ঢাকা ০৮:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইভিএমে ‘না’, নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার:: জাতীয়  সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের শেষদিন আজ। চলমান সংলাপে ২৬টি দল অংশ নিয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর বেশির ভাগই জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করে মতামত দিয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে বেশির ভাগ দল। কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাবও দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয় সামনে এনেছে।  সংলাপে অংশ নেয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৮টিই নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। আজ সংলাপে অংশ নিতে যাওয়া জাতীয় পার্টিও ইভিএম চায় না বলে জানিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল  জানিয়েছেন, সংলাপে তারা ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেবেন।

অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮টি দল। জাতীয় পার্টি সরাসরি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চায় না। দলটি বলছে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার রাখে না তাই তাদের কাছে এ বিষয়ে দাবি করার কিছু নেই। তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই। নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোসহ কিছু পরামর্শ দেয়া হবে সংলাপে।

ওদিকে আওয়ামী লীগের তরফে আগেই জানানো হয়েছে নির্বাচনে তারা ইভিএমের পক্ষে। সম্ভব হলে ৩০০ আসনেই ইভিএম নির্বাচন চায়। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও তাদের কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে সব ক্ষমতা ইসি’র হাতে থাকে। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে।  সংলাপের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঠিকমতো নাম পড়তে পারে না। মার্কা দেখে ভোট দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএমে ভোট দিতে মানুষ প্রস্তুত নয়। তাছাড়া ইভিএম বিভিন্নভাবে ম্যানুপুলেট করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজনের দেয়ার সুযোগ থাকে। অনেক সময় মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে না। এ ছাড়া ইভিএমের নির্বাচনে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। কারণ, ব্যালট পেপার থাকে না। ভোটিং মেশিন যে ফলাফল দেবে, তাই ঘোষণা হবে। বিষয়টি হচ্ছে, সরকার দেশের মানুষকে চাঁদে পাঠাতে চাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

এ জন্য আমরা ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে।  সংলাপে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের বড় অংশ ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। জনগণ ইভিএমকে ডিজিটাল কারচুপির বাক্স মনে করে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালু করার সকল তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের তল্পিবাহক হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইভিএমের পক্ষে ইসি’র ভূমিকা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনগণকে সন্দিহান করে তুলেছে। ইভিএমের বিরুদ্ধে মত দিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বলেছে, ভোটারদের মধ্যে ইভিএমের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি না করে ইভিএম চাপিয়ে দিলে সিদ্ধান্তটি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।  এ ছাড়া নানা শঙ্কার কথা জানিয়ে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ইভিএম ব্যবহারের আগে ত্রুটিগুলো ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু ইভিএম চাচ্ছে না, তাহলে ব্যবহার না করাই ভালো। সরকারি দল ইভিএম চাচ্ছে বলে যদি নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে চায় তাহলে তাদের ভাবমূর্তি আরও খারাপ হবে।   সংলাপ কতোটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন কী চায় সেটা আগে জানতে হবে। এজেন্ডাবিহীন আলোচনা দুনিয়াতে কোনোদিন ফলপ্রসূ হয় না।  এদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ৭০ শতাংশ দল। এর মধ্যে চারটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের সুপারিশ করেছে। ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ কয়েক মন্ত্রণালয় ইসি’র অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে ১৩টি দল। চারটি দল নিবন্ধিত দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে।

এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনও বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তারা ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসি’র হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিও। তবে নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চায় না দলটি। কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন আগেই বলে দিয়েছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ওনারা কিছু করতে পারবে না। এ জন্য সংবিধানের বাইরের কোনো আলোচনা আমরা করবো না। সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাবনা আছে। জি এম কাদের বলেন, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতেই সব ক্ষমতা থাকে। সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। এ জন্য আমাদের কিছু প্রস্তাব আছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগে সেট করা যেতে পারে। তাহলে ব্যালেন্স হতে পারে।  নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই ইসিকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেছেন, এটা করতে পারলে সংবিধান কোনো বাধা নয়। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনও করা যেতে পারে।  এ বিষয়ে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কিছু করার নেই। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। এটি যদি তারা সরকারকে লিখিতভাবে জানায় সেটা ভালো উদ্যোগ হবে।  উল্লেখ্য, গত ১৭ই জুলাই নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। এই দলগুলোর মধ্যে বিএনপি’র জোটসঙ্গী দলও রয়েছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

