সারাদিন ডেস্ক:: এখন প্রায়শই লিঙ্গ বৈষম্যের কথা শুনি। লিঙ্গ কথাটি আমার কাছে কৌতূহলোদ্দীপক। ব্যাকরণ বইয়েও আবার লিঙ্গ রয়েছে। পণ্ডিত স্যার ক্লীব লিঙ্গের উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘হিজড়া’ কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন। লিঙ্গের মতো আমি হিজড়া কথাটিরও অর্থ বুঝতে পেরেছিলাম না। পণ্ডিত স্যার হিজড়া কথাটির অর্থ ভালোভাবে বুঝিয়ে না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। লিঙ্গ বৈষম্যের কথা যখন শুনি তখন ভাবি ব্যাকরণ বই হতে লিঙ্গ অধ্যায়টি তুলে দিলেইতো হলো, লিঙ্গ নিয়ে আর ভাবনা আসবে না। সব ল্যাঠা চুকে যায় আমরা যদি সবাই লিঙ্গ হীন হয়ে যাই। ব্যাকরণ বইয়ে দেখেছি পুরুষ কথাটি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামার এর ‘পার্সন’ কে ব্যাকরণে করা হয়েছে পুরুষ। পার্সন কথাটির অর্থ ব্যক্তি হলেও এখানে তা হয়েছে পুরুষ। প্রশ্ন করা যায় ব্যক্তিকে নির্দেশ করতে তো পুরুষের মতো নারী কথাটিও বলা যায়। এখানেও রয়েছে বৈষম্য। আমরা দেখেছি আমাদের এ পৃথিবীতে শুধু মহাপুরুষই জন্মগ্রহণ করেছেন। ‘মহানারী’ জন্মগ্রহণ করেননি। এ জন্যেই বোধহয় ব্যাকরণ বইয়ে মহানারী কথাটি দেখি না। বাংলা ভাষায় পৌরুষ দেখানো বলে একটি কথা রয়েছে। পৌরুষ পুরুষরাই দেখায়। নারীরা তবে কি দেখায় এ ক্ষেত্রে ভাষাবিদরা যুৎসই কথা উদ্ভাবন করতে পারেননি। অর্থাৎ তারা শুধুমাত্র পুরুষদের কথাই ভেবেছেন। অনেক কাল আগে বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, ‘আমাদিগের ধর্মগ্রন্থসমূহ পুরুষ কর্তৃক রচিত’। এখন বেঁচে থাকলে বলতেন, আমাদিগের বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থসমূহ পুরুষ বৈকারণ কর্তৃক রচিত। আমাদের বাংলা ভাষার পণ্ডিতগণও এ ব্যাপারে ভাবেননি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পন্ডিত কথাটি আমরা শুধু পুরুষদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি। তবে কী নারী পণ্ডিত নেই? আসলে থাকলেও তাদের নামের আগে পণ্ডিত কথাটি যুক্ত করি না, অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে করি। পুরুষ শাসিত সমাজ বলে মেয়েরাও বলে থাকে, আমার ছেলেবেলা। চাঁটগাইয়া ভাষায় বলে ‘মাইয়া পোয়া’। এ ব্যাপারে সাহস দেখিয়ে তসলিমা নাসরিন বই লিখেছেন, ‘আমার মেয়েবেলা’ বইটি। ভাষা গবেষক ড. মাহবুবুল হক ‘খটকা বানান অভিধান’ নামের একটি বই লিখেছেন। তাঁর কাছে অনুরোধ তিনি যাতে ‘খটকা লিঙ্গ অভিধান’ নামের একটি বই লিখে আমাদের চমকিত ও বিমোহিত করেন। এতে বাংলা ভাষার লিঙ্গ বৈষম্য বুঝতে সহজ হবে। আপাতত না হয় কিছুকাল পৌরুষ দেখিয়েই চলি।
সংবাদ শিরোনাম