শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন প্রদান কার্যক্রম। এ কারণে সারা জীবন শিক্ষকতা করে অবসরে গিয়ে নিজের প্রাপ্ত অর্থ থেকে দালালদের ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড়াতে হচ্ছে। টাকা না দিলে শিক্ষকদের পেনশন ফাইল চলে না। যেন লাল ফিতায় বন্দি থাকার উপক্রম হয়। একই রুমের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যেতেও নাকি মাস পেরিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই উৎকোচ দিয়ে ফাইল ছাড়ান তারা।
দেশের বিভিন্ন জেলার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সব সুবিধা বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করা হয়। অনেক সময় ছয় মাস থেকে এক বছর পরও পেনশন সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে।
শিক্ষকরা জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে অবসর সুবিধার ফাইল পাস করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব অফিসের হিসাব রক্ষকসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ঘুষ না পেলে ফাইল আটকে রাখেন। কতিপয় শিক্ষক এসব কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাযোগে অবসর সুবিধা দ্রুত পাইয়ে দিতে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে উভয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের কাজ দ্রুত হচ্ছে, আর যারা টাকা দিতে আপত্তি জানাচ্ছেন তাদের ফাইল মাসের পর মাস টেবিলেই পড়ে থাকছে।
এসব বিষয় আমলে নিয়ে শিক্ষকদের দ্রুত পেনশন সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষকদের সব তথ্য-উপাত্ত থাকবে। কোনো শিক্ষক অবসরে যাওয়ার দুই মাস আগেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তৈরি হয়ে যাবে। পেনশন তুলতে আর কোনো ভোগান্তি বা কারও দ্বারে ঘুরতে হবে না, অথবা কাউকে আর উৎকোচ দিতে হবে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে অবসরে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষকের সব সুবিধা বুঝিয়ে দেয়া হবে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটির আহ্বায়ক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুন কান্তি শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশন কার্যক্রম সহজীকরণ করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। শিক্ষকরা যাতে তাদের প্রাপ্ত সুবিধা পেতে কোনো হয়রানির শিকার বা বিলম্ব না হয় সেটিকে গুরুত্ব দিয়েই এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুধু শিক্ষকদের নয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় চারটি দফতর ও একটি অধিদফতরের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ সুবিধার আওতায় আনা হবে। পাইলটিং হিসেবে প্রথম পর্যায়ে এ সফটওয়্যারের আওতায় ঢাকা মহানগরের কয়েকটি বিদ্যালয়কে আনা হবে।’
পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব শিক্ষক-কর্মচারীকে এর আওতায় পেনশন সুবিধা দেয়া হবে বলে জানান এ অতিরিক্ত সচিব।