মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে গ্রন্থাগারের সামনে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজায় অংশ নেয়া ও শ্রদ্ধা জানাতে আসা প্রতিটি মানুষের মুখেই ছিল শোকের ছায়া।
জানাজার শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান।
পরে হাসান আজিজুল হকের একমাত্র ছেলে ইমতিয়াজ হাসান তার বাবার ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। জানাজায় হাসান আজিজুল হকের স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কয়েক শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শহীদ মিনার চত্বরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিশিষ্ট এ কথাসাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে সেখানে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রাজশাহী-৩ (পবা ও মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
এছাড়া বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এর আগে, সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির (বিহাস) বাসভবন উজান-এ হাসান আজিজুল হক মারা যান। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং স্যোসাইটি ‘বিহাস’-এ তার নিজ বাসভবন উজানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাসান আজিজুল হক। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, তিন মেয়ে, নাতি-নাতনি, ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীসহ বহু গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাসান আজিজুল হকের স্ত্রী শামসুন নাহার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের বর্ধমান জেলার জব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে দর্শনে এম. এ. ডিগ্রি লাভ এবং ১৯৭৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। এছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।