ইভিএমে ‘না’, নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প প্রস্তাব

আপডেট টাইম ০৪:৪৯:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার:: জাতীয়  সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের শেষদিন আজ। চলমান সংলাপে ২৬টি দল অংশ নিয়েছে। আজ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলোর বেশির ভাগই জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করে মতামত দিয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে বেশির ভাগ দল। কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাবও দিয়েছে। আবার কোনো কোনো দল এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয় সামনে এনেছে।  সংলাপে অংশ নেয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৮টিই নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। আজ সংলাপে অংশ নিতে যাওয়া জাতীয় পার্টিও ইভিএম চায় না বলে জানিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল  জানিয়েছেন, সংলাপে তারা ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেবেন।

অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮টি দল। জাতীয় পার্টি সরাসরি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চায় না। দলটি বলছে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার রাখে না তাই তাদের কাছে এ বিষয়ে দাবি করার কিছু নেই। তবে বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই। নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোসহ কিছু পরামর্শ দেয়া হবে সংলাপে।

ওদিকে আওয়ামী লীগের তরফে আগেই জানানো হয়েছে নির্বাচনে তারা ইভিএমের পক্ষে। সম্ভব হলে ৩০০ আসনেই ইভিএম নির্বাচন চায়। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও তাদের কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে সব ক্ষমতা ইসি’র হাতে থাকে। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে।  সংলাপের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঠিকমতো নাম পড়তে পারে না। মার্কা দেখে ভোট দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএমে ভোট দিতে মানুষ প্রস্তুত নয়। তাছাড়া ইভিএম বিভিন্নভাবে ম্যানুপুলেট করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে একজনের ভোট আরেকজনের দেয়ার সুযোগ থাকে। অনেক সময় মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে না। এ ছাড়া ইভিএমের নির্বাচনে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। কারণ, ব্যালট পেপার থাকে না। ভোটিং মেশিন যে ফলাফল দেবে, তাই ঘোষণা হবে। বিষয়টি হচ্ছে, সরকার দেশের মানুষকে চাঁদে পাঠাতে চাচ্ছে, কিন্তু সেখানে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

এ জন্য আমরা ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে।  সংলাপে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের বড় অংশ ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। জনগণ ইভিএমকে ডিজিটাল কারচুপির বাক্স মনে করে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালু করার সকল তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের তল্পিবাহক হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইভিএমের পক্ষে ইসি’র ভূমিকা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জনগণকে সন্দিহান করে তুলেছে। ইভিএমের বিরুদ্ধে মত দিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বলেছে, ভোটারদের মধ্যে ইভিএমের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি না করে ইভিএম চাপিয়ে দিলে সিদ্ধান্তটি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।  এ ছাড়া নানা শঙ্কার কথা জানিয়ে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্তসাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ইভিএম ব্যবহারের আগে ত্রুটিগুলো ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু ইভিএম চাচ্ছে না, তাহলে ব্যবহার না করাই ভালো। সরকারি দল ইভিএম চাচ্ছে বলে যদি নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করতে চায় তাহলে তাদের ভাবমূর্তি আরও খারাপ হবে।   সংলাপ কতোটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন কী চায় সেটা আগে জানতে হবে। এজেন্ডাবিহীন আলোচনা দুনিয়াতে কোনোদিন ফলপ্রসূ হয় না।  এদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ৭০ শতাংশ দল। এর মধ্যে চারটি দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের সুপারিশ করেছে। ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ কয়েক মন্ত্রণালয় ইসি’র অধীনে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে ১৩টি দল। চারটি দল নিবন্ধিত দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে।

এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনও বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তারা ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসি’র হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিও। তবে নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চায় না দলটি। কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন আগেই বলে দিয়েছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ওনারা কিছু করতে পারবে না। এ জন্য সংবিধানের বাইরের কোনো আলোচনা আমরা করবো না। সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাবনা আছে। জি এম কাদের বলেন, বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতেই সব ক্ষমতা থাকে। সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। এ জন্য আমাদের কিছু প্রস্তাব আছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগে সেট করা যেতে পারে। তাহলে ব্যালেন্স হতে পারে।  নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই ইসিকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেছেন, এটা করতে পারলে সংবিধান কোনো বাধা নয়। জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনও করা যেতে পারে।  এ বিষয়ে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কিছু করার নেই। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। এটি যদি তারা সরকারকে লিখিতভাবে জানায় সেটা ভালো উদ্যোগ হবে।  উল্লেখ্য, গত ১৭ই জুলাই নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপিসহ ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। এই দলগুলোর মধ্যে বিএনপি’র জোটসঙ্গী দলও রয়েছে।