায় না। দলও সফলতা পায় না। এটা বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগকে তার আদর্শিক, গণমুখী রাজনীতির ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাউন্সিল ও জেলা সম্মেলনে দলকে সেভাবে নেতৃত্ব সাজানোর চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগ আদর্শের ধারায় ফিরে এলে সব দলকেও ফিরতে হবে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন