মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক::চিত্রতারকা দম্পতি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে ভেঙে গেছে। আজ ১২ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হলো তাঁদের। তেমনটাই দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন। আজ সোমবার সকালে তিনি বলেন, ‘শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের তালাক বিষয়ে তৃতীয় ও শেষ শুনানি ছিল আজ। আপস-মীমাংসার জন্য তাঁদের আজ ডাকা হয়েছিল। এর আগে ১২ জানুয়ারি ও ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁদের ডাকা হয়। ১২ জানুয়ারি অপু বিশ্বাস উপস্থিত হলেও অন্য দুটি তারিখে তিনি আসেননি। আর শাকিব খান কোনো তারিখেই উপস্থিত হননি। বিধিবদ্ধ সময়সীমা ৯০ দিন উত্তীর্ণ হওয়ায় সালিস মামলার আজ নিষ্পত্তি হয়েছে। আজ থেকে তালাক কার্যকর হচ্ছে।’
হেমায়েত হোসেন জানান, ১২ জানুয়ারি উপস্থিত হয়ে শাকিব খানের সঙ্গে সংসার করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন অপু বিশ্বাস। যেহেতু শাকিব খান একবারও আসেননি, তাই এ ব্যাপারে কোনো সমঝোতা সম্ভব হয়নি।
অপু বিশ্বাসের সঙ্গে তালাক কার্যকর হওয়ার ব্যাপারে শাকিব খান বলেন, ‘সবকিছু আইনি প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এসব নিয়ে এখন আর কিছুই ভাবতে চাই না। সবকিছুই অতীত। আমি এখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। কাজ নিয়েই থাকতে চাই।’
এদিকে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের তালাক কার্যকরের তারিখ নিয়ে ভিন্নমত পাওয়া গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল ৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেনের বক্তব্যের বিরোধিতা করে একজন আইনজীবী জানান, অপুকে পাঠানো তালাকের নোটিশে দেখা যায়, সেখানে তালাকের তারিখ ‘২২ নভেম্বর ২০১৭’ উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া গণমাধ্যমেও শাকিবের আইনজীবী বলেছেন, শাকিবের পক্ষে ‘২২ নভেম্বর ২০১৭’ তারিখে তিনি অপুকে ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে তালাকের লিখিত নোটিশ প্রেরণ করেন।
আইনের বিধান মোতাবেক, ৯০ দিন সময় গণনা ওই ২২ নভেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে। যেহেতু তালাকটি সমঝোতা বা অন্যভাবে প্রত্যাহার হয়নি, সে হিসাবে ‘২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি’ ৯০ দিন (নভেম্বর ’১৭-এর ৮ দিন + ডিসেম্বর ’১৭-এর ৩১ দিন + জানুয়ারি ’১৮-এর ৩১ দিন + ফেব্রুয়ারি ’১৮-এর ২০ দিন = ৯০ দিন) পূরণ হয়েছে এবং ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাকিব-অপুর তালাক কার্যকর হয়েছে।
এই আইনজীবীর মতে, আইনের বিধান হলো, তালাকের একটি নোটিশ স্বামী বা স্ত্রীর কাছে যাবে। আরেকটি নোটিশ সিটি করপোরেশনের মেয়রের (ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা চেয়ারম্যান, যেটা প্রযোজ্য) কাছে যাবে। নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে করপোরেশন উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠন করবে এবং বিষয়টা আপস-মীমাংসার চেষ্টা করবে। তাদের ক্ষমতা বা দায়দায়িত্ব আপস-মীমাংসার উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ। তাদের উদ্যোগে পক্ষরা সাড়া দিতেও পারে, আবার না-ও পারে। তাতে কিছু যায়-আসে না। ওই উদ্যোগে সাড়া দেওয়া না-দেওয়া, সালিশি পরিষদের সিদ্ধান্ত বা মতামত গ্রহণ বা বর্জন পক্ষদ্বয়ের একান্ত ঐচ্ছিক বা ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে তাদের কাউকে বাধ্য করার আইনানুগ কোনো সুযোগ নেই। তালাক কার্যকর হওয়ার সঙ্গে এই উদ্যোগের সরাসরি কোনো সম্পর্কও নেই। সিটি করপোরেশন যদি এখানে কোনো সমঝোতার উদ্যোগ না নেয় বা পক্ষরা যদি তাতে সাড়া না দেয়, ৯০ দিন পর (পূর্বে উল্লেখিত সময় গণনা শেষে) তালাক স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়।
গত বছর ২২ নভেম্বর শাকিব খান তাঁর আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে অপুর কাছে তালাকের নোটিশ পাঠান। একই সঙ্গে তিনি শাকিব খানের পক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায়ও তালাকের এই নোটিশ পাঠান। তখন হেমায়েত হোসেন জানান, অপু বিশ্বাস গত ১২ ডিসেম্বর এই চিঠি হাতে পান। তালাকের নোটিশের চিঠি হাতে পাওয়ার পর গত ১২ জানুয়ারি ডিনএসিসি প্রথম সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে।
২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল গোপনে বিয়ে করেন বাংলাদেশি ছবির জনপ্রিয় জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় তাঁদের সন্তান আব্রাম খান জয়। শাকিব-অপু দুজনেই সন্তানের জন্মের বিষয়টি গোপন রাখেন। গত বছর ১০ এপ্রিলে একটি টিভি চ্যানেলের সরাসরি অনুষ্ঠানে এসে বিয়ে ও সন্তানের খবর ফাঁস করেন অপু বিশ্বাস। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিল ছয় মাস বয়সী ছেলে আব্রাম। সেদিন অপু বলেন, ‘আমি শাকিবের স্ত্রী, আমাদের ছেলে আছে।’
বিয়ের খবর জনসমক্ষে আসার পর দুজনের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দেন। শুধু ছেলে আব্রামের কারণে মাঝেমধ্যে দেখা হলেও কথা হয়নি দুজনের।