সারাদিন ডেস্ক::একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপলক্ষে সারাদেশের ৩০০ আসনে জমা পড়া ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক নিয়োগ করা রিটানিং কর্মকর্তারা। বাতিল হওয়া মনোয়নপত্রের হার ২৫ ভাগের বেশি। ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয়ার বৈধতা পেয়েছেন ২২৭৯ জন। বাতিলের তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আলোচিত ৩০ জনেরও বেশি রাজনীতিক রয়েছেন, এর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীই বেশি।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আপিলের ওপর শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহরের শেষ দিন। ১০ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর শুরু হবে প্রতীকসহ প্রচারণা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে জমা দেয়া মোট ৭৩১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৯২টি, বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৫৩৯টি। চট্টগ্রাম বিভাগে জমা দেয়া ৬৭৭টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৭৩টি, বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৫০৪টি। রাজশাহী বিভাগে ৩৫৫টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল ৯৬টি, বৈধ ২৫৯টি; রংপুর বিভাগে ৩৫৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল ৯১টি, বৈধ ২৬২টি; খুলনা বিভাগের ৩৫১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল ৯০টি, বৈধ ২৬১টি; ময়মনসিংহ বিভাগে ২৩১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল ৬২টি, বৈধ ১৬৯টি; সিলেট বিভাগের ১৮৪টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে বাতিল ৪৪টি, বৈধ ১৪৩টি এবং বরিশাল বিভাগের ১৮৩টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৩৮টি বাতিল করা হয়, বৈধ ঘোষণা করা হয় ১৪৫টি মনোনয়নপত্র।
দুর্নীতির দায়ে দুটি মামলায় আদালত কর্তৃক দন্ডিত হওয়ার কারণে ফেনী-১, বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট আসনের রিটানিং কর্মকর্তারা। এছাড়া, আদালত কর্তৃক দন্ডিত, ঋণখেলাপি, মনোনয়নপত্র পূরণে ভুল, তথ্যের ঘাটতি, অসত্য তথ্য প্রদানসহ নানা কারণে বিএনপি আলোচিত মুখ অনেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আলোচিতদের তালিকায় বিএনপির প্রার্থী বেশি হলেও এই তালিকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও এর শরিক দলের প্রার্থী এবং মহাজোট ও এর শরিক দলের কিছু প্রার্থীর নামও রয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও এর শরিক বিএনপির আলোচিত রাজনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে (সদ্য গণফোরামে যোগ দেয়া) রেজা কিবরিয়া, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা সেলিম ভূইয়া, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, এম মোরশেদ খান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল, মীর নাসির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলাল, মজিবুল হক, ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইউনুস, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার, আসলাম চৌধুরী, শহিদুল আলম তালুকদারসহ আরো অনেকে।
বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আইন সবার জন্য সমান, এটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচি রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর ২৭ দিন বাকি। এবার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ৮টি নিবন্ধিত দল ‘নৌকা’ প্রতীক এবং বিএনপির জোটের ১১টি দল ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। ফলে ভোটে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যেই মূল লড়াই হবে, যা সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোটে এলেও নিজেদের প্রতীক লাঙল নিয়েই ভোট করবে। অন্যদিকে আটটি বাম দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করবে। জনগণের প্রত্যাশা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তারা ভোটের নামে সহিংসতা চায় না। তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণমূলক হওয়ার যে আকাক্সক্ষা দীর্ঘদিন জনমনে লালিত হয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর তা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে ভোটাররা।